বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ষড়যন্ত্র করে সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো ষড়যন্ত্র আছে। আমাদের যেকোনো মূল্যে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।
সোমবার (২৪ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে বিএনপির মিডিয়া সেল আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের জন্য এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
দেশে নতুন করে ষড়যন্ত্র হচ্ছে মন্তব্য করে এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগেও আমরা দেখেছি, সংস্কার এবং নির্বাচনকে যেমন মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে, ঠিক একইভাবে সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেছেন, কোথাও কেউ হয়তো কিছু একটা করার চেষ্টা করছে। সেনাবাহিনী ও জনগণকে মুখোমুখি করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আপনি একজন সাংবাদিক হিসেবে এবং আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এতটুকু বুঝি, এটির পিছনে নিশ্চয়ই কোনো ষড়যন্ত্র আছে। আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারছি, একটি মহল তারা তাদের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। আমরা সকলে মিলে যদি সচেতন-সতর্ক থাকি, তাহলে অবশ্যই আমরা এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো। আমাদের সর্বপ্রথম এবং একমাত্র লক্ষ হওয়া উচিত- এই দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার যেকোনো মূল্যে প্রতিষ্ঠিত করা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের লড়াইয়ে এবং বিগত ১৬-১৭ বছরের গণতান্ত্রিক উত্তরণের লড়াইয়ে যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের ত্যাগ যেন বৃথা না যায়, আসুন তা নিয়ে কাজ করি। তিনি সব বিষয়ে সাংবাদিকদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি সূক্ষ্মভাবে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
বিএনপির পক্ষ থেকে উত্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, সে সময়ে যেভাবে সাংবাদিকেরা আমাদের পাশে ছিলেন এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণে বাংলাদেশের পাশে ছিলেন, তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। আগামী দিনেও তিনি সাংবাদিকদের বিএনপির পাশে থাকার আহ্বান জানান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিগত ১৫ বছর বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে যে বিষয়গুলো আমরা আমাদের আশেপাশে দেখেছি, প্রত্যেকটা মানুষ বাংলাদেশে চায়- এর একটা পরিবর্তন হোক। আমাদের আহ্বান থাকবে, এ ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষকে রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের যা করার, সেই সহযোগিতা করতে সক্ষম হবেন। আমাদের এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। আমি মনে করি, এখানে আপনাদের (সাংবাদিক) বিরাট ভূমিকা আছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয় বিতর্কিত করা হচ্ছে। আপনারা (সাংবাদিক) যদি এই বিষয়গুলো আপনাদের অবস্থান থেকে সত্যভাবে জাতির সামনে তুলে ধরেন, তাহলে আমরা এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারব। আর জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশের যেসব নাগরিক স্বৈরাচারকে বিদায় করার জন্য, গণতন্ত্র ও নিজেদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জীবনকে উৎসর্গ করেছেন- তাদের প্রতিটা মানুষের এই উৎসর্গ যেন স্বার্থক হয়, তার জন্য আমাদের সকলকে এক প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াতে হবে। আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের সকলকে নিজ নিজ অবস্থানে যার যার ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এবং মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল।
ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা রিয়াজউদ্দিন নসু, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, আমরা বিএনপি পরিবার এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, সিনিয়র সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল, সাংবাদিক নেতা মো. আবদুল্লাহ, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক লোটন একরাম, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ফারজানা শারমিন পুতুল, শায়রুল কবির খানসহ গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকেরা।
মন্তব্য করুন