বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি)। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ৪৫ বছর বয়সে মারা যান তিনি। ২৮ জানুয়ারি তাকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। আরাফাত রহমান স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বনানী কবরস্থানে কোকোর কবর জিয়ারত, কোরআন খতম ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, এতিম ও দুস্থদের মধ্যে তবারক বিতরণ প্রভৃতি কর্মসূচি পালন করা হবে। এ ছাড়া অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে শুক্রবার সকাল ১১টায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে যথাসময়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
আরাফাত রহমান ১৯৬৯ সালের ১২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হলেও তিনি রাজনীতিক হিসেবে নয়, একজন ব্যবসায়ী এবং ক্রীড়াবিদ হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। ব্যবসা, ক্রীড়া ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেই নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রেখেছিলেন কোকো। একজন প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হয়েও তার মধ্যে ছিল না কোনো অহংকার। জীবনযাপন করতেন সাধারণ মানুষের মতো। মিতব্যয়ী, সজ্জন এবং সাদাসিধে এ মানুষটির খুব ঘনিষ্ঠজনরা জানেন তার জীবন সম্পর্কে। এ ছাড়া তিনি মাঝেমধ্যেই খেলনা আর চকোলেট নিয়ে পথশিশুদের কাছে ‘সারপ্রাইজ’ হিসেবে হাজির হতেন। তাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন।
আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় অবস্থানকালেও খুবই সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। একটি দুই বেডের ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। নিজেই প্রতিদিন দুই মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যেতেন এবং নিয়ে আসতেন। বিনয়ী ও প্রচারবিমুখ কোকোর চরম শত্রুরাও তার ব্যক্তি চরিত্রের কোনো ত্রুটির কথা বলতে পারবেন না।
ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে তিনি ছুটে বেড়িয়েছিলেন শহর থেকে গ্রামে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে ২০০৩ সালে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। সেইসঙ্গে বিসিবির একজন সদস্যও ছিলেন তিনি। ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য যে কর্মসূচি শুরু করেছিলেন তিনি, বর্তমানে তার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট।
জাতীয় পর্যায়ে খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য ক্রিকেটকে জেলা থেকে শুরু করে উপজেলা-গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি মোহামেডান ক্লাবের এক্সিকিউটিভ কমিটির কালচারাল সেক্রেটারি ছিলেন।
বিসিবির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর ক্রিকেটের অনেক উন্নয়ন করেছেন কোকো। তিনি ক্রীড়া সংগঠক ও শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। বিসিবি ছাড়াও তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও সিটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
দেশের মানুষ রাজনীতির কারণে খালেদা জিয়ার পাশাপাশি তার বড় ছেলে তারেক রহমানের নাম জানলেও আরাফাত রহমান কোকোর নাম খুব বেশি জানত না। ১/১১-এর সেনাসমর্থিত মঈন-ফখরুদ্দীন সরকারের সময় মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারের পর থেকে তার সম্পর্কে মানুষ বেশি জানতে পারে।
রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড নির্যাতন করে কোকোকে পঙ্গু করা হয়। নির্যাতনের ফলে তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। সেই সময় থেকেই তিনি হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে থাইল্যান্ডে যান কোকো। সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় চলে যান। এরপর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ মালয়েশিয়ায়ই অবস্থান করছিলেন।
মন্তব্য করুন