আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, গণহত্যার বিচার ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদ কোনো আপস করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগরে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে রাশেদ খাঁন বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে একেরপর এক আন্দোলন সরকারের স্থিতিশীলতার পথে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি দেশের বিভিন্ন স্থানে বুলডোজার দিয়ে ধানমন্ডি ৩২-সহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। যেখানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, সেখানে কোনো আওয়ামী লীগ নেই। অথচ সচিবালয়, পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ প্রশাসন ও সরকারের সব সেক্টরে যেসব আওয়ামী সুবিধাভোগী রয়েছে, তারা বহাল তবিয়তে। গণঅভ্যুত্থানের ৬ মাস পরেও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনা সরকারের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ ও সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ফেলানোর শামিল। এতে প্রমাণিত হয় যে, হয় সরকারের প্রত্যক্ষ ইন্ধন/সহযোগিতায় এসব ঘটনা সংগঠিত হয়েছে, অথবা সরকার এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন জনগণের মনে প্রশ্ন, সিটি করপোরেশন বা সরকারি বুলডোজার কারা সরবরাহ করল? এই ঘটনার কারণে বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে নেতিবাচক বার্তা গেছে। তারা ভাববে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার বাংলাদেশকে এখনো স্থিতিশীল করতে পারেনি। এতে বিদেশি বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে
গণঅধিকার পরিষদের এ নেতা আরও বলেন, গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হওয়ার পরে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো সেনাবাহিনীর কাছে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের অবস্থান সম্পর্কে জানি না। বড় বড় ডেভিলরা তো পালিয়ে গেছে। ওবায়দুল কাদের ৩ মাস নিরাপদে অবস্থান করার পরেও কেন তাকে গ্রেপ্তার করা যায় নি? আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড ও শেখ পরিবারের সদস্যরা কাদের সহায়তায় দেশ ছেড়েছে? অন্তর্বর্তী সরকার কি এসব তদন্তে কোন কমিটি গঠন করেছে? না করার রহস্য সম্পর্কে আমরা জানতে চাই। অপারেশন ডেভিল হান্টকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু এর মাধ্যমে যেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ ও নিরীহ কোন কর্মীসমর্থক হয়রানি না করা হয়। শুধুমাত্র অপরাধীরাই যেন, অপারেশন ডেভিল হান্টের অন্তর্ভুক্ত হয়। অন্যথায় গণগ্রেপ্তার ও গণহয়রানি শুরু হলে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এই সুযোগে মামলাবাজি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দ্রুব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বরং শতাধিক পণ্যের উপর ভ্যাট ট্যাক্স বাড়িয়ে জনগণের পেটে লাথি মারা হয়েছে। সরকার যতোই জনসমর্থন নিয়ে গঠিত হোক না কেন, নিত্যপণ্যের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে ব্যর্থ হলে জনসমর্থন জনক্ষোভে পরিণত হবে। সামনে পবিত্র মাহে রমজান। মাহে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম, লোডশেডিং ও গ্যাসের সংকটের দিকে সরকারকে গভীর মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান করছি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গণঅধিকার পরিষদ শুরু থেকেই গণহত্যার বিচারে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গণঅধিকার পরিষদ, ঢাকা মহানগর বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এ ছাড়া জনগণকে গণহত্যার বিচারে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে দেশব্যাপী আগামী ১২ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করা হবে। এ ছাড়া ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলায় জেলায় ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে।
এসময় গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে ৫ দফা তুলে ধরা হয়-
দফাগুলো হলো-
১. জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিগত ১৬ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আহত, ক্ষতিগ্রস্ত ও শহীদদের সঠিক তালিকা তৈরি, ক্ষতিপূরণ এবং যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
২. জুলাই গণহত্যায় জড়িত বিদেশে পলাতক গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনাসহ সকলকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের রাজনীতি নিষিদ্ধের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৩. ফ্যাসিবাদের আমলে উন্নয়নের নামে লুটপাট, অর্থ পাচারে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করা।
৪. জনআকাঙ্ক্ষার নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাষ্ট্র সংস্কার ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে কার্যকর সংস্কার নিশ্চিতে অভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা।
৫. বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার রেজিমে সংগঠিত গুম-খুন ও ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ভুয়া নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- গণঅধিকার পরিষদের সহসভাপতি ও উচ্চতর পরিষদ সদস্য ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, হাবিবুর রহমান রিজু, সহ সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ জিলু খান, আবদুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, যুব ক্রীড়া সম্পাদক ইলিয়াস মিয়া, যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন