কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৫৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শেখ হাসিনার বিচার না হলে মুক্তি আসবে না : বুলু

বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের (এমএল) আলোচনা সভা। ছবি : কালবেলা
বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের (এমএল) আলোচনা সভা। ছবি : কালবেলা

বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং তার দোসরদের বিচার না হলে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আসবে না।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের (এমএল) এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, শেখ হাসিনার আহ্বানের কারণে বাংলাদেশে একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের উচিত হবে আজকে এই নৈরাজ্য সৃষ্টি যারা করছেন এবং যারা এই নৈরাজ্যের সঙ্গে জড়িত আছেন এদের থামানোর চেষ্টা করা। এদের থামাতে হবে। নইলে আমি মনে করি এটা দেশের জন্য অশনি সংকেত। এ অশনি সংকেত ও এ বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের।

এ ছাড়া তিনি বলেন, শেখ হাসিনা অতীতে যে মানুষ হত্যা করেছেন ২০ হাজারের অধিক, আবার নতুন করে ওনি যে আহ্বান জানিয়ে মানুষকে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন সেজন্য নতুন করে আরেকটি আদালত গঠন করা উচিত। শেখ হাসিনার বিচার এবং তার দোসরদের বিচার না হলে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আসবে না।

তিনি আরও বলেন, ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশকে অস্থিতিশীল করতে যে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন তার জন্য ভারতীয় সরকারকেও জবাবদিহিতা করতে হবে। কারণ ভারতে বসে একজন খুনি কিভাবে বাংলাদেশে আরও খুনের বন্যা বইয়ে দেওয়ার জন্য এরকম বক্তব্য রাখতে পারেন- এটি আজকে প্রশ্ন।

দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি জানিয়ে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই- ন্যূনতম সংস্কার করে জাতির কোনো মতামত থাকে, আমরা সেটা মেনে নিতে চাই। কিন্তু সংস্কারের নামে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পাঁয়তারা যেটা জাতি বরদাশত করবে না। দেশের মানুষের দাবি হচ্ছে, অবিলম্বে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। আপনারা সেই রাস্তাটি তৈরি করে দিন। সময়ক্ষেপণ না করে অতি শিগগিরই নির্বাচনের রোডম্যাপ দিন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারের ভেতরে সমন্বয়হীনতা লক্ষ করেছি। সম্প্রতি দেশে যে পরিস্থিতিটা তৈরি হয়েছে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তিনি ছাত্রলীগের ভেরিফাইড ফেসবুকে যুক্ত হয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি উসকানিমূলক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ছয় মাস পর হলেও আমরা দেখলাম হাসিনার কণ্ঠে অনুশোচনা নেই গণহত্যার জন্য। ১৬ বছরের অপরাধের জন্য তিনি কোনো ক্ষমা প্রার্থনা করেননি, তিনি কোনো দায়-দায়িত্ব স্বীকার করেননি।

তার কোনো অনুশোচনা, তার কোনো উপলব্ধি- লেশমাত্র তার বক্তব্যের মধ্যে দেখা যায়নি। তিনি (শেখ হাসিনা) মূলত ভারতের কোলে বসে দিল্লির শাসকদের ছত্রছায়ায় থেকে গত ছয় মাসের মতো পরশুদিন নতুন করে আরেকটা উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ এটা গ্রহণ করেনি সত্য। কিন্তু হাসিনার উসকানিতে পা দিয়ে গত ৩২ ঘণ্টায় যেসব ঘটনাবলী সংঘটিত হয়েছে, সেগুলো অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, অনভিপ্রেত ঘটনা।

তিনি আরও বলেন, ছয় মাস পার হওয়ার পরে সরকার কিভাবে এসব ঘটনা ঘটতে দিল? আমরা খুব স্পষ্ট করে মনে করি, জনগণের মধ্যে এ ধারণা তৈরি হয়েছে- তবে কি সরকার দেশ চালাতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি সরকারের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই, আমাদের এলিটফোর্স কি সরকারের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। তাহলে এখানে কি যা কিছু করা যায়? ৩২নং ধানমন্ডি শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি।

মুক্তিযুদ্ধের আগে, মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তীতে এ বাড়ির সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশ ও তার ইতিহাসের, আমাদের রাষ্ট্র গঠনের একটা সম্পর্ক আছে এবং সেটা যেভাবে সরকারের নাকের ডগায় এবং যেভাবে প্রায় দুই দিন ধরে সেটাকে হামলা-আক্রমণ-ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হলো এটা কি সরকারের জন্য ভালো হলো? এটা কি দেশের জন্য ভালো হলো। মানুষ কি এটা গ্রহণ করেছে? আন্তর্জাতিক পরিসরে মানুষ কি এটাকে ভালোভাবে নিয়েছে?

সাইফুল হক বলেন, আমাদের অসাধারণ গণঅভ্যুত্থানকে আওয়ামী লীগ এবং ভারত চেষ্টা করছে জঙ্গিবাদী মৌলবাদী উত্থান হিসেবে দেখানোর জন্য। গত দুই দিন ধরে যে ঘটনা চলছে, বহির্বিশ্বে নতুন করে আমাদের গণঅভ্যুত্থানকে ট্যাগ করে এটাকে মৌলবাদী অভ্যুত্থান হিসেবে দেখানোর জন্য আওয়ামী লীগের যে পাঁয়তারা, নতুন করে সেখানে রসদ জোগানোর তারা ব্যবস্থা করছে।

সারা দেশব্যাপী হামলা-আক্রমণ-ভাঙচুর হয়েছে। দেশে একধরনের নৈরাজ্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর দায় অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। ছয় মাস পরে যে কোনো স্থাপনা, জান-মালের নিরাপত্তা, বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য এসবের নিরাপত্তা এটা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব, তার প্রশাসনিক দায়িত্ব, রাজনৈতিক দায়িত্ব।

এছাড়াও তিনি বলেন, গতকালকে এসব ঘটনার বিষয়ে সরকার একটা বিবৃতি দিয়েছে। ভালো কথা। কিন্তু সরকারের ব্যর্থতার ব্যাপারে সেই বিবৃতিতে কোনো বক্তব্য নেই, কোনো অনুশোচনা নাই। সরকারের ব্যাখ্যাটা যথেষ্ট নয়। তাহলে এরকম একটা পরিস্থিতি কি চলতেই থাকবে?

জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এমএলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হয়। প্রথম পর্বে ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং দ্বিতীয় পর্বে কর্ম অধিবেশন। সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক হারুন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক খান মো. নুরে আলমের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের মহাসচিব হারুন আল রশিদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রস্তাব বাস্তবায়নে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প

ববির ভিসি-প্রোভিসির পাল্টাপাল্টি নোটিশ, দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

হাইব্রিড নেতাকর্মী বিএনপির নামে চাঁদাবাজি করছে : মজনু

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন / বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ফের কূটনৈতিক উত্তেজনা

প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালা সংস্কার কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন স্যাম জাহান

অন্তর্বর্তী সরকারকে টিআইবির বার্তা

পুলিশকে সঠিক ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিন : আবু নাসের

আতিফের কন্ঠে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অফিসিয়াল গান প্রকাশ

দ্য প্রিন্টে নিবন্ধ / দালাই লামা নন শেখ হাসিনা, ভারতের উচিত তাকে সমর্থন না দেওয়া

সাদপন্থিরা ইজতেমার ময়দান বুঝে পাচ্ছে শনিবার

১০

রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই : গয়েশ্বর

১১

শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সোহেল

১২

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষ, নিহত ৩

১৩

ফাইনালে চট্টগ্রাম কিংসের রানের পাহাড়

১৪

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০০ কোটি টাকা অনুদান দিলেন বাংলাদেশি

১৫

বিবিসি বাংলার সমালোচনা করে ক্ষমা চাইলেন প্রেস সচিব

১৬

মুক্তিপণে ছাড়া পেলেন অপহৃত ৫ যুবক

১৭

শনিবার ৩০০ ফিটে যান চলাচলে ডিএমপির নির্দেশনা

১৮

সবাইকে সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে : মামুনুল হক

১৯

‘দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হলে গণতন্ত্রের পথ উত্তরণে বাধা আসতে পারে’

২০
X