বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন, জামায়াত আমিরের স্ট্যাটাস

জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমান। ফাইল ছবি
জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমান। ফাইল ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচএসিএইচআর)। এ প্রতিবেদনকে অভিনন্দন জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাতে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে এ অভিনন্দন জানান জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ফ্যাক্টফাইন্ডিং মিশন বাংলাদেশে ’২৪-এর গণহত্যার রিপোর্ট আজ প্রকাশ করেছে। খুনি এবং খুনিদের মাস্টারমাইন্ডদের তথ্য এবং পরিচয় জাতিসংঘ বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছে। এ রিপোর্টকে আমরা অভিনন্দন জানাই।

জামায়াত আমির লেখেন, মজলুমের পক্ষে নয় বরঞ্চ মজলুম বিষয়ে জাতিসংঘের এই রিপোর্ট গণহত্যার দলিল হয়ে থাকবে। সময়ের দাবি, গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার আয়নাঘর পরিদর্শন নিয়ে তিনি বলেন, আজ প্রধান উপদেষ্টা গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট সরকারের আয়নাঘর পরিদর্শন করেছেন। জাতির সামনে ফ্যাসিস্টদের পাশবিক লালসা ও প্রতিহিংসার দলিল হয়ে থাকবে আয়নাঘর। কার্যত এটি ছিল আওয়ামী বাকশালীদের টর্চার সেল।

সবশেষ ডা. শফিকুর রহমান লেখেন, গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তিকাল করেছেন আবুল কাসেম (২০)। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

এ সময় হত্যাকারীদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত দাবি জানান তিনি।

এর আগে, বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া আন্দোলনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। এ বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, আন্দোলনে নৃশংসতা ছিল সাবেক সরকারের একটি পরিকল্পিত ও সমন্বিত কৌশল, যা ছাত্র-জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল।

তিনি বলেন, বিক্ষোভ দমন করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে ব্যাপক গ্রেপ্তার ও আটক এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা যে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, তা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং লক্ষ্যভিত্তিক হত্যাকাণ্ডের এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর এবং যা আন্তর্জাতিক অপরাধও গঠন করতে পারে। জাতীয় নিরাময় এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য দায়বদ্ধতা এবং ন্যায়বিচার অপরিহার্য।

বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত মৃত্যুর তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুমান করা হয়েছে যে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ ছিল শিশু। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে যে তাদের ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনকারী উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত থেকে, কিন্তু এর পেছনে ছিল ধ্বংসাত্মক ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি এবং প্রশাসন থেকে সৃষ্ট বিস্তৃত ক্ষোভ, যা অর্থনৈতিক বৈষম্যের সৃষ্টি করেছিল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্ষমতায় থাকার জন্য সাবেক সরকার ক্রমাগত সহিংস পন্থা ব্যবহার করে এই বিক্ষোভগুলো দমনে পদ্ধতিগতভাবে চেষ্টা করেছিল।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় গত সেপ্টেম্বরে একটি দল পাঠায়। যে দলের সদস্য মানবাধিকার অনুসন্ধানকারী, একজন ফরেনসিক চিকিৎসক এবং একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ছিলেন, যাতে প্রাণঘাতী ঘটনাগুলোর বিষয়ে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তথ্য অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার তদন্তের সঙ্গে ব্যাপক সহযোগিতা প্রদর্শন করেছে, অনুরোধকৃত প্রবেশাধিকারের অনুমতি দিয়েছে এবং যথেষ্ট নথিপত্র সরবরাহ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, যারা সরাসরি বিক্ষোভ পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বর্ণনা করেছে যে কীভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার বিভিন্ন কর্মকর্তা একাধিক বড় অভিযানের নির্দেশনা দেন ও তদারকি করেন। সে মোতাবেক নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যা করেছিল বা নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করেছিল।

এতে দেখা গেছে যে নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এবং অবৈধভাবে বিক্ষোভকারীদের হত্যা বা পঙ্গু করার সঙ্গে জড়িত ছিল। এর মধ্যে এমন ঘটনাও ছিল, যেখানে লোকদের খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছিল। হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম পথ হলো একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আন্দোলনের সময় সংঘটিত ভয়াবহ অন্যায়গুলোর সত্য উন্মোচন ও নিরাময় করা এবং জবাবদিহির মুখোমুখি হওয়া। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতার প্রতিকার ও পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটতে পারে, তা নিশ্চিত করা।’

ভলকার তুর্ক বলেন, আমার কার্যালয় এই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় জবাবদিহি এবং সংস্কারপ্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আয়নাঘরের সেই চেয়ারের অভিজ্ঞতা জানালেন রফিকুল ইসলাম মাদানি

পুলিশ লাইন্স স্কুল চ্যাম্পিয়ন

জাতীয় পর্বে কাবাডির মহাযজ্ঞ

বিএফএসএফ বিপিএল অ্যাওয়ার্ড প্রদান

আয়নাঘরে নিজের সেল দেখিয়ে দুঃসহ বর্ণনা দিলেন ব্যারিস্টার আরমান

বিএনপি নেতার অফিস থেকে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

রাজেন্দ্র কলেজে ‘এ এফ মুজিবুর রহমান স্বর্ণপদক’ প্রদান

খুমেকে মিলল ব্যক্তিগত প্যাথলোজি, দেওয়া হতো ‘ভুয়া রিপোর্ট’ 

দেশ গড়তে জাতীয়তাবাদী আদর্শের সৈনিকদের প্রস্তুত হতে হবে : জুয়েল

জাতিসংঘের প্রতিবেদন / আন্দোলনকারী নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নও চালিয়েছে আ.লীগ

১০

গাজীপুরে কাশেম নিহতের ঘটনায় রাবিতে গায়েবানা জানাজা ও খাটিয়া মিছিল

১১

জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন, জামায়াত আমিরের স্ট্যাটাস

১২

স্বপ্নপুরী থেকে উদ্ধার ৫ ভালুক গাজীপুর সাফারি পার্কে

১৩

‘প্রশাসনের রদবদলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইলে জনগণ মেনে নেবে না’

১৪

স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সঙ্গে ডব়্প-এর তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনবিষয়ক আলোচনা সভা

১৫

ময়মনসিংহে ছাত্রলীগ নেতা টিটু গ্রেপ্তার

১৬

এবার কাঠবাহী বোট আটকে দিল আরাকান আর্মি

১৭

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল

১৮

আরব আমিরাতের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

১৯

গণতন্ত্রের কথা বললেই আয়নাঘরে ঢুকানো হতো : লায়ন ফারুক

২০
X