গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার দেশকে স্থিতিশীল করতে পারেনি। তাই যত দ্রুত সম্ভব একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টায় শ্যামপুর থানা বিক্রমপুর প্লাজার সামনে অনুষ্ঠিত এক দোয়া ও জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ জনসভার আয়োজন করে গণঅধিকার পরিষদ মহানগর দক্ষিণের আওতাধীন শ্যামপুর থানা। ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুস্থতা কামনায়, নিহতদের স্মরণে এ দোয়া ও জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
জনসভায় নুরুল হক নুর বলেন, শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে সরকার যেন এমন কিছু না করে যাতে জনগণ এ সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। এ সরকারকে জনগণের পালস বুঝে কাজ করতে হবে। আমরা চাই সামনে যে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন হবে সেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবার ও আহতদের স্বজনরা অংশ নিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পর আওয়ামী লীগ সেই চেতনাকে বিক্রি করে দেশে গণহত্যা চালিয়েছিল, গত ১৬ বছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম করে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে- ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে পুঁজি করে নতুন করে ফ্যাসিবাদ কায়েম না হয়।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ গণআন্দোলনের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। সেখান থেকে তারা কর্মসূচি দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ কিংবা ফ্যাসিবাদের দোসর কাউকে রাজপথে মিছিল করতে দেখলে সবাই মিলে প্রতিহত করুন। যারা আওয়ামী লীগ কিংবা ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসন করার জন্য কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ জনগণের কথা চিন্তা করেনি, এ জুলাইয়ে দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগের বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। ভারতকে বলব, গণহত্যা মামলার আসামি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠান।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, শ্যামপুরের জনসভায় আহত যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের আক্ষেপ আমাদের ভাবাচ্ছে যে, সরকার ৬ মাসে কি করল? এখনো তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারল না, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের দেখছি না। গণহত্যার বিচার কি আওয়ামী লীগকে জেলের বাইরে রেখে হবে? এখনো পুলিশ-প্রশাসন-সরকারে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চলছে। গণহত্যার পরও সরকারের এ পুতুপুতু আচরণ দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছিলাম, জাতীয় সরকার গঠন করেন। কিন্তু করলেন একপাক্ষিক সরকার। এখন হযবরল অবস্থা। নিজেরা খেতে পারলেন না, মাখিয়ে নষ্ট করলেন। ৬ মাসের অর্জন, ব্যর্থতা ছাড়া আর কি? আবার প্রধান উপদেষ্টা নিজেই তার নিরপেক্ষতা নষ্ট করেছেন।
তিনি সবার, অথচ তিনি নতুন দলকে শুভকামনা জানাচ্ছেন। তার মানে কি তিনিই কিংস পার্টি গঠনের মূলে রয়েছেন? তিনি ২০০৭ সালে দল করে ব্যর্থ হয়েছেন। তারপরও আমরা তার ওপর আস্থা ভরসা রেখে তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে গ্রহণ করেছি যে, তিনি নিরপেক্ষ থেকে রাষ্ট্র মেরামত করবেন। কিন্তু সে জায়গাটা নষ্ট হলে রাষ্ট্র সংস্কার ব্যর্থ প্রজেক্ট হিসেবে পরিগণিত হবে।
এ ছাড়া তিনি বলেন, আমরা ছাত্রদের দল গঠনের শুভকামনা জানাই। কিন্তু কিংস পার্টি যাতে না হয়, সেদিকে তাদের খেয়াল রাখতে হবে। কারণ গণঅভ্যুত্থান সবার। এটাকে পুঁজি করে একক ফায়দা নেওয়ার সুযোগ নেই।
দলের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আ’লীগ ফেব্রুয়ারিতে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে, আমরা গণঅধিকার পরিষদ হুঁশিয়ারি দিচ্ছি গণহত্যাকারী দলের কোনো সদস্যকে কোথাও পাওয়া গেলে আমরা প্রতিহত করব। আমরা এ সরকারকে বলতে চাই- আ.লীগের নিবন্ধন বাতিল করুন, গণহত্যার বিচার করুন।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীন। সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ, কেন্দ্রীয় সদস্য শাহজাহান মিয়া, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম শাকিল, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি অর্নব হোসাইন, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি হিরণ মিয়া, গণঅধিকার পরিষদের নেতা বশির মিয়া, হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
মন্তব্য করুন