বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা সিদ্ধান্ত নেব না যে, কোন পার্টি নিষিদ্ধ হবে, কোন পার্টি কাজ করবে; আর কোন পার্টি কাজ করবে না। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে—কোন পার্টি থাকবে কি থাকবে না, কোন পার্টি নির্বাচন করবে কি করবে না।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকার ব্রিটিশ ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জেমস গোল্ডম্যান বৈঠক করেন।
জাতিসংঘের কমিটির দেওয়া মতামতে কোনো দল নিষিদ্ধ না করার যে অনুরোধ জানানো হয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি, জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্রের সকল নর্মস এবং কন্ডিশনের ওপর আস্থা রাখি, আমরা সেগুলো অতীতেও চর্চা করেছি। সেইভাবেই আমরা মনে করি, আমরা সিদ্ধান্ত নেব না—কোন পার্টি নিষিদ্ধ হবে, কোন পার্টি কাজ করবে, কোন পার্টি কাজ করবে না। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কোন পার্টি থাকবে কি থাকবে না, কোন পার্টি নির্বাচন করবে কি করবে না।
বিএনপি নির্বাহী আদেশে কোনো দল নিষিদ্ধের পক্ষে কি না—জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব বলেন, এই বিষয়টা তো পরিষ্কার করে বলেছি, জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা পক্ষে থাকা না থাকা ইমমেটেরিয়াল, জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।
জামায়াতের নির্বাচন কমিশনে সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন চাওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আনুপাতিক হারে নির্বাচনের ঘোরবিরোধী, অত্যন্ত জোরালোভাবে বিরোধী। আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থাকে আমরা সমর্থন করব না। কারণ এখানকার মানুষ এটাতে অভ্যস্ত না।
জামায়াতের জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাওয়া নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এটার সঙ্গেও আমরা একমত নই। এগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় দেশকে আরও ভঙ্গুর অবস্থায় নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। যত দ্রুত জাতীয় নির্বাচন হবে ততই রাজনীতি সহজ হবে। বাংলাদেশের মানুষ একটা স্থিতিশীলতার মধ্যে আসবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আয়নাঘরের পরিদর্শন বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি এই বিষয়টাকে ভিন্নভাবে দেখি। গুম করা, হত্যা করা এটাতে কোনো দলের কথা আমি বলতে চাই না। এখানে বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষকে গুম করা হয়েছে। এই কথাগুলো আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি। যখন আলজাজিরায় প্রথম রিপোর্ট করা হয়, তখনো সরকার সম্পূর্ণভাবে এটিকে ডিনাই করেছে। কিন্তু প্রথম থেকেই এইভাবে চলে আসছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন নিয়ে তিনি বলেন, আমরা স্বস্তি প্রকাশ করছি যে, সত্য ঘটনাই উদ্ঘাটন হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে—জাতিসংঘ যখন বলে তখন আমরা বিশ্বাস করি; যখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলো বলি, অনেকেই বিশ্বাস করতে চায় না। আমরা ধন্যবাদ জানাব যে, জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ কমিটি এসেছেন, তারা রিপোর্টটা সঠিকভাবে করেছেন। সে জন্য ধন্যবাদ জানাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশেই এসব ঘটনা হয়েছে। যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার নির্দেশেই হয়েছে। যত মানবাধিকার লঙ্ঘন, তার নির্দেশেই হয়েছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেওয়া, ইনস্টিটিউশনগুলো ধ্বংস করে দেওয়া; এসব তার নির্দেশেই হয়েছে। এককথায় সেগুলো রিপোর্টে উঠে এসেছে। এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, হাসিনা একজন ফ্যাসিস্ট, তিনি গণহত্যা করেছেন, মানুষের ওপর নির্যাতন করেছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আজকে চাইব ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে ফেরত দেবে। তাকে এবং তার সঙ্গে যারা ছিল তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ, আমাদের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক এবং কবে নির্বাচন হচ্ছে এসব বিষয়ে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিশেষ সহযোগী উপদেষ্টা কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ।
মন্তব্য করুন