বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংগঠনের চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অনলাইন ক্যাম্পেইন ও প্রোপাগান্ডা, ট্যাগিংয়ের রাজনীতিসহ নানাবিধ প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রমের ফলে দেশে নতুন সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী স্বৈরাচারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত যে পরির্তন হওয়ার কথা ছিল তা অনেকাংশে অনুপস্থিত বলে মনে করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। জাহিদুল ইসলাম বলেন, অভ্যুত্থানের ৫ মাস পার হলেও স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। চব্বিশের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসীরা যে বর্বর হামলা চালিয়েছিল, তাতে হাজারো প্রাণ ঝরে গেছে, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন।
জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে না ওঠা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, কিছু রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের চাঁদাবাজি, ছিনতাই, বিভিন্ন অনলাইন ক্যাম্পেইন ও প্রোপাগান্ডা, ট্যাগিংয়ের রাজনীতিসহ নানাবিধ প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রমের ফলে দেশে নতুন সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। যা জুলাই অভ্যুত্থানের স্প্রিটের পরিপন্থি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা প্রসঙ্গে শিবির সভাপতি বলেন, গত শনিবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে যে অনাকাঙিক্ষত ঘটনা হয়েছে সেটি খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে ছাত্র সংগঠনগুলোর ঐক্যের পথকে সংকুচিত করে দিতে পারে। এর আগে আমরা লক্ষ্য করেছি, সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) একটি ছাত্র সংগঠনের একজন কর্মী নিজ বিভাগের কয়েকজনকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করে। যদিও বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ায় তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। আমরা লক্ষ্য করেছি, শনিবার গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে আমরা এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা আরও লক্ষ্য করেছি, একটি ছাত্র সংগঠনের একজন শীর্ষ নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাল সন্ত্রাসের ডাক দিয়ে বলেছেন ‘লাল সন্ত্রাসই মুক্তির একমাত্র পথ’। অতীতে আমরা দেখেছি যে সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য লাল সন্ত্রাসের মাধ্যমে স্বাধীনতা পরবর্তী ব্যাংক লুট, থানায় হামলা, নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, কেড়ে নেওয়া হয়েছে মৌলিক মানবাধিকার। আবার যদি সেই লাল সন্ত্রাস মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চায় তবে দেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করবে।
ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে শিবির সভাপতি আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত প্রকাশের অবারিত সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রায় ৩০ বছরের নিষ্ক্রিয় ছাত্রসংসদগুলো কার্যকর করার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত রাজনীতির সংস্কারের নতুন এক গতিধারা বিনির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ায় ক্যাম্পাসে গণতন্ত্রহীনতার চর্চা, মতপ্রকাশে বাধা ও ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অবাধ গণতন্ত্র ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার বিকাশ ঘটানোর জন্য ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
ইবতেদায়ি শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, রোববার দুপুরে শাহবাগে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলা হয়েছে। শিক্ষকরা হলেন জাতি গঠনের কারিগর, তাদের ওপর এমন হামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তিনি বলেন, সরকার বেশ কিছু সংস্কার কমিশন গঠন করলেও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়নি। আমরা অবিলম্বে শিক্ষাবিদ, গবেষক, আলেম-ওলামা এবং বিশেষজ্ঞ নীতিনির্ধারক নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাধীন শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন