নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।
এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, একজন ছাত্র ৫ আগস্টের আগে যারা হলে থাকত, যারা টিউশনি করত তারা হঠাৎ করেই এত টাকার মালিক হয়ে গেলেন তিন-চার-পাঁচ কোটি টাকার গাড়িতে চড়েন, আগে-পিছে আট-দশটা-বিশটা কোটি টাকার গাড়ি থাকে তাদের জন্য, যাতায়াতের ব্যবস্থার থাকে- এই যে একটা অশনিসংকেত জাতির জন্য। এর থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিকে মুক্তি দেবেন এটাই আমাদের দাবি।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সাবেক মন্ত্রী মশিয়ুর রহমান যাদু মিয়ার ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা হয়। ভাসানী স্মৃতি সংসদ ও জননেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন কমিটি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জিয়াউল হক মিলুর সভাপতিত্বে ও নাদিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, কৃষক দলের তকদীর হোসেন মো. জসিম, ভাসানী স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ন্যান্সি রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এনসিপির আত্মপ্রকাশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সারা দেশ থেকে লোকজন আনা, প্রশাসনকে ব্যবহার করার কঠোর সমালোচনা করে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, মানুষজন বলছে, এটা একটা কিংস পার্টি।
তিনি আরও বলেন, আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, জামায়াতে ইসলামী ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ১৭৫ দিন হরতাল পালন করেছিল এবং সেদিন তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করেছিল।
সেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা খালেদা জিয়া সংবিধানে সংযোজন করেছিলেন জনগণের কল্যাণ ও গণতন্ত্রের জন্য। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আমরা কি দেখলাম? জামায়াতের আমির তিনি এক সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন, উনি হঠাৎ বলে দিলেন, দেশে যা ঘটেছে যারা যে অন্যায় করেছেন আমরা সবাইকে মাফ করে দিলাম। আপনি মাফ করে দেওয়ার কে? জামায়াতের এসব নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, রাজনীতিতে এই ছাত্রশিবিরের নেতারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে ছিলেন, আত্মগোপন থেকে তারা আত্মপ্রকাশ করলেন। বৈষম্যবিরোধীরা যারা নতুন দল গঠন করলেন তারা হঠাৎ করে বক্তব্য দিয়ে বসলেন, আমরা ৪৭-এর পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে চাই, আমরা একাত্তর মানি না। যারা একাত্তর মানে না, যারা ৫২ মানে না তারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকেও মানে না।
একাত্তর হলো আমাদের স্বাধীনতার মূল স্তম্ভ, আমাদের ভিত্তি, একাত্তর হলো ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ। অতএব একাত্তর যারা মানে না আমি মনে করি, তাদের এ দেশের মানুষের কাছে ভোট চাওয়ার অধিকার নেই এবং ভোটে প্রার্থী হওয়ারও যোগ্যতা নেই, অধিকারও নেই। আমি মনে করি, শহীদ জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ হয়েছে, এই গণতন্ত্রের জন্যই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, অন্য কারণে হয়নি।
তিনি বলেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না। প্রতিদিন কি ঘটছে? দেশে মব জাস্টিসের নামে যে কোনো মানুষের বাড়িতে হামলা হচ্ছে, মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন হচ্ছে, যে কোনো মানুষ যে কোনো জায়গায় খুন হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতো অবনতি হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে, দেশে বিনিয়োগ আসছে না। এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে দেশে এখন একটি গণতান্ত্রিক সরকার দরকার, নির্বাচিত সরকার দরকার।
এছাড়াও তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এত সব কাজ করার ম্যান্ডেট নেই। তাই তাদের উচিত অতি দ্রুত ন্যূনতম সংস্কার করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন- এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে আছে। আমি বলতে চাই- যত দ্রুত নির্বাচন দেবেন তত দ্রুত দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
মন্তব্য করুন