অতীতে শুধু ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল।
গতকাল রোববার (২৭ এপ্রিল) রাতে শাহজাহানপুর পূর্ব থানা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ভিন্ন ধর্মাবলম্বী প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, অতীতে নির্বাচনের মাধ্যমে কেবল ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। বারবার অসৎ নেতৃত্বের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যাওয়ার কারণে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। বরং যখন যেই দল ক্ষমতায় বসে তখন সেই দলের সবোর্চ্চ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মী পর্যন্ত সবাই দুর্নীতি, চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসীতে লিপ্ত হয়েছে। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেনি বলে তাদের কোনো দায়বদ্ধ ছিল বলে তারা মনে করেনি। নিজের খেয়াল খুশি মত রাষ্ট্র পরিচালনা করে জনগণকে ধোঁকা দিয়েছে। জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। আর জামায়াতে ইসলামী জনগণের অধিকারের দাবিতে রাজপথে আসলেই রাষ্ট্র যন্ত্র ব্যবহার করে দমন-নিপীড় চালিয়েছে।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর চেয়ে বড় কোনো মজলুম দল বাংলাদেশে নাই। জামায়াতে ইসলামীর আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বাঁচাই করে করে হত্যা করেছে। দলের নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছে, প্রতীক কেড়ে নিয়েছে, সবশেষ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধও করেছে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী তার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে এদেশের জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। জনগণের হৃদয় থেকে জামায়াতে ইসলামীকে মুছে ফেলা যায়নি, যাবে না। সেজন্য যারা জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছে, জনগণ তাদেরকেই দেশ ছাড়া করেছে। আগামীতেও যারাই গণমানুষের সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর অগ্রযাত্রায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে জনগণই তাদের উপযুক্ত সময়ে, উপযুক্ত জবাব দিবে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী কেনো গণমানুষের সংগঠন হলো?- কারণ জামায়াতে ইসলামী কখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না গিয়েও দেশ ও জাতির কল্যাণে নিরবে-নিবিঘ্নে কাজ করে যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর ৪ দফা কর্মসূচির অন্যতম একটি সমাজ সংস্কার ও সমাজ সেবা। সমাজ সেবার অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সমাজের শোষিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত ছিল এবং আছে। দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে জামায়াতে ইসলামী মানবিক প্রয়োজনে সমানভাবে সমাজ সেবা করে আসছে। এটাই ইসলামের শিক্ষা। এটাই ইসলামি রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য।
বুলবুল আরও বলেন, ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ হলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করতে হবে। তাদের জান ও মালের সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রই পালন করবে। সকল ধর্মের মানুষ সমাজে সমান মর্যাদা ও অধিকার লাভ করবে। রাষ্ট্রের কাছে ধর্মের কোনো বিভেদ থাকবে না। সকলেই নাগরিক হিসেবে সমান। তাই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলেই শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিতে হচ্ছে, সম্পদ পাহারা দিতে হচ্ছে কেন প্রশ্ন রেখে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, কারণ মানুষের তৈরি আইনে মানুষে-মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে, ধর্মের বিভেদ সৃষ্টি করে। যার কারণে সমাজে অশান্তি বিদ্যামান। ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ হলে সমাজে শান্তি বিরাজ করবে।
জামায়াতে ইসলামী একটি কল্যাণ ও নিরাপদ বাসযোগ্য বাংলাদেশ জাতিকে উপহার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সেই বাংলাদেশ গড়তে দেশের প্রতিটি নাগরিককে অংশগ্রহণ করেত হবে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়তে তিনি দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
শাহজাহানপুর পূর্ব থানা আমীর মুহাম্মদ শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামী মানবিক সেবা করে এবং করবে। জনগণ সুযোগ দিলে সম্প্রীতির বান্ধনে একটি কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র জামায়াতে ইসলামী গঠন করবে। যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ থাকবে না। মানুষ নিরাপদে ও শান্তিতে ঘুমাতে পারবে। নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-যুবক সকলে নিরাপদে নিবিঘ্নে চলাফেরা করতে পারবে। মানুষ মৌলিক স্বাধীনতার নিশ্চিতা পাবে। মানুষ হিসেবে প্রতিটি মানুষ সমান অধিকার ও মর্যাদা লাভ করবে। স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে তিনি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে এগিয়ে আসতে উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ঢাকা-৮ আসনের জনগণ তাকে সুযোগ দিলে তিনি এই আসনকে সম্প্রীতির নতুন বাংলাদেশের অনুসরণীয় একটি এলাকায় রূপ দিবেন। ঢাকা-৮ আসনের প্রতিটি মানুষ নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার লাভ করতে পারবে। মানবিক কল্যাণ রাষ্ট্রের ভিত্তি ঢাকা-৮ আসন থেকেই স্থাপিত হবে।
থানা সেক্রেটারি মুহাম্মদ আনোয়ার হোসাইনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ওয়ার্ড সভাপতি মোশাররফ হোসেন চঞ্চল, থানা অফিস সম্পাদক নাহিদ জামাল, থানা প্রশিক্ষণ সম্পাদক মো. আবদুল খালেক, থানা সমাজ কল্যাণ সম্পাদক এস.এম আজীম উদ্দিন, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কালী পদ চন্দ্রশীল, লতিফ চন্দ্রশীল, লোকনাথ সরকার ও স্বপন চন্দ্রশীল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে থানা দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ সহ শাহজানপুর থানা এলাকার ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন