সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর মালিবাগের স্কাইসিটি হোটেলে বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনীতিবিদদের সম্মানে ১২ দলীয় জোট আয়োজিত ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই অভিযোগ করেন তিনি।
আড়াই বছর আগে পরিবর্তনের লক্ষ্যে ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের প্রস্তাব উত্থাপনের বিষয়টি তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, দুঃখজনকভাবে আমরা দেখছি, একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। এখানে আপনারা সবাই রাজনীতিবিদ। আপনাদের রাজনৈতিক ভিন্নমত আছে, আদর্শ সবার এক নয়, কিছু কিছু ভিন্নতা আছে। কিন্তু একটি জায়গায় আমরা সকলে এক, তা হচ্ছে- বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ ও গণতন্ত্র। এখানে কিন্তু কোনো বিভেদ নেই। বেসিক বিষয়টিতে আমরা সকলে একত্রিত। আর গণতন্ত্র বলতে সাধারণ মানুষের কাছে একথায় নির্বাচন, নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার যে সিস্টেম সেটিকে গণতন্ত্র বলি আমরা।
তিনি বলেন, কেউ কেউ বলছেন যে, সংস্কার শেষ হবে- তারপরে নির্বাচন হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, যেটা শেষ হয়ে যায়- সেটা তো সংস্কার হতে পারে না। সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে গাফিলতিগুলো আছে, সেই ত্রুটিগুলোকে আমরা সংস্কার করব, পরিবর্তন করব এবং সময়ের সাথে আরও সামনে এগিয়ে আরও ভালো ব্যবস্থা করবো, শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করব। দেশের মানুষের জন্য যে চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে, সেটিকে আমরা পরিবর্তন করব, উন্নত করব। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেটি এগিয়ে যাওয়ার পর আরও ভালো করার চেষ্টা করব।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদেরকে যেকোনো মূল্যে ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে। মত-ভিন্নতা থাকবে, আমরা বসব, আলোচনা করব। এমন কিছু আমরা বলব না, এমন কিছু করা থেকে আমরা বিরত থাকার চেষ্টা করব, যাতে করে কোনোভাবেই স্বৈরাচার বা তার প্রেত্মাতারা আবার এ দেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসতে পারে- এটি হোক আমাদের প্রত্যাশা, এই হোক আমাদের শপথ, আজকের এই ইফতার মাহফিলে।
আন্দোলনে সহকর্মী-আপনজনদের হারানোর কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, আসুন যে ঐক্যকে নিয়ে আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করেছিলাম, সেই ঐক্যকে আমরা ধরে রাখি। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আগামী দিনে এই ঐক্যকে বজায় রেখে, এই ঐক্যকে ধরে রেখে এ দেশের মানুষের প্রত্যাশিত গণতন্ত্রকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করব। এ দেশের মানুষের প্রত্যাশিত সংস্কার প্রক্রিয়াকে আমরা সকলে মিলে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করব।
দেশ ও জাতি আজ চরম সংকটে নিমজ্জিত এমনটা উল্লেখ করে ইফতার মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, গত জুলাই-আগস্টে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী যে ঐক্য গড়ে তুলেছিলাম, সেই ঐক্যকে আমরা অটুট রাখব। দেশে বর্তমানে একটির পর একটি ইস্যু সৃষ্টি করা হচ্ছে। নন-ইস্যুকে ইস্যু করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাই আমাদের ঐক্যকে অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।
জোটের সমন্বয়ক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার সঞ্চালনায় ইফতারপূর্ব আলোচনায় বিএনপির সেলিমা রহমান, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জামায়াতের মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আখতার হোসেন, গণঅধিকার পরিষদের ফারুক হাসান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) কাজী মো. নাহিদ বক্তব্য রাখেন।
ইফতারে বিএনপির জয়নুল আবদিন ফারুক, মাহবুব উদ্দিন খোকন, ড. মাহদী আমিন, রিয়াজউদ্দিন নসু, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, জাতীয় পাটির (জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুর রকীব, বিকল্পধারার নুরুল আমিন বেপারী, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, রাশেদ প্রধান, ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ ন্যাপের জেবেল রহমান গাণি, গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, বাংলাদেশ লেবার পার্টির লায়ন মো. ফারুক রহমান, শরিফুল ইসলাম, জমিয়তের মহিউদ্দিন ইকরাম, কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, ডেমোক্রেটিক লীগের খোকন চন্দ্র দাস, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এনসিপির সারজিস আলম, বাংলাদেশ এলডিপির তমিজউদ্দিন টিটুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন