বাংলাদেশকে স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে রূপান্তর করাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করার জন্য এ সরকার আসেনি।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকাস্থ মীরসরাই জাতীয়তাবাদী ফোরাম আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান, গণপ্রত্যাশা এবং রাষ্ট্র সংস্কার’- বিষয়ক সেমিনারে মঈন খান এ কথা বলেন।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এই সরকার কিন্তু একটি বিশাল দায়িত্ব নিয়ে এসেছে। সেই দায়িত্বটি কী? বাংলাদেশকে স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে রূপান্তর করা। এটি কিন্তু ছোটখাট জিনিস নয়। আমি আনন্দিত, তারা (সরকার) চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেছেন। শুধু গ্রহণ করলে হবে না, দায়িত্বটিও সঠিকভাবে পালন করতে হবে। এটি শুধু তাদের জন্য নয়, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পরে আজ যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন, সরকারে তিনজন আছেন, বিভিন্ন কমিটিতে সমন্বয়ক রয়েছেন, নাগরিক কমিটি রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী কমিটি রয়েছে; তাদের সরাসরি প্রশ্ন করতে চাই— এই যে ৪টি গ্রুপ রয়েছে, তাদের মধ্যে কজন সত্যিকারের ছাত্র রয়েছে? তারা কি আসলেই আজকে ছাত্র? ছাত্রত্ব শেষ করেছে? ছাত্রত্ব পরবর্তী তারা চাকরিপ্রত্যাশী ছিল না? তাহলে আজ যে আমরা ছাত্র-জনতা বলছি, টেকনিক্যালি কেউ প্রশ্ন করলে এটা যে কত দোষে দুষ্ট, সেই প্রশ্ন তো আসছে।
মঈন খান বলেন, রাজপথে যারা ছিল, যারা নিজেদের সাধারণ ছাত্র বলে পরিচয় দিয়েছিল- তাদের মধ্যে কি কেউ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না? অবশ্যই ছিল। যারা সত্যিকারের ছাত্র রাজপথে ছিল, তাদের কি কেউ বিএনপির সদস্য ছিল না? এটা বুঝতে হবে। সত্যটা হলো, তারা সেদিনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি বলে নিজেদের পরিচয় দেয়নি, তারা পরিচয় দিয়েছিল সাধারণ ছাত্র বলে। এই সত্যগুলো বুঝতে না পারলে আমরা যে সংকটে আছি, সে সংকট থেকে কিন্তু বের হতে পারব না।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো পক্ষপাতিত্ব করতে পারবে না। যে মুহূর্তে তারা পক্ষপাতিত্বে চলে যাবেন, তখনই তাদের কার্যপদ্ধতি ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমরা শুনেছি, ছাত্ররা নাকি এই সরকারকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছে- আমরা জানি না। সারাদেশের মানুষ কি তাদের দায়িত্ব দেয়নি? ১৮ কোটি মানুষ কি দায়িত্ব দেয়নি? তারা কি একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে? সেই আন্দোলনে তো বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ গিয়েছিল। আমরা আবু সাঈদকে দেখেছি, তার মনোভাব ছিল- ‘তোমরা গুলি করো কিন্তু আমি প্রত্যয় থেকে সরব না’। যে ছেলেটি আন্দোলনকারীদের পানি খাইয়েছে, তার কথা ভুলে গেলে কিন্তু চলবে না। সবকিছু ভুলে গেলে কিন্তু চলবে না।
সংস্কার নিয়ে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, সংস্কার এমন একটি জিনিস, যেটা একবার করে ফেললাম আর সবকিছু সুন্দর হয়ে গেল- সেটাকে বুঝায় না। কারণ, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমি আজ যেটি সংস্কার করলাম, সেটি আগামীকাল আবার সংস্কারের প্রয়োজন হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, জনগণের প্রতি যদি আমাদের আস্থা থাকে, আমরা যদি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে বর্তমান সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। আমরা যত দ্রুত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব, ততই মঙ্গল।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাঁধে অনেক কাজ উল্লেখ করে মঈন খান বলেন, এই সরকারের ওপর আমাদের অনেক আস্থা। তাদের শক্ত হাতে একটি কাজ করতে হবে, আর সেটি হলো- দ্রুততম সময়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের অধ্যায় শুরু করা।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, ‘মুক্তচিন্তা বাংলাদেশ’ এর চেয়ারম্যান আবুল কাসেম হায়দার প্রমুখ।
মন্তব্য করুন