বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমাদের দেশটা এখন খুব খারাপ অবস্থায় আছে। আমাদের দেশের জনগণ ও জাতির, দলের প্রত্যেকটা মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যদি বাংলাদেশের জনগণকে বিভক্ত করা যায়, এদেশকে আবারও ভারতীয় আধিপত্যবাদের হাতে চলে যেতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মত-বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু যে দলই হোক, বিএনপি-জামায়াত, এনসিপিসহ অন্যান্য সকল দলকে জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গণতন্ত্র ফোরাম আয়োজিত ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র, সংস্কার ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা আজকে থেকে বিশ বছর আগে তাকে যেরকম দেখেছি বিশ বছর পরে দেখছি অনেক তফাৎ। আজকে তারেক রহমান সত্যি সত্যি বিএনপির এক্টিং চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব পালন করছেন এবং সঠিকভাবে পালন করছেন। যারা এক সময় তাকে পছন্দ করতেন না, তারাও আজকে বলতে বাধ্য হচ্ছেন যে, তারেক রহমানের মধ্যে ম্যাচিউরিটি এসেছে। এটা শুনতে ভালো লাগে আমাদের।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের দেশের একটা অবস্থা এসেছে; নির্বাচন না সংস্কার। তবে আমি বলতে চাই নির্বাচনের বিকল্প কেবল নির্বাচনই হতে পারে। অন্য কোনো কিছু হতে পারে না। নির্বাচনের বিকল্প নির্বাচন। এখন আসল কথা বললেই বলবে যে, মির্জা আব্বাস সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলে, সংস্কার চায় না। কিন্তু না, আমাদের জন্য, নির্বাচনের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যে সংস্কারটুকুর প্রয়োজন আমরা সেই সংস্কারটুকু চাই।
মির্জা আব্বাস বলেন, আমি একবার বলেছিলাম যে, আপনারা যে সংস্কারের কথা বলছেন সব সংস্কার তো মানা যাবে না। সেই কথাটিকে টুইস্ট করে আমাদের বিদেশে অবস্থানরত তথাকথিত সাংবাদিক এমনভাবে বলল, বিএনপি সংস্কার চায় না, মির্জা আব্বাস সংস্কার চায় না। এমনকি সালমান অফ রহমানের টাকা খেয়ে যার স্বাস্থ্য-চেহারা মোটা হয়েছে তিনি প্রায়ই ফেসবুকে এসে বলে কেন মির্জা আব্বাস মানবেন না। আমি বলতে চাই, তোমার যেমন বিদেশে পালিয়ে থেকে কথা বলার অধিকার আছে, আমার কী দেশে থেকে কথা বলার অধিকার নাই?
তিনি বলেন, আমি এই দেশে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে জেলে থেকেছি সহকর্মীদের নিয়ে। পালিয়ে যাইনি। আপনারা তো পালিয়ে গিয়ে লম্বা লম্বা কথা বলতেছেন। আমি আপনাদের উদ্দেশে সন্মান রেখেই বলতে চাই, যারা দেশের বাইরে আছেন, ইউটিউবার যারা আছেন; ভাই আমরা রাজনীতি ছেড়ে দেবো আপনারা দেশে আসেন। আপনাদের অনেক জ্ঞান, অনেক বুদ্ধি। আপনাদের জ্ঞান বুদ্ধি আমাদের অনেক প্রয়োজন। আপনারা দয়া করে দেশে আসেন। বুদ্ধি দেন, কথা বলেন, কাজ করেন, মেনে নেবো।
মির্জা আব্বাস বলেন, এনসিপির একজন বলে ফেললেন এখন নির্বাচন করা সম্ভব না। কারণ প্রসাশনের সব জায়গায় বিএনপির লোক বসা আছে। আরে ভাই, ১৭ বছর আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করল, আপনি বিএনপির লোক কই পাইলেন আমি বুঝলাম না। এই সমস্ত কথা নেহাতই বাচ্চাদের কথার মতো বলতেছেন।
তিনি বলেন, ইদানীং একটা গ্রুপ ফেসবুকে বলার চেষ্টা করছে যে, বিএনপি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছে। আরে ভাই ১৭ বছর এদের (আওয়ামী লীগ) যন্ত্রণায় পাগল হয়ে গেছি। পরিবার-পরিজনসহ অশান্তিতে ভুগেছি। বিএনপি অনেকের পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের অত্যাচারের কারণে। বরং আমি বলতে চাই আওয়ামী লীগকে যারা দেশে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। এই দেশে আওয়ামী লীগের অবস্থান থাকতে পারে না। এবং শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীসহ প্রসাশনের ব্যক্তিবর্গ, তাদের সবার বিচার হতে হবে।
কৃতিত্বের দাবিদার একা হওয়ার চেষ্টা করবেন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ৫ আগস্টে আমিও রাজপথে ছিলাম। টিয়ার সেলের মুখে। আমাদের ৪৬২ জন ছেলে মারা গেল, ৩০ হাজারের মতো আহত হলো, আমাদের কোনো অবদান নাই? যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা না বের হতো, যদি ইসলামী ছাত্র শিবির কিংবা বিএনপি না বের হতো, ছাত্রদল বের না হতো তাহলে কী অবস্থা দাঁড়াতো? সুতরাং কৃতিত্বের দাবিদার একা হওয়ার চেষ্টা করবেন না। ক্ষতি হবে দলের এবং দেশের।
সোশ্যাল মিডিয়ার একটিভিস্টদেরকে উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, এদের কাজ হলো দেশের মধ্যে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে রাখা। এদের থেকে আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে। জাতির বিবেক এখনো অন্ধ হয়ে যায়নি। দু’একজন লোকের কথায় সব শেষ হয়ে যায়নি। শেষ হয়ে যাবে না।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের যে নির্বাচন ব্যবস্থা এটা কিন্তু ধসে পড়া। এই নির্বাচন ব্যবস্থাকে ড. ইউনূস ঠিক করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু, নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা যাবে না। যদিও এখন কিন্তু নির্বাচন নিয়ে একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হচ্ছে।
ড. ইউনূসের উদ্দেশে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে সুফিউর রহমান নামের একজন লোক নিয়োগ হয়েছে। এ তো আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট। আরও আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট কিন্তু আপনার (ড. ইউনূস) ডানে বামে আছে। আপনি একটু ওদের কাছ থেকে সাবধানে থাইকেন। সচিবালয়ের চারজন সচিব, এর বাইরে আরেকজন সচিব মর্যাদায় রয়েছে, এই মোট পাঁচজন এবং আপনার উপদেষ্টা পরিষদের কিছু লোক আপনাকে সঠিক রাস্তায় চলতে দেবে না। আপনার সারা জীবনের অর্জন কিন্তু এরা শেষ করে দেবে। আপনি দয়া করে এদের কাছ থেকে সাবধানে থাকবেন। আমরা আপনার সম্মান রক্ষা করে দেশটাকে সুন্দর করতে চাই। আপনি সফল হলে দেশটা ভালো হবে। আপনার সফলতা আমরা চাই। আপনার সফলতার ওপর নির্ভর করছে আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।
তিনি বলেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী এই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন দিবেন। ড. ইউনূস বলেছেন নির্বাচন ডিসেম্বর না হলেও জুনের মধ্যে হবে। এই কথাটাই আমাদেরকে একটা বিব্রত অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। একবার বললেন ডিসেম্বর, এরপরে আবার বললেন জুনের কথা। ড. ইউনূস ভোট ডিসেম্বরে বলার পরপরই, অন্য আরেকজন বলে দিল ভোট জুনে হবে। পরে আপনি (ড. ইউনূস) তাকে ইন্ট্রোডিউস করলেন। এই বিষয়টাকে সন্দেহ করার মতো যথেষ্ট যুক্তি আছে। আমার মনে হচ্ছে, সম্ভবত নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি ওনারা করবেন না। নির্বাচন দ্রুত দেওয়ার কোনো লক্ষণ আমি দেখি না।
কয়েকটা দল বলা শুরু করেছে এইটা না হলে নির্বাচন হবে না, ওইটা না হলে নির্বাচন হবে না। যদি এগুলো বলতে থাকে তাহলে নির্বাচন কেমনে হবে! কেউ কেউ আবার বলেই ফেলেছেন যে, আমরা নির্বাচনে যাব না। কয়েকদিন আগে হলে আপনারা নির্বাচনে গেলেই কী আর না গেলেই কী! আপনাদেরকে বাংলাদেশে কে চিনতো! এখন ধমক দেন আপনারা নির্বাচনে যাবেন না। এগুলো করে কোনো লাভ নেই। নির্বাচনটা যথাসময়ে হবে, এটা আমরা আশা করতে পারি। খুব দ্রুত নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু, আমি আশা করছি নির্বাচনটা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমার সম্পর্কে বেশ কিছু কথা ব্লগাররা লিখতেছে। তাদের আজেবাজে লেখা দেখে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। এরপর দেখলাম শুধু আমি না, তারা আমাদের ইশরাক, মির্জা ফখরুল, আমীর খসরু, সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং শেষ পর্যন্ত তারেক রহমানকে নিয়েও বলছে। তারা কিন্তু, অন্য কোনো জুনিয়র নেতাদের নিয়ে কিছু বলছে না। শুধুমাত্র বিএনপির মধ্যে যাদেরকে মানুষ পছন্দ করে, এদের বিরুদ্ধে লিখতেছে কয়েকটা লোক। আমি মনে করি এরা দেশ ও জাতির শত্রু।
গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ভিপি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ওবায়দুর রহমান টিপুর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন