জুলাই মঞ্চের উদ্যোগে চতুর্থ শহীদী মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুর ১টায় শাহবাগ থেকে এই মার্চ শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে আজ ৩৫তম দিন অতিক্রম করছে জুলাই মঞ্চ। মঞ্চটির পূর্বঘোষিত ৫টি শহীদী মার্চের চতুর্থটি আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে অনুষ্ঠিত হয়।
এর পূর্বের তিনটি মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে সাভারের আশুলিয়া, র্যাব হেডকোয়ার্টার ও রামপুরাতে। এছাড়া আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মঞ্চটি ২ দিন শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচি করেছে, যা এপ্রিল মাস থেকে আবার শুরু হবে।
জুলাই মঞ্চের শহীদী মার্চের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ। আবু হানিফ বলেন, জুলাই গণহত্যার বিচারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল গঠনের এত দিন সময় পেরিয়ে গেলেও বিচার কার্যের গতি তেমন দেখা যাচ্ছে না। বিচারের এই ধীরগতির ফলে আমাদের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে- শেষ পর্যন্ত বিচার হবে কিনা। তাই আমাদের আহ্বান, জুলাই গণহত্যার বিচার কার্যক্রমের গতি বাড়াতে হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তার মাঝে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি সদস্যরা জড়িত রয়েছে, তারা গুলি করেছে। সব পুলিশ সদস্যরা দায়ী সেটা আমরা বলছি না, আমরা বার বার বলছি যারা সুনির্দিষ্ট অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারি হিসেবমতে ৮শর বেশি ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছে। বাস্তবে এই শহীদের সংখ্যা ২ হাজারের কাছাকাছি। যার প্রায় অধিকাংশ পুলিশ, বিজিবি র্যাবের গুলিতে শহীদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত কত ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো কতজন পুলিশ, বিজিবি আটক হয়েছে, সেটা বড় প্রশ্ন। সব মিলিয়ে ২৫-৩০ জনও হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। জুলাই গণহত্যায় জড়িত এমন অসংখ্য আসামি এখনও আটক হয়নি। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ৮ মাস হয়ে গেছে। এখনও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেনি। জুলাই গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নাই।
আবু হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ জুলাই আগস্টে যে গণহত্যা চালিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার রাখে না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচার না করে কীসের সংস্কার করছে সরকার এটা আমাদের প্রশ্ন। এই সরকার যদি গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে না পারে তাহলে পদত্যাগ করুক, নতুন যে সরকার দায়িত্ব নেবে সেই সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ এবং গণহত্যার বিচার করবে।
জুলাই মঞ্চ প্রতিনিধি সাকিব হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন ২৪ -এর গণহত্যাসহ ও বিগত ১৬ বছরের গুম, খুন, ক্রসফায়ার, আয়না ঘরের হোতাদের বিচার চায়। বিগত সময় হওয়া তিনটি গণহত্যাকে (পিলখানা, শাপলা চত্বর ও গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত) অগ্রাধিকার দিয়ে বিচারের রায় প্রত্যাশা করছে জনগণ। বিগত ১৬ বছরের দুঃশাসনে দেশের মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যা চালানোর অভিযোগে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারি দল আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ দেখতে চায় জনগণ।
তিনি আরও বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অধীনে যে সব গণহত্যাকারী ও অপরাধীদের বিচার চলছে অনতিবিলম্বে তাদের বিচার কাজ শেষ করে রায় ঘোষণার দাবি জানাচ্ছে জুলাই মঞ্চ। বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তারে দ্রুত সময়ে পরোয়ানা জারি ও আদালতের মুখোমুখি করতে হবে৷ বিচারকার্যের দীর্ঘসূত্রতা হলে জনগণ বিচার আদায়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।
জুলাই মঞ্চের আরেক প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, অথচ যাদের জীবনের বিনিময়ে আজকেরই বিজয় তাদের হত্যার বিচার হচ্ছে না এখনও। সরকার সংস্কারের নামে তালবাহানা করছে, গণহত্যার বিচারের বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। জুলাই মঞ্চ আজকে ৩৫ দিন ধরে শাহবাগে অবস্থান করছে গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধদের দাবিতে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে, সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেবে জুলাই মঞ্চ।
জুলাই মঞ্চের প্রতিনিধি রাকিব হোসেন গাজীর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন জুলাই মঞ্চের প্রতিনিধি অর্নব হুসাইন, থোয়াই চিং মং চাক, সুরাইয়া আন্তা, তাসমিয়া। এসময় শহীদ পরিবারের কয়েকজন সদস্যও বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য করুন