কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৫, ০৭:৪৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নির্বাচন বিলম্ব হলে অস্থিরতা বাড়বে : সালাহউদ্দিন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ছবি : কালবেলা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ছবি : কালবেলা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন যত দীর্ঘায়িত হবে এই গণতন্ত্রের উত্তরণের যাত্রাপথটায় ততবেশি বিভিন্ন রকমের অস্থির অবস্থা সৃষ্টির সুযোগ পাবে পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসরা। সেই সময়টা যাতে দীর্ঘায়িত না হয় সেটিই হচ্ছে আমাদের প্রস্তাব।

রোববার (২ মার্চ) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা, বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে ‘মানবাধিকার নিশ্চিতে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, প্রতিনিধিত্বশীল জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার জন্য যত দ্রুত সম্ভব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করুন এবং সে দায়িত্ব বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আপনাদের ওপর (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) ন্যস্ত করেছে। আমরা যদিও ইনিয়ে বিনিয়ে আশ্বস্ত হয়েছি যে, তারা ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তাদের সব কর্মকাণ্ড সাজাচ্ছেন কিন্তু সে কর্মকাণ্ডগুলো জনগণের সামনে প্রকাশিত নয়। সে কর্মকাণ্ড জনসমক্ষে প্রকাশিত ও দৃশ্যমান হতে হবে যে, আমরা আসলেই সেদিকে যাচ্ছি কিনা।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন অনেকে বলে, আমি বিভিন্ন মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিক্রিয়া দেখি এই যে, ওনারা শুধু নির্বাচন নির্বাচন করছেন এবং সংস্কার ছাড়া নির্বাচন। সংস্কার তো আমরা চাই। আমরাই সবচাইতে আগে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই আমরা ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছি, তখন সরকার কীভাবে যাবে আমরা জানতাম না। আমরা আরও প্রস্তাব দিয়েছি- ফ্যাসিবাদ পতনের পরে আমরা যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে লিপ্ত গণতান্ত্রিক সংগ্রামে আমরা যদি জয়ী হই তাহলে সবাইকে নিয়ে সেই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করব একটি সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য, সব রাষ্ট্রীয় কাঠামোগুলোকে আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কার করব। এখন আমাদের যদি বলা হয় যে সংস্কার শেষ করে আপনারা নির্বাচনে আসবেন।

সংস্কারের প্রধানতম প্রস্তাবক তো বিএনপি, জাতির সামনে আমরাই সেটা প্রস্তাব আকারে দিয়েছি অনেক আগেই। সেই সংস্কার প্রস্তাবগুলোর সঙ্গে বর্তমান যে সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট আছে তার মধ্যে কিছু এদিক-ওদিক থাকতে পারে, কিছু মিল আছে, কিছু অমিল আছে। সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করতে পারব, আলাপ-আলোচনা চলবে। কিন্তু সেই আলোচনাকে আমরা সমাপ্ত করে তারপরে যদি বলি যে, নির্বাচন হবে সেটা তো অনিশ্চিত ব্যাপার।

তিনি আরও বলেন, সেজন্য আমাদের উদ্বেগ হচ্ছে যে, সংস্কার যেগুলো নির্বাচনমুখী সেগুলো আমরা চিহ্নিত করি এবং সেগুলোর ওপরে গুরুত্ব দেই, বাস্তবায়ন করি। সেসব সংস্কার নির্বাচনের জন্য আমাদের আগে বাস্তবায়ন করা দরকার সেটা ভেতরে একটা জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হোক এবং সেটা বাস্তবায়ন করি ও একই সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রদান করি এবং তার প্রেক্ষিতে জাতি আশ্বস্ত হোক। জাতির মধ্যে একটা অস্থির ভাব আছে সেটা চলে যাক, অর্থনীতির অস্থিরতা চলে যাক, এসব প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। কিন্তু এখানে আমাদের যত দিন যাচ্ছে তাতে আমাদের মনে হচ্ছে, গণতন্ত্র উত্তরণে পথ যেন আরও দীর্ঘায়িত করা যায় সেজন্য কিছু কিছু কুট কৌশল প্রণয়ন করা হচ্ছে- সেটা থেকে আমরা যেন বিরত থাকি সে আহ্বান সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাচ্ছি।

রমজানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ‘জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে’ মন্তব্য করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজারের অবস্থা ভালো না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস। আমরা যদি শুধু শুধু বিভিন্ন রাজনৈতিক তত্ত্ব ঘাটি আর মানুষের পেটে যদি ভাত না থাকে, দ্রব্যমূল্যে ক্রয়ক্ষমতা যদি মানুষের না থাকে এবং তাদের আয়ের সঙ্গে যদি ক্রয়ক্ষমতার কোনো সংগতি না থাকে, ক্রয়ক্ষমতা কমতে কমতে যদি তলানিতে যায়- তাহলে মানুষ সরকারের ভালো কর্মকাণ্ডকেও কিন্তু সমালোচনা করবে।

আমি আশা করব, সব উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা আপনারা গরিব মানুষের দিকে লক্ষ্য রাখুন যাতে বাজারের পরিস্থিতি এমন হয় যে, গরিব মানুষ অন্তত তাদের ক্রয় সাধ্যের মধ্যে যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যপণ্যগুলো পায়। সেজন্য বাজারের সরবরাহ পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা করুন। অন্যথায় আপনাদের যে কোনো ভালো পদক্ষেপকেও তারা (জনগণ) সমালোচনা করবে- এটাই স্বাভাবিক।

সালাহউদ্দিন বলেন, আপনারা শুধু আয়নাঘরের কথা শুনেছেন বা আমাদের মুখে আমাদের গুম করার কাহিনি শুনেছেন, ইতিহাস শুনেছেন। যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই। যারা আয়নাঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে তারা হয়তো ভিজিট করেছে, কথা বলেছে বা আমরা কথা বলছি; কিন্তু যাদের হদিস পাওয়া যায়নি তারা তো কথা বলতে পারছে না। আপনারা হয়তো আন্দাজ করে নিতে পারেন বা বিভিন্ন রকমের কথা হয়তো আপনারা শুনে থাকতে পারেন যে, কাকে কীভাবে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বাট এক্সাক্টলি সিনারিউটা আমরা দেখিনি। কিন্তু যা শুনেছি, তার যদি কিছুমাত্রও সত্যি হয় তাহলে বাংলাদেশের মতো এরকম বর্বর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুনের ইতিহাস হয়তো আফ্রিকার জঙ্গলেও কোনো দিন হয়নি।

তিনি বলেন, সেই রকম একজন স্বৈরশাসক, সেইরকম একজন ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী আওয়ামী প্রধান শেখ হাসিনাকে এখনো আমরা অনুশোচনা করতে দেখিনি। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে এখনো পর্যন্ত গণহত্যার দায় স্বীকার করে অনুশোচনা করে, ক্ষমা চেয়ে তারপরে বাংলাদেশে রাজনীতি করবে- এ কথা বলতে শুনিনি। এটা ভাবতে অবাক লাগে- উল্টো তাদের বক্তব্য শুনলে মনে হয়, বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সাধারণ নাগরিকরাই যেন অপরাধ করেছে।

তিনি আরও বলেন, এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টাতে হবে। যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি হবে বাংলাদেশের মানুষ সানন্দে গ্রহণ করবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে, যে কোনো অপরাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে- যাতে সব মানুষ আপন করে নিতে পারে সেরকম রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের চালু করতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে তুলে ধরে আমরা যদি আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে পারি তাহলে স্বৈরাচারের কখনো আর উন্মেষ হবে না, উৎপাদন হবে না ফ্যাসিবাদের।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সাবেক অধ্যাপক বোরহান উদ্দীন খান। সংগঠনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুমের সভাপতিত্বে ও আলী আকবর সিরাজীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, মুক্তিযোদ্ধা দলের নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুই ট্রাস্ট ফান্ড থেকে বৃত্তি পেলেন ঢাবির ১২ শিক্ষার্থী

২৯ মিলিয়ন ডলার নিয়ে ট্রাম্পের দাবিটি সঠিক নয় : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

একসঙ্গে পুলিশের ১২৪ কর্মকর্তাকে বদলি

রমজানে বিমানভাড়া ও টোল নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত ইন্দোনেশিয়ার

তুরস্ক আজ বিশ্ব রাজনীতিতে ‘পাকা খেলোয়াড়’ : এরদোয়ান

মঙ্গলবার জাতীয় নাগরিক পার্টির দুই কর্মসূচি 

প্রাথমিকে তৃতীয় ধাপে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের যোগদান ১২ মার্চ

হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি, অতিষ্ঠ ব্যবসায়ী-পথচারী

খালেদা জিয়াকে নিয়ে কটূক্তি, আ.লীগ কর্মী কারাগারে

মুঘল আমলের ৩৫৯ বছরের আন্দরকিল্লা মসজিদটি এখন যেমন

১০

আবরার ফাহাদের স্বাধীনতা পদক প্রসঙ্গ, যা বললেন ফারুকী

১১

বিআইএফের সভাপতি বিএম ইউসুফ আলীকে এসজেএর শুভেচ্ছা

১২

শ্রীমঙ্গলে পিকআপ উল্টে নিহত ২, আহত ১০

১৩

মির্জা ফখরুলের সুস্থতা কামনা করলেন জামায়াত আমির

১৪

র‌্যাব পরিচয় দিয়ে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫

১৫

বাস্তবায়নের দোরগোড়ায় তারবিহীন বিদ্যুৎ স্থানান্তরের প্রযুক্তি

১৬

দিনাজপুরের সিংড়া শালবনে আগুন

১৭

তেল, ডাল, আটা-ময়দাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট প্রত্যাহার

১৮

জোরপূর্বক ফসলি জমি কাটায় যুবদল নেতা আটক

১৯

রাখাইনে শুধু ৩টি জায়গা জান্তার নিয়ন্ত্রণে

২০
X