ভারতের সংসদে পাসকৃত বিতর্কিত ওয়াকফ্ সংশোধনী বিল বাতিল ও মুসলিম নিধন বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের উদ্যোগে গণমিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২২ এপ্রিল) বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে মিছিল পূর্ব সমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেন, ভারতের সংসদে পাশকৃত বিতর্কিত ওয়াকফ্ সংশোধনী বিল বাতিল ও মুসলিম নিধন বন্ধ না করলে প্রয়োজনে দিল্লি অভিমুখে লংমার্চ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সারা পৃথিবীতে আজ দুটি জনপদ সবচেয়ে বেশি সমালোচিত। একটি গাজা ভুখণ্ড-যেখানে বর্বর ইসরায়েলের গণহত্যা চলছে। আরেকটি হলো ত্রিশ কোটি মুসলমানের ভারত। সেখানে কসাই মোদি সরকার ভারতকে মুসলিম শূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ভারতের প্রায় ৯ লাখ একর ওয়াকফকৃত সম্পত্তিতে লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে গুজরাটের কসাই বাহিনীর। ওয়াকফ্ সংশোধনী বিলের আড়ালে মূলত মুসলমানদের ভারত থেকে তাড়ানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই চরম বিতর্কিত বিল বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে বিশ্বমানবতার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, যেভাবে গাজাবাসীর পক্ষে বিশ্ব মানবতা রাজপথে নেমে এসেছে, একইভাবে ভারতের ত্রিশ কোটি মুসলিমদের পক্ষেও নেমে আসুন।
মামুনুল হক বলেন, আমরা মনে করি এক্ষেত্রে বাংলাদেশের দায় সবচেয়ে বেশি। ভারতের মুসলমানরা যে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করলে বাংলাদেশের মুসলমানরা তাদের সমর্থন করবে। প্রতিটি জুলুমের বিরুদ্ধে ভারতের মুসলমানদের পক্ষে বাংলাদেশের মুসলমানরা বলিষ্ঠ ভূমিকায় থাকবে। প্রয়োজনে পুরো উপমহাদেশের মুসলমানদেরকে নিয়ে উগ্র- হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে আন্তঃদেশীয় ঐক্য গড়ে তোলা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে মামুনুল হক আরও বলেন, ভারতের আধিপত্যবাদের টুঁটি চেপে ধরুন। কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আঞ্চলিক জোটকে শক্তিশালী করে ভারতের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা করুন। বাংলাদেশের মানুষের পালস বুঝুন। তারা আরো কিছু সহ্য করে নিলেও ভারত তোষণ সহ্য করতে পারে না।
সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক ইসলাম বিদ্বেষী নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান ও বর্তমান কমিশন বাতিল করে পুনর্গঠন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে কোন সরকারই বাংলাদেশে এক মুহূর্তও টিকতে পারবেন না। সুতরাং ইসলাম বিরোধী অবস্থানের পক্ষ নিয়ে হাসিনার মতো নিজেদের জন্য ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনবেন না।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা ও মাওলানা ফয়সাল আহমাদ এর যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, সাবেক এমপি মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী, মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হুসাইন মিয়াজী, মাওলানা নূর হোসাইন নূরানী, খেলাফত শ্রমিক মজলিসের সদস্য সচিব মাওলানা আবু সাঈদ নোমান, খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি মাওলানা জাহিদুজ্জামান, খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুল আজিজ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হুসাইন রাজী প্রমুখ।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হকের নেতৃত্বে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল শুরু হয়ে শান্তিনগর মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। সেখান থেকে সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বারিধারাস্থ ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে ভারতের মুসলমানদের ওপর চলমান নিপীড়ন ও বিতর্কিত ওয়াক্ফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়- ১. ভারতের সংসদে পাস হওয়া 'ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল ২০২৫ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ২. ভারতের মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৩. মসজিদ, মাদ্রাসা ও ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৪. মুসলিমবিরোধী হিংসা, হত্যা এবং বৈষম্যমূলক আইনসমূহ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ৫. ভারতের মুসলমানদের ওপর পরিচালিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় এক গভীর সংকটে পতিত। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমানদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব ধ্বংসের প্রচেষ্টা চলমান। এমন প্রেক্ষাপটে পাশকৃত ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল মূলত মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার ও প্রতিষ্ঠান হরণের একটি চক্রান্তেরই অংশ।
স্মারকলিপিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, ভারতের সরকার যদি এই ধর্মীয় নিপীড়ন ও মুসলিমবিরোধী নীতি থেকে সরে না আসে, তবে তা শুধু ভারতের অভ্যন্তরীণ শান্তিই নয়, উপমহাদেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
গণমিছিলে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির কুরবান আলী কাসেমী, মাওলানা মাহবুবুল হক, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল আজিজ, মুফতি শরাফত হুসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুর রহমান হেলাল, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ হাদী, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা জহিরুল ইসলাম, বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, আইন বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শরীফ হোসাইন, রেজাউল করীম আবরার, মাওলানা শামসুদ্দোহা আশরাফী প্রমুখ।
মন্তব্য করুন