বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অপসারণের আদেশ দেওয়াকে কেন্দ্র করে এজলাস কক্ষে হট্টগোল ও ফাইল ছুড়ে মারা ঘটনায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) আপিল বিভাগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি এ আবেদন করেন।
এর আগে গতকাল সোমবার (২৮ আগস্ট) তারেক রহমানের বক্তব্য ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরানোর আদেশ দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদালত কক্ষে তুমুল হট্টগোল ঘটে।
বিএনপি সমর্থক শতাধিক আইনজীবী দীর্ঘসময় আদালত কক্ষের ভেতরে হট্টগোল করতে থাকেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থক কিছু আইনজীবীও হট্টগোল শুরু করেন। এতে আদালতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
একপর্যায়ে আদালতের দুই বিচারপতি এজলাস থেকে নেমে যান। এর প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর দুই বিচারপতি এজলাসে ফেরেন। বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ ঘটনা ঘটে।
তারেক রহমানের বক্তব্য অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে করা আবেদনের পক্ষে আইনজীবী কামরুল ইসলাম ও সানজিদা খানম ডায়াসের সামনে দাঁড়ান।
আদালত আবেদন মঞ্জুর করলে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এর বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, এ মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন খারিজ করে দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া এই কোর্টের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে গত রোববার প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করা হয়েছে। সেই আবেদন বিচারাধীন থাকাবস্থায় শুনানি মুলতবি করতে হবে; কিন্তু আদালত এ বক্তব্য গ্রহণ না করেই আদেশ দেন। আদেশের সঙ্গে সঙ্গে আদালত থেকে বের হয়ে যান কামরুল ইসলাম, সানজিদা খানমসহ আবেদনকারী আইনজীবীরা।
এরপর বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীরা আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। বিএনপির সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতে বলেন, ‘আমরা আপনার বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির কাছে অনাস্থা জানিয়েছি। আপনি বায়াসড, পক্ষপাতদুষ্টু বিচারক। আপনার কাছ থেকে আমরা ন্যায়বিচার পাব না। এ কারণে আপনার কোর্টে তারেক রহমানের কোনো মামলা চলতে পারে না।’
এ সময় বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান বলেন, ‘আপনাদের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে শুনেছি।’
কোর্টে উপস্থিত থাকা ব্যারিস্টার কাজল সঙ্গে সঙ্গে বিচারপতির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আপনি আমাকে শুনানি করতে দেননি। আপনি ৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আদেশ দিলেন। এটা আপনি করতে পারেন না। কোর্টের পরিবেশকে আপনি নষ্ট করে দিচ্ছেন।’
এ সময় বিএনপির আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য আপনার শুনতে হবে। আমাদের বক্তব্য না নিয়ে কোনো অর্ডার পাস করতে পারেন না। আপনি কি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নীলনকশার রায় দেওয়ার জন্য বিচারকের আসনে বসেছেন?’
বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের আদেশের বিরুদ্ধে আপনারা আপিল বিভাগে যেতে পারেন।’
এ সময় বিএনপির আইনজীবীরা তাকে পক্ষপাতদুষ্টু বিচারক বলে চিৎকার, চেঁচামেচি করতে থাকেন। একপর্যায়ে কোর্টে উপস্থিত থাকা আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীরা বিএনপির আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আদালতকে এভাবে চাপ সৃষ্টি করবেন না। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল ও হইচই শুরু হয়।
একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আমরা আদেশ দিয়েছি। এখন নিয়মিত আইটেমে (কার্যতালিকায় থাকা অন্য মামলা) যাই।’ এতে আপত্তি জানিয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ‘নো’ ‘নো’ বলতে থাকেন। রিটটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন। আদেশ প্রত্যাহার করেন।
বিচারপতির উদ্দেশে বিএনপিপন্থি এক আইনজীবী বলেন, ‘আপনি অ্যানার্কি তৈরি করছেন জুডিশিয়ারিতে।’ এতে আপত্তি জানান একাধিক আইন কর্মকর্তা। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের কয়েকজন ‘সেইম’ ‘সেইম’ বলেন। এ সময় দুপক্ষের মধ্য তর্ক ও হইচই হয়।
একপর্যায়ে ১০টা ৫৫ মিনিটের দিকে এজলাস ত্যাগ করেন দুই বিচারপতি। এ সময় বিচারপতির দিকে এক আইনজীবী আদালতের দৈনন্দিন কার্যতালিকার ফাইল ছুড়ে মারেন। দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত আদালত কক্ষে বসেছিলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। আইনজীবীরা এজলাস ছাড়ার পর ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে ফের এজলাসে আসেন দুই বিচারপতি। আদালতে স্বাভাবিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
পরে আদালত থেকে বের হয়ে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার বিষয়ে করা এ রিট মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন হাইকোর্টের এই বেঞ্চ থেকে খারিজ করে দেওয়া হয়। এরপর ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিল বিভাগে আবেদন করেছি। আবেদনটি আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। একই সঙ্গে গতকালই এ বেঞ্চের প্রতি অনাস্থার আবেদন প্রধান বিচারপতির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় এই বেঞ্চ থেকে আদেশ দেওয়া লজ্জাজনক ঘটনা।’
তারও আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারেক রহমানের সাম্প্রতিক দেওয়া সব বক্তব্য অনলাইন থেকে সরানোর জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
আদেশের সময় আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, অ্যাডভোকেট নাসরিন সিদ্দিকা লিনা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আদেশের সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন