অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন, এমন উপদেষ্টাদের অপসারণের পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উচিত সেসব উপদেষ্টাকে অপসারণ করা, যারা তার সরকারের নিরপেক্ষতা নষ্ট করছেন এবং সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।’
রোববার (৩০ মার্চ) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনের আগে সরকার নিরপেক্ষতা হারালে বিএনপি তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। আমরা সরকারের পূর্ণ নিরপেক্ষতা প্রত্যাশা করি, বিশেষ করে অধ্যাপক ইউনূসের কাছ থেকে। যদি তিনি অনুভব করেন যে তার মন্ত্রিসভার কেউ নিরপেক্ষতা নষ্ট করছেন, তবে তাদের অপসারণ করা উচিত। তাকে (ড. ইউনূস) সম্পূর্ণ স্বচ্ছ থাকতে হবে।’
‘যদি প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেন, তাহলে জনগণের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হবে যে এ সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমাদের হতাশ করেছে। কিছু উপদেষ্টার কার্যক্রম দেখে আমরা সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে গভীর সন্দেহ প্রকাশ করছি। তবে এখনই সরকার নিরপেক্ষ না, এ রকম কোনো পরিস্থিতি আমরা দেখছি না। যদিও অনেকটা আমরা ওভারলুক করে যাচ্ছি।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারের কিছু উপদেষ্টা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের স্বার্থে সরকারি সম্পদের অপব্যবহার করছেন, যা নিরপেক্ষতার পরিপন্থি এবং এটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত করছে।’
‘সরকারি সম্পদ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্প ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তহবিল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যা স্পষ্টভাবে নিরপেক্ষতার নীতির লঙ্ঘন। এগুলো কী ম্যাসেজ বহন করে। এগুলো ম্যাসেজ বহন করে “দ্যাট অ্যাফেকশন অব দ্য গভমেন্ট ইজ নট নিউট্রাল।”’
বিএনপির মহাসচিবের মতে, এসব কর্মকাণ্ড অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এখনো একটি সুস্পষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ দেননি, যা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সহায়ক হতে পারত। একটি নির্ভরযোগ্য রোডম্যাপ থাকলে চলমান রাজনৈতিক সংকট প্রশমিত হতো এবং রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনি প্রস্তুতিতে মনোযোগী হতে পারত।’
এনসিপি কি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে, এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই মুহূর্তেই আমি এই বিষয়ে কমেন্ট করব না। তবে আপনাদের পত্রপত্রিকা, মিডিয়ায় এই ধরনের কিছু নিউজ বেরোচ্ছে। সেগুলো আমরা অবজারবেশন করছি।’
সব মামলার ফয়সালা হওয়ার পরও তারেক রহমান কবে আসবেন, সে বিষয়ে বিএনপির কাছ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না, সাংবাদিকরা এমনটা বললে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেখুন সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা একটা রাজনৈতিক দলের পক্ষে দেওয়া খুব কঠিন হয়। বিশেষ করে যখন আমাদের স্ট্র্যাটেজি এখনো নির্ধারিত হয়নি। আমরা আমাদের নির্বাচনের স্ট্যাট্রেজি এখনো নির্ধারণ করিনি। আমরা যখন এটা নির্ধারণ করতে পারব, তখন সুস্পষ্টভাবে এই বিষয়ে বলতে পারব।’
অধ্যাপক ইউনূসের চীন সফর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনার (প্রধান উপদেষ্টার) চীন সফরকে আমি ভালোভাবে দেখি, ইতিবাচকভাবে দেখি। আমার মনে হয়েছে যে পজিটিভ ম্যাসেজ আমরা পেয়েছি। কারণ ভূরাজনৈতিকভাবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা এটা আমাদের খুব প্রয়োজন। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে ঘোষিত নীতি সেই নীতিকে খুব পরিষ্কার করে বলা আছে যে উই আর ফ্রেডস টু অল। সেখানে চীন বলেন, আমেরিকার বলেন, যুক্তরাজ্য বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেন, ভারত বলেন, পাকিস্তান বলেন, সবার সঙ্গে আমরা একটা সুসম্পর্ক তৈরি করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট দেশ। আমাদের সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই কাজ করতে হবে। আমরা তো সুপার পাওয়ার না যে আমাদের কর্তৃত্ব দরকার। আমাদের স্বার্থে যেটুকু দরকার আমাদের অবশ্যই সম্পদশালী দেশগুলো বিশেষ করে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।’
মন্তব্য করুন