বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদ’ এর সঙ্গে একমত নয় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন খবর প্রকাশের প্রেক্ষিতে বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার করেন তিনি।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটের ৫, ৬ ও ৭-এ সংবিধানের মূলনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে তারা বহুত্ববাদের কথা বলেছেন, সাম্য-মানবিক মর্যাদার কথা বলেছেন। কিন্তু বহুত্ববাদসহ অন্যান্য বিষয়গুলোর সঙ্গে আমরা (বিএনপি) একমত নই। এই ব্যাপারে আমাদের মন্তব্যও কমিশনকে দিয়েছি।
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিগুলো সংবিধানের ৮, ৯, ১০ এবং ১২ এই অনুচ্ছেদগুলোতে বিবৃত আছে। সেই অনুচ্ছেদগুলোর বিষয়ে সংস্কার কমিশনে যে সুপারিশ করা হয়েছে, তারা একই বিষয়গুলো রিপ্লেস করতে চেয়েছেন। যেমন একটা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যে, ধর্ম নিরপেক্ষতা ইত্যাদি এগুলো বিলুপ্ত করা হোক। এখন বিভ্রান্তিটা ওই জায়গায়। আমরা সেখানে বলেছি যে, এটাতে (ধর্মনিরপেক্ষতা) একমত নই। কিন্তু কী কী চাই সেটাও আমরা বলেছি।
তিনি এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বাবস্থা যেটা পঞ্চম সংশোধনীতে গৃহীত হয়েছে, সেটা আমরা বহাল চেয়েছি। কিন্তু সবাই মনে করেছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিলের কথা বলেছেন, আপনারা সেটাতে একমত নন কেন? বিষয়টা তা নয়। আমরা পরিষ্কার করার জন্য বলেছি যে, আপনাদের (সংস্কার কমিশনের) প্রতিস্থাপন বহুত্ববাদসহ অন্যান্য বিষয়, এগুলো একসঙ্গে আসতে হবে। তখন আমরা কেন একমত নই এবং কেন আমরা বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে পূর্বে আমরা যেসব সংস্কার প্রস্তাব সংস্কার কমিশনের কাছে আবারও বলেছি, অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ‘মহান আল্লাহর ওপর আস্থা-বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র অর্থাৎ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় বিচার’-এ বিষয়গুলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গণ্য হবে। যেটা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে গৃহীত হয়েছিল বাকশালের বিলুপ্তির পরে। আশা করি, এ নিয়ে আর কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না।
বিএনপির এই নীতি-নির্ধারক বলেন, সংবিধানের মূলনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিষয়ে কথা বলছি। কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে আমরা যে সমস্ত প্রস্তাবনা দিয়েছি তা কি ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালে সংবিধানে ব্যাপক সংশোধনী আনিনি আমরা? আমরা উপ-রাষ্ট্রপতি, উপ-প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব করেছি, উভয় কক্ষে ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল থেকে নিয়ে আসার প্রস্তাব করেছি, দুই কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রস্তাব করেছি।
আমরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনায়নের প্রস্তাব করেছি, নতুন করে কিছু ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে দেওয়ার প্রস্তাব করেছি, আমরা সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছি। এ রকম অনেক প্রস্তাব করেছি, যেটার মাধ্যমে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে একটা ভারসাম্যমূলক অবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে- যেটা ‘Separation of power’ থিওরির মূল কথা।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য সময় চেয়েছি। তার সঙ্গে সাক্ষাতের পরেই আমরা এ বিষয়ে (নির্বাচনের বিষয়) কথা বলব। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে অবশ্যই সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বরের আগে একটা রোডম্যাপ চাইব। যেটা উনি পরিষ্কারভাবে জাতির সামনে যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করেন। যাতে করে জাতির মধ্যে যে একটা অনিশ্চিত-অস্থিরতা ভাব আছে, সেটা কেটে গিয়ে রাজনীতিতে যেন স্থিতিশীলতা আসে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আসে। সেগুলো লক্ষ্য রেখে আমরা বলব যে, এটা যথেষ্ট সময়।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি- তারা জুনের মধ্যে সমস্ত প্রস্তুতি সমাপ্ত করতে পারবে এবং প্রধান উপদেষ্টা ইতঃপূর্বে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। যেহেতু বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্যে একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে, সেটা পরিষ্কার করার জন্য আমরা তার কাছে এই আহ্বান জানাব।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, National Constitutional Council যেটা এনসিসি নামে তারা (সংস্কার কমিশন) অভিহিত করেছে, সেই ব্যবস্থাই তো আমরা স্বীকার করি না। এ রকম নতুন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পদায়ন- এগুলো যদি হয়, তাহলে বিচার ও নির্বাহী বিভাগের গুরুত্ব আর থাকবে না। সেই ব্যবস্থা আমরা অ্যাপ্রুভ করিনি। সেই এনসিসির মাধ্যমে তারা জরুরি অবস্থা প্রবর্তনের কথা বলেছে। একে তো আমরা এনসিসি মানি না।
দ্বিতীয়ত, তারা প্রস্তাব করেছে যে, জরুরি অবস্থার সময় যে অধিকারগুলো স্থগিত থাকে, সেগুলো স্থগিত থাকবে না। অর্থাৎ জনগণ রিট করতে পারবে, তাদের মৌলিক অধিকারগুলো বহাল থাকবে। কিন্তু জরুরি অবস্থার মানে হলো তো, কিছু কিছু অধিকার স্থগিত থাকবে। সেজন্য আমরা বলেছি, এটা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এর সঙ্গে আমরা একমত হতে পারলাম না।
এ সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন