সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এবং সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ও কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কেন এখনো গ্রেপ্তার হচ্ছে না, সে প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তাদের ‘গণতন্ত্র হত্যাকারী এবং ফ্যাসিবাদ কায়েমের মূল দোসর’ হিসেবে অভিহিত করে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিবাদ কায়েম করার জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এ কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের নির্দেশনায় অনুষ্ঠানে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আবদুল্লাহ বিন জাহিদের ক্যান্সার আক্রান্ত ছোট ভাই মাহমুদুল্লাহ বিন জিসানের চিকিৎসা ও অপারেশনের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
রিজভী বলেন, যাদের কারণে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তারা কেন আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে? যারা বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়েছে, যারা ফ্যাসিবাদকে চিরস্থায়িত্ব দান করার জন্য নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ভুলে শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করে গেছেন- তাদের এখনো কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি? কেন জাস্টিস খায়রুল হক এখনো গ্রেপ্তার হয়নি? উনি একমাত্র ব্যক্তি, যিনি গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাকে বন্ধ করে দিয়ে স্তব্ধ করে দিয়ে শেখ হাসিনাকে এক ভয়ঙ্কর ফ্যাসিবাদ তৈরি করার, নাৎসিবাদ তৈরি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তিনি কেন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে?
তিনি বলেন, কমপক্ষে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের যে আইন সেটি বলবৎ থাকলে, রাজনীতিতে একটা স্পেস হতে পারত। কিন্তু অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিদেশি চক্রান্ত এবং দেশের গণতন্ত্রবিরোধী চক্রান্তকারীদের সুপরিকল্পিত আঁতাতে খায়রুল হক এই কাজটি করেছিলেন। তিনি কেন গ্রেপ্তার হচ্ছেন না? তিনি তো সবচেয়ে বড় দায়ী। এই যে জাহিদের হত্যাকাণ্ড, আবু সাঈদের যে হত্যাকাণ্ড, এই সব কিশোর-তরুণ যাদের বুকের তাজা রক্ত ঝরে গেল শেখ হাসিনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে, এর জন্য তো খায়রুল হক প্রথম এবং প্রধান দায়ী।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, একজন নিরীহ মানুষ যার কোনো স্বাক্ষর নেই, যার সঙ্গে কোনো কিছুর সম্পর্ক নেই, দেশে-বিদেশে প্রশংসিত, জনগণের অত্যন্ত সমাদৃত নেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জাস্টিস মো. আখতারুজ্জামান পাঁচ বছর সাজা দিয়ে দিলেন। তারপরে আবার হাইকোর্টে আরেকজন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আরও বাড়িয়ে দিলেন পাঁচ বছর। তারা কেন আজকে ধরাছোঁয়ার বাহিরে? এরাই তো গণতন্ত্রের হত্যাকারী। এরাই তো ফ্যাসিবাদ কায়েমের জন্য শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করেছেন। আমরা যদি শহীদের রক্তকে ন্যূনতম মর্যাদা দিতে পারি, এরা তো কেউ গ্রেপ্তারের বাহিরে থাকার কথা নয়। তাহলে কেন আজকে এসবে ফ্যাসিবাদ কায়েমকারীরা, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ধ্বংসকারীরা এখনো বহাল তবিয়তে আছে। এরা যদি দেশে না-ও থাকে, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তেই থাকুক, তাদের গ্রেপ্তার করা এবং ধরার দায়িত্ব হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। সেই উদ্যোগ জনগণ দেখতে চায়, এ দেশের মানুষ দেখতে চায়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক সাহেব যে নিজের স্বার্থেই অপরাধ করেছেন, এটা তো প্রমাণিত। তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করতে পারলে পুরস্কৃত হবেন, তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনি চিফ জাস্টিসের মতো পদের চেয়ে ছোট পদে থাকার জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছেন এবং তার চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনার কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ফান্ড থেকে ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনকে যারা ধ্বংস করার জন্য শেখ হাসিনার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন, সেই এম নূরুল হুদা ও কাজী রকিবউদ্দীন আহমদরা এখনো গ্রেপ্তার হয় না কেন, দেশবাসীর আজ সেই প্রশ্ন। এরাই তো হচ্ছে গণতন্ত্র হত্যাকারী, নির্বাচন ধ্বংসকারী। এরাই তো ভোটার বাদ দিয়ে গরু-ছাগলকে দিয়ে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এসব গণতন্ত্রবিনাশী দানব কি আজও গ্রেপ্তারের বাইরে থাকতে পারে? তারা কেন আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে? এটা হতে পারে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের ক্রান্তিকাল এখনো শেষ হয়নি। মোটামুটি একটা স্বস্তির মধ্যে দিনযাপন করলেও এখনো ৬০ লাখ বিএনপির নেতাকর্মীর নামে যে মামলা, সেসব মামলা থেকে সবাই কিন্তু অব্যাহতি পায়নি। এর মধ্যেই আমরা আবার ফ্যাসিবাদের কণ্ঠের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি কখনো কখনো। এটা অত্যন্ত দুঃখজনকই শুধু নয়, বিপজ্জনক। আবার যদি কোনোভাবে ফ্যাসিবাদের আওয়াজ বাংলাদেশের মাটিতে উঠে, তাহলে আমরা জাহিদের আত্মার কাছে কী জবাব দিব? আহনাফের আত্মার কাছে কী জবাব দিব? ওসমান গনির আত্মার কাছে কী জবাব দিব? আবু সাঈদের আত্মার কাছে কী জবাব দিব?
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুনের সভাপতিত্বে এবং সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম রনির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা-ই জামান সেলিম, আবুল কাশেম, আলমগীর কবির, সদস্য নাজমুল হাসান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন