কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক ফ্যাসিস্টদের শক্তিশালী করবে : তারেক রহমান

শিক্ষক সমাবেশে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন তারেক রহমান। ছবি : কালবেলা
শিক্ষক সমাবেশে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন তারেক রহমান। ছবি : কালবেলা

নির্বাচন নিয়ে বির্তক সৃষ্টি ‘পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকালে ঢাকায় এক শিক্ষক সমাবেশে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষকদের প্রাপ্য অধিকার বাস্তবায়নে বিএনপির ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে বলেও তারেক রহমান তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

তারেক রহমান বলেন, আগেও আমি বলেছি, আজও আমি আপনাদের সামনে আবারও তুলে ধরতে চাই, বলছি, নির্বাচনই হচ্ছে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করার অন্যতম প্রধান কার্যকরী হাতিয়ার। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার অর্থ নিজেদের অজান্তে পরাজিত পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি বরাবরের মতোই আমার আহ্বান থাকবে, আপনাদের কোনো কার্যক্রম নিয়ে কেউ যাতে বিভ্রান্তি ছাড়ানো কিংবা বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার লিপ্ত হওয়ার সুযোগ না পায় সে বিষয়ে অবশ্যই আপনাদের সজাগ থাকতে হবে। জনগণই বিএনপির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। জনগণ সঙ্গে থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের পরাজিত করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।

শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, পুথিগত বিধির ওপরে গণতন্ত্রের বিকাশ নির্ভর করে না। গণতন্ত্র বিকশিত এবং শক্তিশালী হয় প্রতিদিনের কার্যক্রম, আচরণে এবং চর্চায়। আমাদের মধ্যে অবশ্যই ভিন্নমত ভিন্ন পথ থাকবে এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে আমাদের উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন। আমাদের সবার উদ্দেশ্য একটি উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে মাফিয়া প্রধান দেশ ছেড়ে পালানোর পর মাফিয়ামুক্ত বাংলাদেশের সামনে গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এক অপার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র কিংবা বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে অযাচিত ভুল বোঝাবুঝির কারণে যাতে একটি গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ এবং সম্ভাবনা হুমকির সম্মুখীন না হয় এ ব্যাপারে আমাদের সবাই অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।

নির্বাচন ও সংস্কার দুটিই জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংস্কার এবং নির্বাচন বিএনপি দুটিরই পক্ষে…দুটিই অত্যন্ত জরুরি। সংস্কার নাকি নির্বাচন… কেউ কেউ এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্ন নিয়ে কুট তর্ক করার অপচেষ্টা করেছে। আমরা যদি দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি দেখি তাহলে কিন্তু সেটি ভিন্ন। দেশের কোটি কোটি পরিবারের কাছে এই মুহূর্তে নির্বাচন এবং সংস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংসার পরিচালনা করা। একদিকে দ্রব্যমূল্যের অপরদিকে জনগণের চাপিয়ে দেওয়া ভ্যাটের বোঝা। ফলে দেশের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ এমনকি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের কাছেও সংসার টেকানোই অনেক ক্ষেত্রে দায় হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারে চলছে নীরব হাহাকার।

তিনি বলেন, কীভাবে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা যায়? কীভাবে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগণের হাতের নাগালে রাখা যায়? কীভাবে জনগণকে ফ্যাসিস্টদের আমলে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই দেওয়া যায়? কীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় করা সম্ভব, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে অগ্রাধিকারের তালিকায় এ বিষয়গুলো থাকা অত্যন্ত জরুরি। জনগণ বিশ্বাস করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মতো সর্বজন সমর্থিত একটি নির্দলীয় অরাজনৈতিক সরকারের পক্ষেই বাজার সিন্ডিকেটের কবল থেকে জনগণকে মুক্তি দেওয়া সহজ। তাহলে এখন প্রশ্ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এতদিনেও কেন বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। জনগণে ওপরে কেন উল্টো ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এখনো কেন বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য চলছে। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক- তাহলে কি সরকারের কেউ কেউ অন্য কোনো ইস্যুতে বেশি মনোযোগী, নাকি সরকার পারছে না।

তবে তারেক বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা মনে করি, এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। কারণ হাজারো শহীদের রক্ত মাড়িয়ে একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে।

তরুণরা নতুন দল করলে বিএনপি স্বাগত জানাবে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, দেশের ছাত্র-তরুণরা রাষ্ট্র রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। এসব তরুণরাই গত দেড় দশকে একটি নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত এসব তরুণদের কেউ যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে অবশ্যই বিএনপি সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। তবে যে কথাটা এখানে (শিক্ষক সমাবেশে) কোনো কোনো বক্তা বলেছেন, আমিও একই সাথে উল্লেখ করতে চাই, তবে রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা নেন সেটি জনগণকে হতাশ করবে, কিংবা অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের আচরণ কিংবা বক্তব্য যদি ঝগড়াসুলভ অথবা প্রতিহিংসামূলক হয় সেটিও জনগণের কাছে হবে অনাকাঙ্ক্ষিত।

তিনি বলেন, অবশ্যই আজকের তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশ। অতীত থেকে বেরিয়ে এসে তরুণরা নতুন পথ রচনা করবে। তবে কোনো প্রশ্নবিদ্ধ পথে নয়, পথটি হওয়া উচিত স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক।

তারেক রহমান আরও বলেন, এই সরকারের সাথে কোনো ভুল বুঝাবুঝি অযথা কুট তর্ক আমি সময়ের অপচয় বলে মনে করি। তবে একইসঙ্গে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলবো, জনগণ যদি বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা ধৈর্য ধরে মানতে পারে, মেনে নিতে পারে তাহলে যারা সরকারে রয়েছেন তাদের ধৈর্য ও সহনশীলতা আরও অনেক বেশি থাকা জরুরি বলে আমরা মনে করি। বিএনপি মনে করে, জনগণকে নিয়ে রাজনীতি নয় বরং জনগণের জন্যই রাজনীতি। এ কারণে বিএনপি যে কোনো মূল্যে দেশের জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চায়। রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে জাতীয় শিক্ষক দিবস এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে এ শিক্ষক সমাবেশ হয়। সারা দেশ থেকে আসা কয়েক হাজার শিক্ষক এই সমাবেশে অংশ নেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যায় সংগঠনটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় শিক্ষক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিভিন্ন জেলার শিক্ষকরা বক্তব্য দেন। এ অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহসানুল হক মিলনসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চিয়া সিড বেশি খেলে যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে

দুপুরে ৭ কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে জরুরি সভা করবে ঢাবি উপাচার্য

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা-দিল্লি না লাহোর?

কার্নিশে ঝুলে থাকা তরুণকে গুলি করা সেই এসআই গ্রেপ্তার

গাজা খালি করতে চান ট্রাম্প, কোথায় যাবেন ফিলিস্তিনিরা

মাইগ্রেনের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে আজই বাদ দিন এই খাবারগুলো

সাত কলেজের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত

দিনাজপুরে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রিতে

যে কারণে হঠাৎ ঢাবি-সাত কলেজ সংঘর্ষ

কোকোর মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হবে: ডা. জাহিদ

১০

পবিত্র শবেমেরাজ আজ

১১

ট্রাম্পীয় নীতি: সামনে আর কী অপেক্ষা করছে

১২

খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে: এমএ মালেক

১৩

২৭ জানুয়ারি : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে 

১৪

সোমবার ঢাকার যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৫

২৭ জানুয়ারি : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৬

গরিব-দুঃখীর ওপর কিসের আইন : মঈন খান

১৭

তেলের ডিপোর ভয়াবহ আগুনে মুহূর্তেই শেষ ১৫ দোকান

১৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দুঃখ প্রকাশ

১৯

সোমবার ঢাবির ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত

২০
X