জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেছেন, ‘জুলাই প্রাসঙ্গিক থাকলে বাংলাদেশের তরুণ সমাজসহ আপামর জনগণের বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের আশা, স্বপ্ন আর এসপিরেশন পূরণের বাস্তবতা তৈরি হয়। সে লক্ষ্যেই আমাদের প্রতিটি এলাকায় প্রত্যেকের কাছে পৌঁছাতে হবে।’
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
পোস্টে তিনি লেখেন, ‘জুলাই-পূর্ব হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন দিল্লির আধিপত্যবাদীদের প্রত্যক্ষ সমর্থনে বাংলাদেশের মানুষকে নানাভাবে বিভাজিত করে মানুষের ওপর সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে। আলেম-ওলামাসহ ইসলামপন্থিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। জামায়াত-শিবির পরিচয় ধারণ করলেই তাকে নির্মম টর্চারের লক্ষ্য বানিয়েছে।
‘ডান কিংবা বাম যে আদর্শেরই হোন, বিবেকবান হলেই জুলুমের শিকার হতে হয়েছে। জুলুমের নিশানা হয়েছেন ধর্ম-বর্ণ-পেশা-লিঙ্গ-মতাদর্শ নির্বিশেষে সব নীতিনিষ্ঠ বিবেকবান ব্যক্তি।’
‘অতঃপর ফ্যাসিবাদ যে বিভাজনরেখা দাঁড় করিয়ে আমাদের নিঃশেষ করতে চেয়েছিল, আমরা একসঙ্গে তাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একটা বৈষম্যহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা চেয়েছি। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়তে চাইলে যোগ্য ও নৈতিক নেতৃত্ব লাগবে, পেশিশক্তি ও চাদাবাজি-দুর্নীতিনির্ভর রাজনীতিকে হটানো লাগবে, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী কার্যকর অবস্থান লাগবে, ইসলামোফোবিয়া ও ধর্মবিদ্বেষ দূর করা লাগবে, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থাপনা লাগবে, উন্নত অর্থনৈতিক মডেল লাগবে ইত্যাদি।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির এই নেতা বলেন, ‘সবার আগে লাগবে জুলাইয়ের ঐক্য। জুলাই আমাদের কাছে একটা ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের মডেল যেখানে বাংলাদেশের স্বার্থই একমাত্র স্বার্থ। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে একটা ঐক্য এখনো আছে। জনগণ চাইলে সে ঐক্য আরও পোক্ত হবে।’
‘মনে রাখতে হবে, জুলাই প্রাসঙ্গিক থাকলে বাংলাদেশের তরুণ সমাজসহ আপামর জনগণের বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের আশা, স্বপ্ন আর এসপিরেশন পূরণের বাস্তবতা তৈরি হয়। সে লক্ষ্যেই আমাদের প্রতিটি এলাকায় প্রত্যেকের কাছে পৌঁছাতে হবে। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে একটা শক্তিশালী 'সোশ্যাল ফোর্স' (সমাজ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত চাপ) তৈরি করে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসতে হবে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নতুনত্ব নিয়ে আসতে হবে যাতে এই অঞ্চলের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ, ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে। নতুন নতুন গান, নাটক, সিনেমা, কবিতা, উপন্যাস রচনা হবে এসব ঘিরে।’
শিল্প ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে জোনায়েদ বলেন, ‘তরুণ সমাজ এই সাংস্কৃতিক ধারায় নেতৃত্ব দিবে। অর্থনৈতিক পলিসি নির্ধারণ করতে হবে। বিশ্লেষণপূর্বক পুরনো শিল্পের কলেবর বাড়ানো কিংবা পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। আমাদের চাহিদা ও সামর্থ্যের আলোকে নতুন নতুন শিল্প গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পর্যাপ্ত স্কিলড পারসন তৈরিতে শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।’
আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘এ রকম প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে কাজ করতে করতে নতুন রাজনৈতিক ধারা আমরা সৃষ্টি করবো ইনশাআল্লাহ। সেজন্য লাগবে দীর্ঘ সময়, ধৈর্য্য, যথাযথ কৌশল ও পরিকল্পনা। লাগবে আপনাদের প্রত্যেকের দোয়া, ভালোবাসা, স্বতঃস্ফূর্ত পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতা। সর্বোপরি লাগবে মহান রবের অপার করুণা।’
‘আমরা আসছি আপনাদের ঘরে ঘরে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে একসাথে এই পথ হাঁটবো ইনশাআল্লাহ।’
মন্তব্য করুন