গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, লুটেরাদের শাসনব্যবস্থার বদলে জনগণের শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে হবে।
সোমবার (১৭ মার্চ) বাংলাদেশ এবি পার্টির উদ্যোগে চলমান গণইফতার কার্যক্রমের ১৬তম দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে লুটপাটের উৎসবে মেতে উঠেছিলেন। দেশ থেকে টাকা পাচার করেছে, কেউ কথা বললে তাকে গুম করা হয়েছে, খুন করা কয়েছে, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। লুটেরাদের শাসনব্যবস্থা বদলিয়ে জনগণের শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে হবে বলে জানান তিনি। খেটে খাওয়া মানুষের শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে পারলে গণতন্ত্র কায়েম হয়ে যাবে। এই বাংলাদেশ খেটে খাওয়া মানুষের বাংলাদেশ।
জোনায়েদ সাকি বলেন, এবি পার্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গণ ইফতারের আয়োজন করছেন যা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তিনি এমন আয়োজনের জন্য এবি পার্টিকে ধন্যবাদ জানিয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, এমনি এমনিতো এই রাষ্ট্র আমরা পাইনি, যুদ্ধ করে আমরা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র পেয়েছি, যোদ্ধা হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষ। সম্পদ তৈরি করেন আপনারা আর ভোগ করেন অল্প সংখ্যক লোকেরা। এভাবে চলতে পারে না। এই দেশ হবে খেটে খাওয়ার মানুষের। হাসিনা কি এমনি এমনি পালিয়েছে। ১৬০০ মানুষের জীবনের বিনিময়ে হাসিনাকে পালাইতে হয়েছে। হাসিনা পালানোর মধ্যে দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টির সুযোগ হয়েছে, সেটি আমরা হেলায়ফেলায় বেহাত হতে দেব না। এজন্য পুরাতন রাজনীতি ছুঁড়ে ফেলে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মধ্যে দিয়ে জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। পুরাতন বন্দোবস্ত স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণে ব্যর্থ হয়েছে এজন্য ২৪ পরবর্তী গণঅভ্যুত্থানে এই সময়ে রাষ্ট্রকে জতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের সমান মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। নতুন বাংলাদেশে কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না। মবের নাম করে আইনশৃঙ্খলা নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।
এসময় সভাপতির বক্তব্যে পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আপনারা তো ভালো নাই, ভালো থাকলে এখানে আসতেন না! এই রাষ্ট্রে শেখ হাসিনার মত শাসক গোষ্ঠী কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে শাসন করেছে আমাদের, যার ফলে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনাকে পালাতে হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে অপরাধ শূন্যের কোঠায়, মানুষের অভাব পূরণের মধ্যে দিয়ে এটি সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, আগে রাষ্ট্রের অভাব দূর করতে হবে, তারপর মানুষকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অভাব দূর করতে না পারলে শাস্তি দেওয়ার অধিকার নাই। উন্নত রাষ্ট্রগুলো আগে আমাদের চাইতে অনেক নিচে ছিল, ওরা এখন আমাদের চাইতে অনেক উন্নত, কারণ ওদের সমাজ পরিবর্তনের কিছু কাজপাগল দেশপ্রেমিক মানুষ ছিল। সেই উন্নত রাষ্ট্রগুলোর ন্যায় আমরাও সমাজটাকে পরিবর্তন করতে চাই। আপনারা একতাবদ্ধ হয়ে আমাদেরকে জানান যে, আমরা প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হতে চাই, আমরা রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের নিকট প্রস্তাবনা দিয়ে আপনাদের কাজ শেখার ব্যবস্থা করবো। আমাদেরকে নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তনের লড়াই করতে হবে তাহলেই রাষ্ট্রের ভাগ্যও অটো পরিবর্তন হয়ে যাবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য তিনি আরও বলেন, আপনাদের ৩টি কাজ করতে হবে, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের বিচারকে করবে? আমার বোনের বিচার কে করবে? আমার রিকশাওয়ালা শহীদ ভাইয়ের বিচার কে করবে? বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আমার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের বিচার করবে না, জামায়াত ক্ষমতায় আসলেও করবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের বিচার করে যেতে হবে এই সরকারকেই। বিচার ও সংস্কার শেষ করার পরই নির্বাচন করতে হবে বলে জানান তিনি।নতুন রাজনীতির বন্দোবস্ত না হলে বাংলার জনগণ কখনো আপনাদের ক্ষমা করবে না। শুধুমাত্র পার্লামেন্টের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে দেশ চালালে হবে না, আমার ফুটপাতের মানুষের মতামতও নিতে হবে। দেশটা আমাদের সবার এজন্য দেশের ভালোর জন্য আমাদের সকলকে ভালো কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু’র সভাপতিত্বে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গণইফতার কার্যক্রমে আরোও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাচ্চু ভুঁইয়া, এবি পার্টির জাতীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান, স্বেচ্ছাসেবা ও জনকল্যাণ বিষয়ক সহ সম্পাদক কেফায়েত হোসাইন তানভীর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুগ্ম সদস্য সচিব বারকাজ নাসির আহমদ, পল্টন থানা আহ্বায়ক আবদুল কাদের মুন্সী ও যুব নেতা ইমরান হোসেন শিবলু। গণইফতার অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির নেতা সেলিম খান, আবু হেলাল, আমানুল্লাহ সরকার রাসেল, শাহিনুর আক্তার শিলা, আব্দুল হালিম নান্নু, শরন চৌধুরী, আবু বক্কর সিদ্দিক ও রিপন মাহমুদ, আজাদুল ইসলাম আজাদসহ মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
মন্তব্য করুন