দেশে জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত সরকার ছাড়া গণতন্ত্র ব্যর্থ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, কেউ যদি জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত সরকার গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে গণতন্ত্র গ্রহণ করতে ব্যর্থ হবে। সে জন্য আমরা নির্বাচনের কথা বলেছি। গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব করেন।
দুদু বলেন, দেশে একটা ঐতিহাসিক পরিবর্তন হয়েছে। ফ্যাসিবাদের গ্রাস থেকে জাতি মুক্তি পেয়েছে। এ ব্যাপারে যেসব ছাত্র জনতা অকুণ্ঠচিত্তে নিঃস্বার্থভাবে বুলেট বুকে ধারণ করেছে, জীবনকে উৎসর্গ করেছে আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের জন্য প্রার্থনা করি।
তিনি আরও বলেন, এত বড় একটা পরিবর্তনের পরেও বাংলাদেশের মানুষ আশায় বুকে বেঁধেছিল, তাদের জীবন ধারনের জন্য অন্ততপক্ষে বিগত সরকারের আমলের তুলনায় এবার অনেক ভালো থাকবে। কিন্তু, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুরুতেই দ্রব্যমূল্যের দাম একটু কমের দিকে গেলেও পরবর্তীতে দাম বেড়ে যায়। মাঠ পর্যায়ের যে কৃষকরা সঠিক দাম পাওয়ার প্রত্যাশা করেছে, সেটির ধারের কাছেও তারা যেতে পারেনি। এ দেশের কৃষক শ্রমিক সবসময় অবহেলিত থেকেছে এবং নির্মমতার শিকার হয়েছে।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘বিএনপি গরিব মানুষের দল। বিএনপি খেটে খাওয়া মানুষের দল। কামার, কুমার, কুলি, মজুর ঠিক তেমনি মধ্যবিত্তের দল। সব শ্রেণীর মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে বিএনপি। সেই বিএনপি আজকে এ সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানালো কিন্তু সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ৬ মাস চলে যাওয়ার পরেও ব্যর্থ হয়েছে বলে সবাই মনে করছে। এ সরকার বাজার দর এখনও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। দেশের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, আমরা শুরুতেই বলেছিলাম, সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেন। বর্তমান সরকার তার সমর্থনকে কাজে লাগানোর যে দক্ষতার দরকার ছিল, সেটা তারা করতে পারেনি। কিন্তু এ সরকারকে এখন পর্যন্ত আমরা সমর্থন করি। এ সরকারের সমালোচনা করি সঠিক পথে থাকার জন্য। হয় তো তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসন্তুষ্ট হতে পারে, কিন্তু চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো ছাড়া কোনো পথ নেই। কারণ, তারা যদি ব্যর্থ হয় তাহলে এর অংশীদার আমাদেরও হতে হবে। সরকারের সমালোচনার কারণ হলো, তারা যাতে সফল হয়। এ সরকারকে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে চাই না।
দুদু বলেন, দেশের মধ্যে এক ধরনের নির্বাচনের আমেজ তৈরি হতে যাচ্ছে। সেই জায়গায় কিছু কিছু রাজনৈতিক দল প্রয়োজনীয় সংস্কার নয়, সংস্কার করে নির্বাচনের কথা বলছেন। বলতেই পারে! সকল রাজনৈতিক দলতো স্বাধীন। সকল রাজনৈতিক দলের নিজস্ব কর্মসূচি আছে। তারা যদি মনে করে যে, এই সরকারের সংস্কার দরকার, সেই কথা তারা বলতে পারে। আমার কাছে মনে হয়, নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিয়ে সংস্কার করতে পারে। জনগণের ম্যান্ডেডপ্রাপ্ত সরকার যদি কেউ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে গণতন্ত্র গ্রহণ করতে তারা ব্যর্থ হবে। সে জন্য আমরা নির্বাচনের কথা বলেছি। গণতন্ত্র উত্তরণের জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, যদি নির্বাচন পরিত্যাগ করে, নির্বাচন গ্রহণ না করে, তাহলে তো তিন বছর, চার বছর, পাঁচ বছর পরপর গণঅভ্যুত্থান করতে হবে। আর অন্য আরেক অভ্যুত্থান আছে, যেটা কোনো রাজনৈতিক দল একসেপ্ট করতে পারে না। সেটা হলো সামরিক অভ্যুত্থান। এখন সভ্য পথ হচ্ছে নির্বাচন। সেজন্য আমরা নির্বাচনের কথা বলেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যারা নির্বাচনের বিষয় নিয়ে এখন পর্যন্ত একটু দ্বিধা দ্বন্দ্বে আছেন, নির্বাচনের স্রোতে আসেন, জনগণের পাশে দাঁড়ান। আমার বিশ্বাস জনগণ হয় তো আপনাকেও গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু, ভয়ভীতি সন্দেহ রেখে যদি সময় বিলম্বিত করেন; তবে শয়তানের বাচ্চা একটাতো পার্শ্ববর্তী দেশে আছে। সে আরও শক্তি পাবে, আরও বেশি উৎসাহিত হবে। তাকে উৎসাহিত করা ঠিক হবে না। শয়তানকে সময় মত শেষ না করতে পারলে, অর্থাৎ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যদি জনগণের মেন্ডেটপ্রাপ্ত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারি তাহলে শয়তানরা তাদের ভূমিকায় আরও এগিয়ে যেতে পারে।
সংগঠনের উপদেষ্টা এম নাজমুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সভাপতি সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহ তথ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, মৎস্যজীবী দল নেতা ইসমাইল হোসেন সিরাজী, জাতীয়তাবাদী চালক দলের সভাপতি জসিম উদ্দিন কবিরসহ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন