বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আলেম ও তালেব উভয়ই সুসংবাদপ্রাপ্ত। কারণ, হাদিসে রাসুল (সা.)-এ বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম যিনি নিজে কোরআন শিক্ষা করেন এবং অপরকে শিক্ষা দেন।’ আমরা আজ তাদের সঙ্গে মিলিত হতে পেরে গর্ববোধ করছি। তিনি দেশ, জাতি ও ইসলামের কল্যাণে দেশের আলেম সমাজকে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
রোববার (২ মার্চ) রাজধানীর মিরপুর-১৪ এর গ্র্যান্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে ঢাকা-১৫ আসনের ওলামায়ে কেরাম ও এতিমদের সম্মানে এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দ্বীনই আমাদের জীবনোদ্দেশ্য। দেশে দ্বীনের শিক্ষা যত সম্প্রসারিত হবে, ততই সমাজ আলোকিত হয়ে উঠবে। আর দ্বীনের শিক্ষা সংকুচিত হলে নেমে আসবে অন্ধকার। যার প্রমাণই হচ্ছে পতিত আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের অপশাসন-দুঃশাসন। সে সময় দেশবরেণ্য আলেম-ওলামাদের সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাদের হাতে হ্যান্ডকাফ আর পায়ে ছিল ডাণ্ডাবেড়ি। অথচ চোর, ডাকাত, অপরাধী ও সমাজবিরোধীরা গোটা দেশ নির্বিঘ্নে দাপিয়ে বেড়িয়েছে।
তিনি তার নিজের গ্রেপ্তারের দুঃসহ স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল গভীর রাতে। কিন্তু আমাকে আয়নাঘরে রাখা না হলেও আমি তা দেখেছি। আমাকে এমনভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল যেন তারা কোনো ভয়ংকর অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রথম কয়েক দিন কেরানীগঞ্জ কারাগারে রাখার পর আমিসহ ৩৮ বরেণ্য আলেমকে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বদলি করা হয়। গাড়িতে আমি ছাড়া প্রত্যেকের হাতে হ্যান্ডকাপ ও পায়ে বেড়ি পরা দেখে আমি কেঁদেছি। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক পরিবেশ দিয়েছেন।
তিনি দেশকে এগিয়ে নিতে দেশের আলেম সমাজকে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, পবিত্র মাহে রমজান মাগফিরাত ও গুনাহ মাফের মাস। মূলত, সিয়াম মানুষের গোনাহ পুড়ে ছাই করে দেয়। হাদিসে রাসুল (সা.)-এ এসেছে, একদিন রাসূল (সা.) পরপর তিন বার আমিন বললেন। সাহাবিরা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) আপনি তো এমন কখনো করেন না। প্রত্যুত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, আমার কাছে জিব্রিল আমিন এসে বললেন, ঐ ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে তার জীবনে রমজান মাস পেল অথচ নিজের গোনাহ মাফ করে নিতে পারল না। আমি বললাম, আমিন! এরপর তিনি বলছেন, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে বা কোনো একজন বার্ধক্য অবস্থায় পেল অথচ জান্নাত লাভ করতে পারল না ঐ ব্যক্তি ধ্বংস হোক। আমি বললাম আমিন। জিব্রিল আমিন আবার বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে আপনার নাম শোনার পর দরুদ পড়ল না। আমি বললাম, আমিন।
তাই আমাদের প্রত্যেককে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য রমজান মাসে যথাযথভাবে সিয়াম ও কিয়াম পালন করতে হবে।
আমির জামায়াত বলেন, এ দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও নানা ধর্মের মানুষের বসবাস। তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। মানুষ হিসেবে সবার কল্যাণে কাজ করা আমাদের কর্তব্য। ছাত্র-জনতার সফল আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা নতুন এক বাংলাদেশ পেয়েছি। তারা ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবার নিরাপত্তার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করেছে। বিপ্লবোত্তর অনেক কিছু হবে বলে কল্পকাহিনি প্রচার করা হলেও তার ১ ভাগও হয়নি। যতটুকু হয়েছে সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা তাও সমর্থন করি না। মূলত, এ দেশে কোনো বৈষম্যের স্থান দেওয়া হবে না। তিনি ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ইয়াসিন আরাফাত প্রমুখ।
মন্তব্য করুন