কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৭ পিএম
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
আল জাজিরার প্রতিবেদন

আওয়ামী লীগ কি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই। সেদিন বিকেলে রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা ছাত্রনেতা আবু সাঈদ।

কিন্তু ঢাকায় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র দেখা যায়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে তখন আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা ও মন্ত্রী আবদুর রহমান তার অফিসে অনায়াসে বসে স্থানীয় এক কবির কবিতা পাঠ উপভোগ করছিলেন। সে দিনের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আবদুর রহমান চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে, তার ডান গালের ওপর মুষ্টি রেখে নীরবে শুনছেন। পাঠ শেষে তিনি হালকা হাসি দিয়ে মন্তব্য করেন, ‘দারুণ’। কিছুক্ষণ পর, একজন সহকারী যখন তাকে সাঈদের হত্যার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার খবর জানায়, তিনি বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘ও কিছু হবে না। নেত্রী সামলে নেবেন।’

বাংলাদেশজুড়ে যখন সহিংস পরিস্থিতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল, তখন একজন মন্ত্রীর এমন স্বাভাবিক আচরণ অনেকের কাছে আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রায় তিন সপ্তাহের মধ্যেই শেখ হাসিনার সরকার, যাকে কর্তৃত্ববাদী ও নৃশংস বলে অভিযুক্ত করা হয়, ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া এক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়। এ বিদ্রোহ ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে শেষ হয়। তাতে অন্তত ৮৩৪ জন নিহত হয় বলে সরকারি হিসাবে বলা হয়। আরও ২০ হাজার জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে।

এর মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের পর্দা নামে। পাঁচ মাস পরও আওয়ামী লীগ নিজেদের পুনর্গঠন করতে লড়াই করছে। দলের অভ্যন্তরে স্পষ্ট বিভাজন তৈরি হয়েছে– একদিকে ক্ষমাশীল না হওয়া প্রবীণ নেতারা, আর অন্যদিকে মধ্যম স্তরের নেতাকর্মীরা যারা মনে করেন দলকে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এই বিভাজন কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা-ই দলটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

তৃণমূল বনাম কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব : বিভক্ত দল

অনেক আওয়ামী লীগ নেতা এখনো দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ এফ এম বাহাউদ্দিন নাসিম ১৬ জানুয়ারি একটি অজানা স্থান থেকে আল জাজিরাকে ফোনে বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। এটা শিগগিরই প্রমাণিত হবে।’ তবে তিনি স্পষ্ট করেননি, তিনি কাকে অভিযুক্ত করছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এমন দাবি দলটির ব্যর্থতা স্বীকার করতে না পারা এবং জনগণের অসন্তোষ মোকাবিলায় অক্ষমতার পরিচায়ক।

এর ফলে দলটির তৃণমূল কর্মীরাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। তাদের অনেকেই এখন আত্মগোপনে আছেন বা হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে আইনি প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভীত। তারা আক্ষেপ করেন, দলটি জনগণের সঙ্গে সংযুক্ত একটি সংগঠন থেকে একতরফাভাবে শীর্ষ নেতৃত্বাধীন কাঠামোতে রূপান্তরিত হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। জনতার ঢল হাসিনার সরকারি বাসভবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে গণভবন থেকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (বিসিএল) একজন সিনিয়র স্থানীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল জাজিরাকে বলেন, ‘যখন এই নাটকীয় পালানোর দৃশ্য টিভিতে সম্প্রচারিত হচ্ছিল, তখন আমি এখনো খুলনার রাস্তায় কিছু কর্মীর সঙ্গে ছিলাম। আমি স্থানীয় সাংসদের কাছে ফোন করার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তার ফোন বন্ধ ছিল। তখনই আমি নিজেকে প্রতারিত মনে করেছি।’

একই বছরের ২৩ অক্টোবর নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিসিএলকে নিষিদ্ধ করে। খুলনার ওই প্রভাবশালী বিসিএল নেতা নিজের নিরাপত্তার জন্য পাশের জেলা গোপালগঞ্জে পালিয়ে যান। পরে ঢাকায় মিথ্যা পরিচয়ে অবস্থান নেন। সেই ছাত্রনেতা বলেন, ‘আমি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ফোন নম্বর- সবকিছু পরিবর্তন করেছি। বেঁচে থাকার জন্য আমি একটি ছোট ব্যবসা শুরু করেছি। দল আমাদের ছেড়ে দিয়েছে। আমি আর কখনো রাজনীতিতে ফিরে যাব না।’

দেশজুড়ে তৃণমূল কর্মীরা একই ধরনের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। অনেক সদস্য নীরব থাকলেও, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের সহকারী সম্পাদক সামিউল বশির সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে সরব হয়েছেন। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, কমিটেড কর্মীদের বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষা করা হয়েছে। ২০১৪ সালের পর থেকে সুবিধাবাদী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা তৃণমূল পর্যায়ের কাঠামো দখল করে নিয়ে এসেছে। এটি এই বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

দলের একটি প্রো-আওয়ামী লীগ ডাক্তারদের সংগঠনের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে একই ধরনের হতাশা ব্যক্ত করেছেন। ‘দলের যারা মুখপাত্র হিসেবে উঠেছে, তাদের কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য বিশেষ করে গত কয়েক বছরে বিপর্যয়কর ছিল।’ তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘এটা কঠিন বাস্তবতা যে আমাদের দল গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। আমি দেখেছি, অনেক শীর্ষ নেতা জানতেনই না কিভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বা কারা সেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক অনুশীলনের অভাব দলটিকে বিশৃঙ্খল অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন এলাকায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল ইউনিটগুলো গত এক দশকে পুরনো কমিটির ওপর নির্ভর করেছে, কোনো পরিবর্তন ছাড়াই।

অনুশোচনা নেই আওয়ামী লীগ নেতাদের

আওয়ামী লীগ এখনো ‘জুলাই আন্দোলন’ নামে পরিচিত ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণজাগরণের সময় তাদের সরকারের কঠোর পদক্ষেপের জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো ক্ষমা প্রার্থনা বা বিবৃতি দেয়নি। বরং দলটি বারবার এই আন্দোলনকে অস্বীকার করেছে। উদাহরণস্বরূপ, দলের যুব সংগঠন যুবলীগের ১০ জানুয়ারির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। তাদের দাবি, এটি একটি ‘পাকিস্তানি মতাদর্শে’ দেশকে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ।

আল জাজিরার সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার কথোপকথনে নাসিম বারবার ইসলামী ছাত্র শিবিরের ওপর দায় চাপিয়েছেন। তার অভিযোগ, শিবির ‘বিরোধী আন্দোলনের’ আড়ালে ছাত্রদের ‘ভুল পথে পরিচালিত করেছে’। ২০২৪ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাপদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তনের প্রতিবাদে। সরকারি দমন-পীড়ন ও রক্তক্ষয়ের জেরে এই আন্দোলন শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণজাগরণে রূপ নেয়।

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন শিবিরের প্রতি নাসিমের অভিযোগ এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতার কারণে জামায়াতের বিতর্কিত অবস্থান রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত। আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক শাসনামলে জামায়াতের পাঁচজন শীর্ষ নেতা ও বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতাকে যুদ্ধাপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপি ও জামায়াত উভয়কেই শেখ হাসিনার শাসনামলে কঠোর দমন-পীড়নের শিকার হতে হয়েছে, যার মধ্যে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রয়েছে। নাসিম স্বীকার করেছেন, তাদের দল ‘কৌশলগত ভুল’ করেছে। তবে এর ব্যর্থতার জন্য তিনি মূলত ‘গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতাকে’ দায়ী করেছেন।

আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ১১ বছর দায়িত্বে ছিলেন। সম্প্রতি ভারতের শীর্ষ দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ ‘ইসলামি সন্ত্রাসী ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভ্যুত্থানের’ শিকার হয়েছে।

তবে দলের ঘনিষ্ঠ অনেকেই তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ দলে জবাবদিহিতার অভাব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অন্যায়, নিপীড়ন, দুর্নীতি, লুটপাট ও কোটি কোটি টাকা পাচারের জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমা চাইতে হবে। আমি এখনও আত্ম-উপলব্ধি, আত্ম-সমালোচনা বা অপরাধ স্বীকারের কোনো প্রমাণ দেখিনি।’

ঢাকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান মনে করেন, দলের কর্তৃত্ববাদী মনোভাব ও সিদ্ধান্তগুলো জনরোষকে বাড়িয়ে তুলেছিল। সেই ক্ষোভই জাগরণের সফলতায় ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, ‘অতি উৎসাহী সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তায় আঘাত হানে, ফলে তার পদত্যাগ জনগণের একমাত্র দাবি হয়ে দাঁড়ায়।’

ফিরে আসা সহজ হবে না

প্রবাস জীবন বা পুনরুত্থানের অভিজ্ঞতা শেখ হাসিনার জন্য নতুন কিছু নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য হত্যার পর হাসিনা দীর্ঘ সময় ভারতে ছিলেন। কিন্তু ১৯৮১ সালে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নেন। দলের পুনর্গঠনে ও ক্ষমতায় ফিরে আসতে তাকে ২১ বছর লড়াই করতে হয়েছিল।

‘তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন’ বলেছেন হাসানুজ্জামান। তার মতে, আওয়ামী লীগ এখন গুরুতর নেতৃত্ব ও ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘ছাত্র-নেতৃত্বাধীন এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলন এবং সামরিক বাহিনীর সমর্থনে দল ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভাবমূর্তি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া দলের পুনর্গঠন কঠিন হবে এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজনও বাড়বে ‘

দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি ও জামায়াত উভয়ই বলেছে, গত জুলাই ও আগস্টে গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিচার হতে হবে। তবে তারা বলেছে, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণই নির্ধারণ করবে।

হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্র আন্দোলনটি আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ২৫ জানুয়ারির এক পথসভায়, অন্তর্বর্তী ইউনুস সরকারের উপদেষ্টা ও ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাহফুজ আলম বলেন, আওয়ামী লীগকে পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। ইউনুস এরইমধ্যে জানিয়েছেন, নির্বাচন ২০২৬ সালের শুরুর মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হল খুন, গুম ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা, সংস্কার বাস্তবায়ন ও সকল প্রো-বাংলাদেশি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সুষ্ঠু নির্বাচন করা।’

আওয়ামী লীগের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই নির্বাচনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। হাসানুজ্জামান বলেন,‘যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, তাহলে এটি দলের জন্য একটি ভিত্তি তৈরি করবে। তবে নেতৃত্ব, সংগঠন ও তৃণমূলের সঙ্গে সংযোগ পুনরুদ্ধার ছাড়া আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক পুনরুত্থান অত্যন্ত কঠিন হবে।’

ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলী রিয়াজ আওয়ামী লীগের পুনরুত্থানের জন্য চারটি শর্ত উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো- ১৬ বছরের শাসনামলে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময় সংঘটিত অপরাধের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া; দলের বর্তমান মতাদর্শ পরিত্যাগ করা; শেখ হাসিনার পরিবারের কোনো সদস্যকে আর নেতৃত্বে না রাখা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সকল নৃশংস অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা।

রিয়াজ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের একটি কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান। তিনি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐক্যমত্য গড়ার কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময় যেসব ব্যক্তি গণহত্যার জন্য সরাসরি দায়ী, তাদের বিচার হতে হবে, যার মধ্যে শেখ হাসিনাও অন্তর্ভুক্ত। এই শর্তগুলো পূরণ হলে তাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।’

তবুও অনেক আওয়ামী লীগ কর্মী এখনো শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখেন। যদিও তারা মাঝে মাঝে তার পরিবারের ক্ষমতার অপব্যবহারের সমালোচনা করেন। বিদেশে থাকা জ্যেষ্ঠ নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টকশোতে কর্মীদের পুনর্গঠনের আহ্বান জানাচ্ছেন। একইসঙ্গে দাবি করছেন ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার “ব্যর্থ হতে চলেছে।’ কিন্তু এই বক্তব্য দলীয় কর্মীদের কাছে সেভাবে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। এসব বক্তব্যের নিচে মন্তব্যের ঘরে, আওয়ামী লীগের জুনিয়র কর্মীরা পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন। তারা বলছেন, ‘বিদেশের নিরাপদ আশ্রয় থেকে বক্তব্য দেওয়া সহজ। কিন্তু দেশে কর্মীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এবং লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।’

খুলনার এক সাবেক ছাত্রনেতার মতো অনেকেই তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছেন। রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন এখন অনেক দূরের বিষয় মনে হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যাত্রীদের উদ্দেশে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জরুরি বার্তা

আজ আপনার ভাগ্যে কী আছে, জেনে নিন রাশিফলে

রাজশাহীতে বিপাকে ৫ শতাধিক রেলযাত্রী

পঞ্চগড়ে ঘন কুয়াশায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা

একদিনে মোংলায় ভিড়েছে ৩ বিদেশি জাহাজ

একদিনে উত্তর গাজায় ফিরলেন ৩ লাখ ফিলিস্তিনি

ঘন কুয়াশায় তীব্র ঠান্ডা দিনাজপুরে, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রিতে

কুমিল্লায় বিএনপির দুপক্ষের জনসভা ঘিরে উত্তেজনা, সংঘর্ষের শঙ্কা

ট্রেন চলাচল বন্ধ / টিকিটের টাকা ফেরত দেবে রেলওয়ে

সেভ দ্য চিলড্রেনে চাকরি, থাকছে না বয়সসীমা

১০

রংপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২

১১

জামালপুরে আ.লীগের ৯ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

১২

ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

১৩

আত্মগোপনে থাকা ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার

১৪

২৮ জানুয়ারি : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে 

১৫

মঙ্গলবার ঢাকার যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৬

২৮ জানুয়ারি : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৭

‘পুত্রবধূদের পরিচর্যায় খালেদা জিয়া এখন অনেকটা সুস্থ’

১৮

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় গুচ্ছে থাকতে ভিসিদের নির্দেশনা

১৯

পার্লামেন্টের সিট দিয়ে আমাদের কিনতে পারবেন না : হাসনাত

২০
X