মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর জানাজায় সুখরঞ্জন বালির উপস্থিতি নিয়ে সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে লেখালিখি করেন সাবেক বুয়েট শিক্ষার্থী তানজিলুর রহমান। সেই জেরে তার বৃদ্ধ মাকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ ওঠার পর প্রতিবাদ জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
সোমবার (২১ আগস্ট) জোনায়েদ সাকি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ প্রতিবাদ জানান।
ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, তানজিলুর রহমানের মতপ্রকাশ দমনে বিনা ওয়ারেন্টে তার মা আনিসা সিদ্দিকাকে গ্রেপ্তার! কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদ ধ্বংস হোক, নিপাত যাক।
এদিকে মা আনিসা সিদ্দিকাকে গ্রেপ্তারের পর তানজিলুর রহমান ফেসবুকে লেখেন, ‘সাঈদী সাহেবের জানাজায় সুখরঞ্জন বালির উপস্থিতি নিয়ে আমার লেখাটা অনেক জায়গা থেকে শেয়ার হওয়ায় রবিবার, খুলনার বয়রা এলাকার হাজি ফয়েজউদ্দিন সড়কে আমার নানা বাড়িতে স্থানীয় যুবলীগ নেতারা পুলিশ নিয়ে হাজির হয়ে তাণ্ডব চালায় ও লুটপাট করে। দুইটা ল্যাপটপ ও নগদ টাকা নিয়ে যায়। আমার ছোট মামা সিদ্দিক শহীদকে বেদম মারধর করে। আমার মা আনিছা সিদ্দিকা এগুলো সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ জানানোয় তাকে খালিশপুর থানায় ধরে নিয়ে গেছে। দুজন ভাড়াটিয়া এগিয়ে আসায় তাদেরও সাথে নিয়ে গেছে। ‘জি হুজুর’ শুনে অভ্যস্ত পুলিশ প্রতিবাদের কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার মাকে সারা রাত থানা হাজতে আটকে রেখে গোপন বৈঠকের অভিযোগে মামলা দিয়ে কোর্টে পাঠিয়ে দিয়েছে।
তিনি উল্লেখ কারণে, বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায় আমার ধারণা ছিল হয়ত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বাবা, যেভাবে আমাদের তিনি বড় করেছেন তার প্রভাবেই আমরা দুই ভাই নিজেদের মতামত প্রকাশে কখনো কোনো কিছুর পরোয়া করিনি। অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করেছি। আমার বাবা আমাদের বলতেন, আমাদের দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করতে মাত্র দশ পনেরো হাজার টাকা দেওয়া লাগলেও, বিদেশে লাখ লাখ টাকা দেওয়া লাগে। তোমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে, এই খরচটা রাষ্ট্র ভর্তুকি হিসেবে দিবে যা আসে খেটে খাওয়া, দিন মজুর, মেহনতি মানুষের ঘামের উপার্জন থেকে। দেশে পরিজন রেখে দূরের খাটুনি করা কোনো প্রবাসীর কষ্টের রেমিট্যান্স থেকে। একসময় তোমরা হয়ত আমার চেয়েও বড় হবে, কিন্তু মনে রাখবে একজন ঠেলাওয়ালা যদি তার ঠেলা ঠেলে দিতে বলে, মুটে যদি তার বোঝা বহন করে দিতে বলে লিটারেলি আমরা আসলে অস্বীকার করতে পারি না, আমরা সব সময় তাদের কাছে বিশাল অঙ্কে ঋণী। কিন্তু আজকে মায়ের এই প্রতিবাদী রূপ দেখে উপলব্ধি হলো, আমার ধারণা ভুল। কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে না যাওয়া আমার মায়ের প্রভাবই আমাদের ওপরে আসলে বেশি।
তানজিল বলনে, আমেরিকার আলাবামা অঙ্গরাজ্যের মন্টগোমেরি শহরের বাসে রেসিজমের শিকার হয়ে কৃষ্ণাঙ্গ এক মহিলার গর্ভপাতে সারা আমেরিকা ফুঁসে উঠেছিল। পরে মার্টিন লুথার কিংয়ের হাত ধরে সিভিল রাইটস মুভমেন্টের মধ্যে দিয়ে কৃষ্ণাঙ্গরা মৌলিক অধিকার ফিরে পায়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি আমার মা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আজ আমার মা গ্রেপ্তার হয়েছে, কাল আপনার মাকে ধরে নিয়ে যেতেও পুলিশ দুবার ভাববে না। আজকে আমার মাকে খালিশপুর থানা থেকে যদি খুলনা কারাগারে যেতে হয়, এই লজ্জা বাংলাদেশে এখনো কোনো মানুষ যদি অবশিষ্ট থেকে থাকেন, তাদের সবার। আর যদি শুধু পা-চাটা দালালেরাই অবশিষ্ট থাকে তাহলে আমার প্রিয় জন্মভূমির কাছে আপাতত কোনো আবেদন নেই।
মন্তব্য করুন