আদালতের রায়ের মাধ্যমেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ‘জনতার মেয়র’ জনগণের কাতারে ফিরে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে; ডিসেম্বর না জুন না মার্চ, একেক সময় এককটা কথা। এটা তো শেখ হাসিনার কিছু কথা-বার্তার সঙ্গে মিল পাওয়া যায়।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ছাত্র-জনতা বিপ্লবে রিকশা, ভ্যান, অটোচালকদের মধ্যে যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবার ও আহত সদস্যদের মাঝে ঈদ উপহার দিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দলটি।
রিজভী বলেন, যখন নির্বাচনের দিন নির্বাচনী কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ভোটারদের, ধানের শীষের নির্বাচনী এজেন্টদের ঘাড় ধরে বের করে দেওয়া হচ্ছে এবং নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে বারবার আক্রমণ করা হচ্ছে এবং আমি নিজেও সেই আক্রমণের শিকার হয়েছিলাম, রক্তাক্ত করা হয়েছিল আমাকে। কি সন্ত্রাসী নির্বাচন হয়েছে আপনারা দেখেছেন? সেই অবৈধ নির্বাচন, ভোট ডাকাতির নির্বাচনের বিরুদ্ধেই ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক ন্যায়ের আদালতে সেই সময় মামলা করেছিলেন। সেই মামলার ফলাফল এতদিন পরে পেয়েছেন। এই রায় অত্যন্ত ন্যায়সংগত, এটা সুবিচার পেয়েছেন। ইনশাল্লাহ এই সুবিচারের মধ্য দিয়েই জনগণের মেয়র জনগণের কাতারে ফিরে এসেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন। সেই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র ঘোষণা করে সরকারের জারি করা গেজেটও বাতিল করা হয়েছে। সেসঙ্গে ধানের শিষ প্রতীকের প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হয়েছে। ইশরাক হোসেন অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে এবং বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য।
ইশরাক হোসেন বলেন, এই আইনি লড়াইটা সম্পন্ন করার জন্য শুরু থেকেই আমরা লেগেছিলাম। তার মাধ্যমে যে, অবৈধভাবে যে ক্ষমতা দখল করেছিল, এটা ভোট রিগিং করে মেয়র পদ দখল করেছিল তার বিরুদ্ধে আমরা যে একটা আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। একটি মহল এক বিষয়টি ফোকাস করছে না। তারা দেখাচ্ছে যে, আমরা বিএনপি মেয়র পদে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা যে আইনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলাম সেটা তারা বলছে না, আমরা যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছি সেটা কিন্তু বলা হচ্ছে না। আমি কিন্তু সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে হারিনি, আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটা কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠা পাক সেটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল।
আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর আইনি লড়াই করার পর গতকাল আদালতে এই রায় পেয়েছি। আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। এখন দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবে এবং সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ আমরা নেব।
ইশরাক বলেন, আমি নির্বাচনের পর ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেছিলাম। এই মামলাটি ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা থাকলেও বিগত ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের আমলে এটাকে বাধাগ্রস্ত করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী তাপস (ফজলে নূর তাপস) এই মামলা বাতিলের জন্য আদালতের ওপর চাপ দেন এবং মামলা বাতিল করার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করে মামলার শুনানি বন্ধ করে রাখেন। পরবর্তীতে ৫ আগস্টের পর আদালত শুনানি করে এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া শেষে আমি রায় পাই। এখন আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। সেটাকে যদি বিএনপি সদস্য বলে আমার ন্যায়বিচারপ্রাপ্তিকে বিতর্কিত করা হয় তাহলে সেটার বিচার জনগণই করবে। এই রায়টি সাড়ে চার বছর আগে ১৮০ দিনের মধ্যে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে এই রায় হতে দেওয়া হয়নি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখনো ১২২টি গার্মেন্টেসের শ্রমিকরা কেন বেতন পায় না- এটা একটা বড় প্রশ্ন। প্রায় অর্ধশতাধিক গার্মেন্টস তারা বোনাস পায়নি কেন? সরকার হচ্ছে মালিক এবং শ্রমিক পক্ষের মধ্যে একটি লিয়াজোঁ অফিসারের ভূমিকা পালন করেন। এই জিনিসগুলোর দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে। একজন শ্রমিক যদি না খেয়ে থাকে, ঈদের আগে সে যদি বেতন না পায় তাহলে শ্রমিকদের পরিবার ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে না। এইজনহিতকর পদক্ষেপ সরকারের দিক থেকে হওয়া উচিত। এটা সরকারের দেখা উচিত ছিল।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে। ডিসেম্বর না জুন না মার্চ, একেক সময় এককটা কথা। এটা তো শেখ হাসিনার কিছু কথা-বার্তার সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। কেন এটা হবে? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের রক্তের উপর গঠিত সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অকাতরে জীবনদানকারী শিশু-কিশোর-তরুণ-নারী-রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের চালকদের রক্তের ওপর গঠিত সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৬ বছর বিএনপির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে যে আপোষহীন ধারা- যে ধারায় গুম, খুন, ক্রসফায়ারের মধ্য দিয়ে যে অরাজকতা তৈরি করেছিল শেখ হাসিনা সেই ফ্যাসিস্টকে পরাজিত করে গঠিত সরকার। সেই সরকার জনগণের কাছে স্পষ্ট নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে মাসের কথা বলে তারা একটা নির্বাচনের প্রক্রিয়া তৈরি করবে। আমরা কখনো শুনছি ডিসেম্বর, কখনো শুনছি মার্চ, কখনো আবার জুন- এ ধরনের একটা পেন্ডুলামের মতো বক্তব্য ঝুলছে, সরকারের এই দোলায়মান অবস্থা থেকে জাতিকে একটি নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে স্পষ্ট করা দরকার।
তিনি বলেন, অনেকে আবার বলেন, আরে আন্দোলন কি করা হয়েছে শুধু নির্বাচনের জন্য। আরে ভাই অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন শেখ হাসিনা সুষ্ঠু করেনি বলেই তো আন্দোলন হয়েছে, শেখ হাসিনা অমল-ধবল গদি রক্ষার জন্য দেশকে একটা রক্ত ঝরা কারবালায় পরিণত করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। সেজন্য তার পতন এক ব্যাপক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, অনেক রক্তদানের পর এই অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ ও জাতীয়তাবাদী রিকশা, ভ্যান, অটোচালক দলের প্রধান আরিফুর রহমান তুষার বক্তব্য দেন।
মন্তব্য করুন