কুমিল্লায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জেলা ও মহানগর শাখার প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান বলেন, হেফাজত মুসলমানদের ঈমান আকীদা সংরক্ষণের সংগঠন। ইসলামের ওপর আঘাত এলে ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতাকে সাথে নিয়ে মোকাবিলা করব। তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছর আমরা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও জুলুমের শিকার। গুম-খুনের রাজত্ব কায়েম করে সারা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিডিআর হত্যা, ৫ মে শাপলা ও ২০২১ এবং ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি। তাদের এখনো নিষিদ্ধ না করায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদ একের পর এক প্রতিবিপ্লবের ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাচ্ছে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে আরও সংহত করে সফল করতে হলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো বিকল্প নেই।
এ সময় বক্তারা সরকারের কাছে দাবি জানান, সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করতে হবে। আল্লাহ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে। ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সব ধরনের হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
হেফাজত নেতারা বলেন, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। অবিলম্বে সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
প্রতিনিধি সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, হেফাজতে ইসলাম এ দেশের তৌহিদি জনতার আস্থার সংগঠন। এ সংগঠন সর্বদা ইসলামের কথা বলে। মানুষকে দীনের ওপর চলতে সহায়তা করে। তাই তারা হেফাজতে ইসলামের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সম্পর্কে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেন। হেফাজতে ইসলামকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে ইসলামবিরোধীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে জোরালো মতামত ব্যক্ত করেন।
জেলা সভাপতি আল্লামা নুরুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কুমিল্লা মহানগরের প্রধান উপদেষ্টা মাওলানা আবদুর রাজ্জাক কাসেমী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি বশির উল্লাহ, সহকারী মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, সহকারী মহাসচিব মুফতি মুশতাকুন্নবী কাসেমী ও সহকারী মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন। এছাড়া সহকারী অর্থসম্পাদক মাওলানা লোকমান মাজহারী, কুমিল্লা মহানগরের উপদেষ্টা মাওলানা মনির হোসাইন, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, কুমিল্লা জেলা সেক্রেটারি মুফতি আমজাদ হোসাইন, কুমিল্লা মহানগরের সেক্রেটারি মাওলানা মুনিরুল ইসলাম কাসেমী, বুড়িচং উপজেলার সেক্রেটারি মাওলানা আনিসুর রহমান আশরাফি উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি কুমিল্লা জেলা, মহানগর, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির বিপুল সংখ্যক নেতারা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
মন্তব্য করুন