জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে ২০২৫-২৭ সেশনে দু’বছর মেয়াদি ২০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির উল্লেখযোগ্যরা হলেন- সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা লোকমান মাযহারী, প্রচার সম্পাদক মুফতি ইমরানুদ বারী সিরাজী ও অর্থ সম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী।
এছাড়াও সম্মেলনে ৭ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। দফাগুলো হচ্ছে- ১. ফ্যাসিবাদী আমলে শাপলা চত্বরে গণহত্যা, মোদিবিরোধী আন্দোলনে হত্যা, পিলখানা হত্যা ও জুলাই বিপ্লবের গণহত্যাসহ বিভিন্ন সময় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ২. জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা প্রদানের জন্য আজকের কাউন্সিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। ৩. সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাবনায় কিছু বিতর্কিত বিষয় স্থান পেয়েছে বলে মনে করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। বিশেষ করে সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যুক্ত করাকে জমিয়ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে। এই প্রস্তাবনা বাতিল করে আল্লাহর ওপর পূর্ণবিশ্বাস ও আস্থা পুনরায় বহাল করতে হবে।
৪. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় আপত্তিকরভাবে ধর্মীয় বিধিবিধান, বিশেষ করে ইসলামী উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনকে নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে; যৌনকর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা প্রদানের কথা বলে আল্লাহর বিধানের সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে। এর আগে ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে নারী নীতিমালার নামে এসব বিতর্কিত বিষয়গুলোকে বারবার সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ ইসলামপ্রিয় জনতার তীব্র প্রতিবাদের কারণে তা বাস্তবায়িত হতে পারেনি। এ কাউন্সিল অধিবেশন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের এ বিতর্কিত প্রস্তাবনা বাতিলসহ পুরো কমিশন বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছে। ৫. ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যা ও ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে জাতিসংঘকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে, অনতিবিলম্বে ফিলিস্তিনে মুসলিম নিধন বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি কিংবা আরব লীগকেও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।
৬. পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মুসলমানদের ওপর বারবার নির্যাতনের কাহিনি ঘটছে। মসজিদ-মাদ্রাসাসহ মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনায় বারবার আঘাত হানা হচ্ছে, বিশেষ করে দেশটির পার্লামেন্টে সম্প্রতি যে ওয়াকফ আইন সংশোধনী পাস হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে ভারতে মুসলমানদের কোনো উপাসনালয় থাকবে না। সুতরাং ওয়াকফ আইন সংশোধনী বিল বাতিল করতে ভারত সরকারের কাছে দাবি জানাতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে জোর দাবি জানাচ্ছে। ৭. ভারত ও পাকিস্তানকে পরস্পরের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আরও সংযত হওয়া ও আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশকে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে এগিয়ে আসার জন্য আজকের কাউন্সিল বিনীতভাবে আহ্বান করছে।
এছাড়াও জমিয়ত সভাপতি মাওলানা জিয়া উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়ার পরিচালনায় বক্তব্য দেন- জমিয়তের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রউফ ইউসুফী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা আনোয়ারুল করিম যশোরী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদি, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা তফাজ্জল হক আজিজ, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা মাসউদুল করীম, মাওলানা লোকমান মাযহারী, ড. শোয়াইব আহমদ, সৈয়দ তামিম আহমদ, মাওলানা ফয়জুল হাসান খাদিমানী, মুফতি নাসির উদ্দীন খান, মুফতি জাবের কাসেমী, মুফতি বশিরুল হাসান খাদিমানী, মুফতি নুর মোহাম্মদ কাসেমী ও মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী প্রমুখ।
মন্তব্য করুন