বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, শিশু ধর্ষণ হচ্ছে। রাস্তায় যাকে খুশি, যাকে পাচ্ছে কোপাচ্ছে। এজন্য কি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে? এর জন্য কি আপনি (ড. ইউনূস) রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছেন? না পারলে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। ছেড়ে দেওয়ার মূল কাজটা হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন দিবেন। ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পরে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হয়েছে। এ দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে রয়েছে।
সোমবার (১০ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুসলিম পার্টির উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দুদু বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বয়স সাত মাস শেষে ৮ মাস চলছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসার পরে কিছু কাজ তিনি দ্রুত করেছেন। সেজন্যে তাকে ধন্যবাদ জানাই। সেই কাজগুলো হলো- তিনি তার নিজের মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তিনি তো গণ-আন্দোলনে ছিলেন না। কোনো গণ-আন্দোলনের কারণে তার নামে মামলা হয়নি। তবে তার মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। শেখ হাসিনার আমলে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে যে ঝামেলা ছিল, মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে সমস্যা ছিল, সেগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় ছয় বছর কোনো কর দেওয়া লাগবে না। তবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি যে আন্দোলন করেছে, যার কারণে ৬০ লক্ষ বিএনপি নেতাকর্মীর নামে আড়াই লক্ষ মামলা হয়েছে, এগুলো প্রত্যাহার করেননি।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আপনার বিরুদ্ধে কথা বলতে আমার খারাপ লাগছে। এই কারণে যে, আপনাকে আমরাই ক্ষমতায় রেখেছি। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যেসব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল, তারাই আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। আমরা যেটা প্রত্যাশা করেছিলাম, কিন্তু আপনি আপনারটা বাদে অন্য কিছু চিন্তা করতে পারছেন না। আপনার সঙ্গে ফায়সালা এখনো করিনি। সেজন্য রাস্তায়ও নামিনি। আমরা রাস্তায় নামলে আপনাদের কী অবস্থা হবে- সেটা আমরাও জানি, আপনারাও জানেন, দেশবাসীও জানে।
তিনি আরও বলেন, এ দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আপনি প্রথম না। এর আগে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামল রয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামল রয়েছে, এরশাদের রয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার রয়েছে। আপনার একজন মহিলা উপদেষ্টা বলেছেন- ৫১ বছরে কী হয়েছে। ৫১ বছরে বাংলাদেশ হয়েছে। বাকশালকে কবর দেওয়া হয়েছে। ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চাল রপ্তানি করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের আমলে মিল ও কলকারখানা হয়েছে, বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে। বিদেশ থেকে যে রেমিট্যান্স এখন পাচ্ছেন, যে রেমিট্যান্স নিয়ে বড়াই করছেন, সেই বৈদেশিক শ্রমশক্তি জিয়াউর রহমানের আমলেই হয়েছে। আর আপনাদের তো খাল খনন না, খাল পরিষ্কার করতেও লাল কার্পেট বিছাতে হয়।
দুদু বলেন, হাসিনার বিচার তিন, চার, ছয় মাসের মধ্যেই হতে পারতো। কিন্তু বিচারের নামে এখন যা হচ্ছে, মানুষ ভুলতে বসেছে আদৌ বিচার হবে কিনা। তরুণরা বলেছে- বিচারের আগে নির্বাচন হবে না। বিচার তো মনে হয় হবে না। তাই বলে কি নির্বাচনও হবে না? ভালো খেলা শুরু করেছেন। বিচার প্রক্রিয়াধীন- পরীক্ষা চলে, নির্বাচন চলে, সবকিছু চলে, বিচার চলতে থাকে। যদি ভালো উদ্যোগী হন, তাহলে এক বছরের বিচারকার্য তিন মাসে করতে পারবেন। সেজন্যে নির্বাচনকে আড়াল করার জন্য যুক্তি-তর্ক সামনে আনা ঠিক হবে না। আপনি সাধারণ মানুষের পেটে ভাত না দিতে পারেন, ভোটের অধিকারটা দিতে পারেন। শেখ হাসিনা তিন মেয়াদ মানুষের ভোটের অধিকার দেয়নি। আপনারা তো সেই একই পথে হাঁটছেন। মানুষ ভোটের অধিকার চায়।
সংগঠনের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম শুভ’র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক খোকন চন্দ্র দাস, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন