দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করেন বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
তারা বলেন, ঐকমত্যের ক্ষেত্রে ১৭ কোটি মানুষের কাছে একই মত পাওয়া সম্ভব নয়, যাওয়াও সম্ভব নয়। যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেই জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হওয়া সম্ভব। কারণ, সরকার জাতীয় ঐকমত্যের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেই যাবে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বিজয়নগরের একটি হোটেলে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘সংকট থেকে মুক্তি পেতে রাজনৈতিক ঐকমত্যের বিকল্প নেই’-শীর্ষক আলোচনা সভা ও চা-চক্রে এসব কথা বলেন নেতারা।
আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম বৈঠক করবে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এ বৈঠক শুরু হবে। ওই বৈঠককে সামনে রেখে এ আলোচনা সভা ও চা-চক্র অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শপথ নিয়েছে। তাদের মেয়াদ কত, সেটা দেওয়া নেই।
তিনি আরও বলেন, নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিজেদের যতই নিরপেক্ষ বলুক না কেন- সেটি কিন্তু ঠুঁটো জগন্নাথ। তবে আমরা বিশ্বাস করি, এ অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু হবে।
বিএনপির এ নীতিনির্ধারক বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই-সংগ্রাম করেছে, তাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য করতে হবে। কাউকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। সংবিধান নিয়ে বেশি বিরোধ নেই। তবে ’৭১-এর ইতিহাস আর ’২৪-এর ইতিহাস একটির সঙ্গে আরেকটির তুলনা করা ঠিক হবে না। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, গণ-আন্দোলনের পর একটা নির্বাচন দিলে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসে। এবারের আন্দোলন কিন্তু ভিন্ন, আমরা সবাই নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ’২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আলো দেখেছি।
তিনি বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরকারপ্রধান হিসেবে পেয়ে আমরা গর্বিত। কিন্তু এখন অন্তর্বর্তী সরকারের পথচলা ভিন্ন দেখছি। ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই সরকারের উচিত ছিল নির্বাচনমুখী হওয়া। শেখ হাসিনা তো ১৫ বছরে সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। তার পতনের পর কেউ আগের মতো দেশ চালাবে, এটা ভাবা যায় না। আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হলে জাতীয় সরকার গঠন করে দেশ চালাব। যত সমস্যার একমাত্র সমাধান নির্বাচন।
সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ৫ আগস্টের পর অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সেই সঙ্গে চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ঐকমত্যের বিকল্প নেই। ঐকমত্যের মাধ্যমে সব সম্ভব। জাতীয় ঐকমত্যের জন্য কমিশন গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড মুহাম্মদ ইউনূস।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশে সংকট আছে, এ বিষয়ে দ্বিমত নেই। নানা স্বার্থে আমাদের নানা মত আছে। তবে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মানুষের অধিকারের প্রশ্নে কোনো দ্বিমত নেই। এ ক্ষেত্রে আমরা ঐক্যবদ্ধ।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ’৭২ এর সংবিধানের হাত ধরে আওয়ামী লীগ বারবার ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিল। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষের নতুন স্বপ্ন তৈরি হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার যন্ত্র ’৭২-এর সংবিধান পুরোপুরি বাতিল করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে মানুষের অধিকারের আন্দোলন সামনে রেখে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে। তাই বলে বাধা দেওয়া যাবে না।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, জাতীয় নাগরিক কমিটির আরিফুল ইসলাম আদীব প্রমুখ।
মন্তব্য করুন