ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। দেশে থাকা কর্মীদের মনোবল চাঙা করার জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে নানা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। ফলে বলা চলে কার্যত ভারতে বসেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন দলটির নেতারা।
ভারতে থাকার বিষয়টিকে ‘সাময়িকভাবে আত্মগোপনে’ থাকা হিসেবেই দেখছেন দলটির নেতারা। তারা বলছেন, ভারতে বসেই দল চালানোর চেষ্টা চালাতে হচ্ছে।
কতজন আওয়ামী লীগ নেতা ভারতে রয়েছেন? কীভাবে তারা যোগাযোগ করছেন নিজেদের মধ্যে? এসব বিষয়ে শুক্রবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। কে কোথায় আছেন?
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ ভারতে পালিয়ে গেছেন। এটা এখন একটা ‘ওপেন সিক্রেট’ অর্থাৎ সবারই জানা – অথচ কেউ তা খোলাখুলি বলেন না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম জানান, পালিয়ে নয়, কৌশলগত কারণে তারা সাময়িকভাবে আত্মগোপনে আছেন।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের একটি বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া বাসা ভাড়া নিয়ে অনেক নেতাই কলকাতা, উত্তরবঙ্গ, দিল্লি, ত্রিপুরায় আছেন। দলটির সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অন্তত ২০০ জন পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছেন। যার মধ্যে সাবেক সরকারের শীর্ষ পদাধিকারী, মন্ত্রীরা এবং অন্তত ৭০ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। তবে ইউরোপসহ আরও কয়েকটি দেশে আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে গেছেন।
এসব নেতাদের মধ্যে কেউ ০৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরে ভারতে গিয়েছেন আবার কেউ কয়েক মাস পরে গিয়েছেন।
বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের অনেক জেলা সভাপতি-সম্পাদক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা।
ভারতে কেন আশ্রয়?
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা ০৫ আগস্ট থেকেই ভারতে রয়েছেন। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিমান তাদের নিয়ে দিল্লির উপকণ্ঠে হিন্দোন বিমানঘাঁটিতে পৌঁছে দেয়।
শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, নিরুপায় হয়ে ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছেন শেখ হাসিনা। একটা চক্রান্তকারী, অশুভ শক্তি তাকে ভারতে যেতে বাধ্য করে। আবার ভারতই আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী এবং বন্ধু রাষ্ট্র। খুব কম সময়ে আমাদের দেশ থেকে এখানে এসে বসবাস করা যায়।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়েও লাখো মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে গিয়েছিলেন। ভারত অনেকদিন সেসব মানুষের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। সে জন্য রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ ছাড়তে হলে ভারতই প্রথম পছন্দ।
শেখ হাসিনার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করেন নেতারা?
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হয়। তবে শেখ হাসিনার সঙ্গে কেউ দেখা করতে পেরেছেন কি না, সেটা জানা যায়নি।
একজন নেতা জানান, অ্যাপসের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে মেসেজ দিয়ে রাখলে তিনি সুবিধামতো উত্তর দেন। আবার বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন তিনি।
যেভাবে নেতাকর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ হয়
ভারত এবং অন্য দেশে যেসব নেতা পালিয়ে গেছেন, তারা সাধারণত হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কলকাতা বা তার আশপাশে যারা আছেন তাদের মধ্যে নিয়মিতই দেখা সাক্ষাৎ হয়।
আত্মগোপনে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ বলেন, হতে পারে আমরা আন্ডারগ্রাউন্ড আছি, ডিজিটাল মাধ্যমেই কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
মন্তব্য করুন