ভারতের সংসদে পাস হওয়া বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ বাতিল ও ভারতজুড়ে অব্যাহত মুসলিম নিধনের প্রতিবাদে আগামী ২৩ এপ্রিল ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে গণমিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
শনিবার (১২ এপ্রিল) পুরানা পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক বৈঠকে এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। পরে সংগঠনের এক বিবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে দলের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার দীর্ঘদিন থেকে ভারতজুড়ে মুসলিম নিধন চালিয়ে আসছে। তারা দলীয় উগ্রবাদী হিন্দু জঙ্গিদের মুসলমানদের ওপর লেলিয়ে দিয়েছে। যখন তখন মুসলিমদের ভিটেমাটি দখল করে নিচ্ছে। মুসলমানদের ব্যক্তিগত ও ওয়াকফকৃত সম্পত্তি দখল করে কিংবা অবৈধ অধিগ্রহণ করে সেখানে মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করছে।
তাতেও তাদের লোভী মনের তৃষ্ণা মিটেনি। এবার এসব দখল ও অধিগ্রহণকে আইনি কাঠামো দিতে ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ পাস করেছে। আমরা ইতোমধ্যে এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমাদের ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছি। ভারতজুড়ে মুসলমানরা এই বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। এই বিল মূলত মুসলিমদের ধর্মীয় আইন ও অধিকারে হস্তক্ষেপ।
তিনি বলেন, মুসলিম বিশ্বের উচিত ভারত রাষ্ট্র কর্তৃক মুসলিম নিধন ও মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
তিনি আরও বলেন, ভারত সরকার ও তার নিম্নরুচির মিডিয়াগুলো বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ধারাবাহিকভাবে বিশ্বব্যাপী অপপ্রচার করে আসছে। মূলত ভারতে মুসলিম নির্যাতনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের নির্লিপ্ততা তাদের অপপ্রচারে আসকারা দিচ্ছে। অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারের উচিত ভারতের মুসলিম নিধনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও উদ্বেগ জানানো এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়া।
নববর্ষ উদযাপন নিয়ে মামুনুল হক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের করের টাকা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করবেন না।
তিনি বলেন, প্রচলিত বাংলা নববর্ষ একটি সংস্কৃতিক উৎসব, যার উৎপত্তি মূলত হিন্দু ধর্মীয় ও বৈষ্ণব ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। নববর্ষের প্রচলিত আনুষ্ঠানিকতা যেমন পান্তা-ইলিশ ভোজন, মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং বিভিন্ন লোকজ সংস্কৃতির অনুসরণ ইসলামি আকিদা ও আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বৈঠকে তিনি আরও বলেন, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মুসলমানদের তাদের প্রতিটি কাজে শরিয়তের সীমারেখা মেনে চলতে নির্দেশ দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে কেউ আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করে, সে নিশ্চয়ই নিজের ওপর জুলুম করে।’ (সুরা তালাক : ১)
বাংলা নববর্ষে যে ধরনের কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হয় তা বহুক্ষেত্রে অনৈসলামিক, বিদআত ও অপচয়মূলক। বিশেষ করে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, গান-বাজনা এবং অনৈসলামিক আচরণ প্রমোট করা ইসলামি নৈতিকতার পরিপন্থি।
তিনি বলেন, সরকারি উদ্যোগে এসব উৎসব পালনের মাধ্যমে মুসলিম জনগণের করের অর্থ ব্যবহার করে এমন কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পক্ষেও যথার্থ নয় এবং তা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের চরিত্রের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণও বটে।
তিনি বলেন, আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই- তারা যেন এই ধরনের ধর্ম ও সংস্কৃতিবিরোধী কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রীয় মদদ দেওয়া থেকে বিরত থাকে এবং মুসলিম জনসাধারণের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।
বৈঠকে মাওলানা মামুনুল হক আজকের ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সফল করায় দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, অবিলম্বে গাজা গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরালো ভূমিকা রাখুন।
তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ করছি যে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন অসংখ্য নিরপরাধ শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এই নির্মম গণহত্যা একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা ও পাশ্চাত্যের প্রত্যক্ষ মদদে জায়নবাদি ইসরায়েল ইতিহাসের দীর্ঘতম গণহত্যা আজও অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, এই প্রেক্ষাপটে, আমরা নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং বিশ্বজুড়ে পরিচিত ব্যক্তিত্ব প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- তিনি যেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই ভয়াবহ গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক পরিসরে জোরালো অবস্থান নেন এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা পালন করেন।
সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদের পরিচালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, মাওলানা রেজাউল করীম জালালী, মাওলানা আফজালুর রহমান, সাবেক এমপি মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা কুরবান আলী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা আব্দুল আজিজ, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, মুফতি শরাফত হোসাইন প্রমুখ কেন্দ্রীয় নেতারা।
মন্তব্য করুন