জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বাংলার বুকে হতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তৃণমূল নাগরিক আন্দোলনের উদ্যোগে স্থানীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে এক নাগরিক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
ফারুক বলেন, বিএনপি অতীতে জনগণের সাথে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। তার প্রমাণ- ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যখন স্বাধীনতার ঘোষণা করার জন্য কোনো মানুষ ছিল না, তখন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। আর বর্তমানে তারেক রহমানের প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা, তিনি যে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, তাতেই এটা প্রমাণ করে। আর একটি দল আছে, যারা স্বাধীনতাবিরোধী ছিল, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই- কীসের টালবাহানা শুরু করেছেন আপনারা? এই সরকারকে দোষারোপ করার জন্য কি টালবাহানা শুরু করেছেন? গণতন্ত্রের স্বপক্ষের শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, তারা এখনো রাস্তায়। জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম করে যাবে, যে পর্যন্ত না জনগণের অধিকার ফিরে আসে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত আপনার সরকার। ছাত্র-জনতা বিশ্বাস নিয়ে আপনাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে। দয়া করে এই বিশ্বাস অবহেলা করবেন না। যারা আপনার কানে কানে কথা বলে, তারা আওয়ামী লীগকে আবার পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে, তাদের রুখে দিতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে সাবেক বিরোধীদলীয় এই চিপ হুইপ বলেন, আপনি এমন একটা নির্বাচন দেন, যে নির্বাচন দেখে হাসিনাও যেন বলে- এটাই বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, অনেকেই বলেন দিল্লি তুরস্কর মতো দল করবেন। যে আদলে এই দল করেন না কেন। আমাদের কোনো বাধা নেই। কারণ, এ দেশের বহু দলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা হচ্ছেন স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, দল করেন আর দলে আসেন। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে- তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। সরকারকে সহযোগিতা করেন।
তিনি আরও বলেন, টালবাহানা শুরু করেছেন, বিএনপিকে টপকিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন বাংলার বুকে হতে দেওয়া হবে না। বিএনপির ধৈর্যের বাঁধ এখনো ভাঙেনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্দেশে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর, সচিবালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু সচিব, কিছু ডিসি-এসপি, যারা ড. ইউনূস সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, তাদের নাম কেন প্রকাশ করছেন না? তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না?
সরকারের উদ্দেশে ফারুক বলেন, কোনো টালবাহানা চলবে না। তালবাহানা করে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের মতো দুই বছর ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছেন। এসব তালবাহানা চলবে না, নির্বাচন দিতে হবে, দিতে হবে। আমাদের সমর্থন আছে। তারপরও কেন শেখ হাসিনার দোসর সচিবালয়ে বসে আছে। সত্য কথা বললেই বলবেন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমরা তাড়াহুড়া করছি। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, ক্ষমতায় আমরা বেশ কয়েকবার গিয়েছি। দেশের জনগণের অধিকারের জন্য আমরা বলছি, দ্রুত একটা নির্বাচনের দরকার। তাই বারবার নির্বাচনের কথা বলছি। নির্বাচন বিলম্বিত করতে দিল্লিতে বসে থাকা শেখ হাসিনা আবার উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশে আগুন জ্বালাবে, এটা হতে দেওয়া যাবে না।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক ও তৃণমূল নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি মফিজুর রহমান লিটন বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হলেও তার দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। দেশকে অস্থিতিশীল করতে তারা নানান ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং দেশকে স্থিতিশীল করতে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের বিকল্প নেই। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, কোনো টালবাহানা করবেন না, অবিলম্বে নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দিন। গত ১৬-১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত মানুষ এখন ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে রয়েছে।
নাগরিক সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনুর রশিদ, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম, কৃষক দলের সহ-সভাপতি আ ন ম খলিলুর রহমান (ভিপি ইব্রাহিম), তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মৎস্যজীবী দলের সাবেক সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী, জাতীয়তাবাদী চালক দলের সভাপতি জসিম উদ্দিন কবির, কর্মজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন সরদার প্রমুখ।
মন্তব্য করুন