দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সরকারের অবিচারের শিকার হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, তার শূন্যতা কোনোদিন পূরণ হবে না। তিনি দুই দুইবারের এমপি ছিলেন। কিন্তু কারাভ্যন্তরে সেই ধরনের চিকিৎসা পেতেন না। তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল, আগেও বারডেম হাসপাতালে ৫টি রিং পড়ানো হয়েছিল।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সকালে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রুহের মাগফিরাত কামনায় এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
গত ১৪ আগস্ট রাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বিএসএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কারা হেফাজতে মারা যান।
মুজিবুর রহমান বলেন, নিয়মানুযায়ী আবারো হার্ট অ্যাটাকের পর তাকে সেই বারডেম হাসপাতালেই নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা না করে সময়ক্ষেপণ করা হয়। তার পরিবারের সদস্যদের ধারে কাছেও যেতে দেওয়া হয়নি। এমনকি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের দেখা করারই সুযোগ দেওয়া হয়নি। কতটা অমানবিক কাজ তারা করেছে। জটিল রোগী হলে হাসপাতালে সাধারণত মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। কিন্তু তার ব্যাপারে সেটা করা হয়নি। দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ক্ষেত্রেও অবহেলা করা হয়েছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত, যেন ভবিষ্যতে কোনো রোগীর ক্ষেত্রে এ রকম করা না হয়।
দোয়া মাহফিলে অনলাইনে দেশে-বিদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী, সুধী, শুভানুধ্যায়ীরা অংশগ্রহণ করেন।
জামায়াতের এ নেতা বলেন, সাঈদী আজীবন শাহাদাতের তামান্না লালন করতেন। তবে তিনি চেয়েছিলেন, তাফসিরের ময়দানে ফিরে আসতে এবং তাফসির করতে করতে মৃত্যুবরণ করতে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। তাকে নজিরবিহীনভাবে অমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। মৃত্যুর পর লাশের মালিক তো তার পরিবারের সদস্যরা, পুলিশ তো না। তার লাশটি স্ত্রীকে পর্যন্ত দেখতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ লাশ পিরোজপুর নিয়ে দ্রুত দাফনের জন্য চাপ দিয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক তিনি আজ আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি যেই কুরআনের জন্য আমৃত্যু কাজ করে গেছেন, আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে, যতদিন পর্যন্ত কুরআনের রাজ্য কায়েম না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন থামবে না।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আল্লামা সাঈদী অবিচার ও জুলুমের শিকার। মিথ্যা অভিযোগে তিনি ১৩ বছর কারাগারে বন্দি ছিলেন। তাকে বিনা চিকিৎসায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এই অবিচারের বিচার আমরা আল্লাহর কাছে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহতায়ালা হয়তো দুনিয়াতে বিচার করবেন, না হলে আখিরাতে জালেমের বিচার অবশ্যই হবে।
মাওলানা যাইনুল আবেদীন বলেন, যুগে যুগে আল্লাহতায়ালা ঈমানদারদের পরীক্ষা নিয়েছেন। সবাইকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। যারা এই পরীক্ষায় টিকে যাবেন, তারাই ঈমানদার। মাওলানা সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আমরা কুরআনের আন্দোলনে অবিচল থাকব, যতই বাধা আসুক না কেন।
সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন জাফরী বলেন, তার শূন্যতা আমি অনুভব করছি। তিনি পড়াশোনা করতেন। হিকমতের সঙ্গে দাওয়াতি কাজ করতেন। কে কী বলল, তার পরোয়া করতেন না। সত্যের পথে, ঈমানের পথে তিনি অবিচল থেকেছেন।
ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, কোনো লোভ-লালসা তাকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি। গ্রেপ্তারের পরও তার কাছে প্রলোভন এসেছিল, কিন্তু আদর্শের প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন। তিনি যা বলতে বাস্তবে তা আমল করতেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় দোয়া মাহফিলে অংশ নেন জামায়াতের প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা যাইনুল আবেদীন, সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন জাফরী, ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী ও মাসুদ সাঈদী, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আবদুস সবুর ফকির, অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি দেলওয়ার হোসাইন, কামাল হোসাইন, কর্মপরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিন, মাওলানা আবু ফাহিম, আবদুস সালাম, ড. মোবাররক হোসাইন, সৈয়দ ইবনে হোসাইন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন