কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকারকে সহযোগিতা করছি : আমীর খসরু

‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রায়ন ও উন্নয়নে বহির্বিশ্ব বিএনপির ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য রাখছেন। ছবি : কালবেলা
‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রায়ন ও উন্নয়নে বহির্বিশ্ব বিএনপির ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য রাখছেন। ছবি : কালবেলা

দেশ ও প্রবাসীদের কল্যাণে ভবিষ্যতে নজর দেওয়া হবে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সরকারকে সহযোগিতা করছি যাতে দেশ যত দ্রুত সম্ভব একটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এর বিকল্প নেই। এর বাইরে অন্য কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া করতে গেলে মানুষের মনে সন্দেহ ও ভিন্ন ধারণা তৈরি হবে। সেটা হবে অগণতান্ত্রিক। আমরা শেখ হাসিনার পতনের আগেই ৩১ দফা এবং ৭ বছর আগে ‘ভিশন-২০৩০’ ঘোষণা করেছি, যা বাস্তবায়নে আমরা জাতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রায়ন ও উন্নয়নে বহির্বিশ্ব বিএনপির ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতারা।

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাটের সভাপতিত্বে ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াস আহমেদের পরিচালনায় বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ জনি, মহিউদ্দিন আহমেদ ঝিন্টু, ফ্লোরিডা বিএনপির সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক ইমরানুল হক চাকলাদার, নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সভাপতি অলিউল্লাহ আতিকুর রহমান, বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইদ, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান বাবু, কাউন্সিলর সুরাইয়া, অস্ট্রেলিয়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মুসলেহ উদ্দিন হাওলাদার আরিফ, কানাডা মহিলা দলের নাজমা হক, কানাডা নর্থ বিএনপির সভাপতি তৌফিক এজাজ প্রমুখ।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আন্দোলনের সফলতা দেশের ১৮ কোটি মানুষের সফলতা। যার যার অবস্থান থেকে সবার অবদান আছে। প্রবাসীদের ত্যাগ-অবদান রয়েছে। অনেকেই বলেছেন- প্রবাসীরা নিরাপদ জোনে থেকে আন্দোলন করেছে। কিন্তু তাদের পরিবার ও স্বজনরা বাংলাদেশে কীভাবে নিগৃহীত হয়েছেন আমরা জানি। বাংলাদেশের মতো এতো সহজে প্রবাসে আন্দোলন করা যায় না। স্টেট ডিপার্টমেন্টের সামনে বা বিশ্বব্যাংকের সামনে জমায়েত করা এত সহজ না। তারপরও বিএনপির হাজার হাজার লোক রাজপথে আন্দোলন করেছেন। আমরা তাদের অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশ ও প্রবাসীদের কল্যাণে যা করা দরকার সেদিকে আমরা নজর রাখব ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, প্রবাসীরা কিন্তু বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে এবং রেমিট্যান্স বন্ধ করে যুদ্ধ করেছে। তারা দেশ ও জাতির প্রতি কমিটমেন্ট রেখেছে। তার ফলাফল কিন্তু জাতি পেয়েছে।

শেখ হাসিনার পতনের পেছনে প্রবাসীদের অবদান নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি রেকর্ড করার পরামর্শ দেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, অনেকেই আন্দোলনে অনেক পরে যোগ দিয়েছেন। তারা আমেরিকায় হোয়াইট হাউসের সামনে, ব্রাসেলস, জাপান, লন্ডন এবং অস্ট্রেলিয়ার আন্দোলন দেখেনি। এই আন্দোলনের পেছনে ড্রাইভ দিয়েছেন তারেক রহমান। খালেদা জিয়া ড্রাইভ দিয়েছেন। তিনি নিজে জেল খেটেছেন। পুরো আন্দোলন ড্রাইভ করেছে বিএনপি। এটা রেকর্ড থাকা দরকার।

প্রবাসীদের দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনাদের দেশপ্রেম ও ভালোবাসা শেষ হলে চলবে না। আন্দোলন কিন্তু শেষ হয়নি। আপনাদের মূল্যায়ন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার সরকার তো দেশের মালিকানা নিজেদের হাতে নিয়েছিল। দেশ আজ খাদের কিনারায়। সুতরাং জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকতে হবে। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত না থাকায় দেশের এই সংকট। সংস্কার হলো একটা চলমান প্রক্রিয়া। আপনারা বিশেষ কিছু সংস্কার করতে চাইলে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসুন। শুধু ৫/১০ জন বসে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা যায় না। সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। অতএব জনগণের কাছে যেতে হবে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ বলেন, প্রবাসীরা আমাদের চেয়েও দেশপ্রেমিক। আমরা সরকারের কাছে নতুন কিছু দেখতে চাই। কিন্তু সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। লড়াই কিন্তু শেষ হয়নি। অতিদ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। সংস্কার হলো চলমান প্রক্রিয়া। সেটি চলতে থাকবে। নির্বাচন না হলে পরাজিত ফ্যাসিবাদ শক্তি সঞ্চয় করবে। সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে। দক্ষ লোকদের জায়গা করে দিতে হবে। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশ গঠন করা সম্ভব। সামনে আরও প্রবাসী বাড়বে।

গিয়াস আহমেদ বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। তারা স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি। অন্যদিকে বিএনপি হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। বিগত দিনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে সারাবিশ্বে ২ কোটি প্রবাসী একসাথে আন্দোলন করেছিল। সেজন্য প্রবাসেও আমাদেরকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তবে আমাদের আন্দোলন কিন্তু থেমে যায়নি। আমরা সিনেটর, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, কনস্যুলেটে স্মারকলিপি ও চিঠি দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনের পেছনের অক্সিজেন ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যিনি বিএনপি এবং সারা দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ঐক্য গড়ে তুলেছিলেন।

গিয়াস আহমেদ বলেন, সংস্কার তো মুখে বললে হবে না। কারণ যারা সংস্কারের কথা বলে তারা তো দুর্নীতি-অনিয়মের মধ্যেই বড় হয়। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সংস্কার করতে হলে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ দরকার। সর্বোপরি বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা গেলে পরিবর্তন সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। আজকে যানজট নিরসন হচ্ছে না। এসব বিষয়ে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। যারা জুলাই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন তাদের দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে হবে। কেননা স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।

যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সাবেক সভাপতি বলেন, দেশের জন্য গণতন্ত্রের জন্য প্রবাসীরা সবসময় সোচ্চার ছিল এবং আগামীতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ।

আবদুল লতিফ জনি বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। দীর্ঘ এই সময়ে প্রবাসে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও জীবনবাজি রেখেছেন। তারা কেউ নিজেরা কারও পরিবারের সদস্য দুর্ভোগে পড়েছেন। জেল খেটেছেন, ব্যবসায়ী হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখনো আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে সবার পরিশ্রম সার্থক ও সফল হবে। এ সময় খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া কামনা করেন জনি।

ইমরানুল হক চাকলাদার বলেন, দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে সব সেক্টরে। মনে হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিমশিম খাচ্ছে। আমরা অবিলম্বে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। প্রবাসীরা যাতে আস্থার জায়গা তৈরি করে বিনিয়োগ করতে পারি। পাশাপাশি আমরা প্রবাসীরা রেমিট্যান্স যোদ্ধা হতে পারি। কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও যদি বিদেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারি তাহলে দেশের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারব না কেন? এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারক এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বক্তারা বলেন, প্রবাসী নেতারা কিন্তু কোনো স্বার্থ ছাড়া আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের মূল্যায়ন করা হয় না, যা দুঃখজনক। অথচ বিদেশে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রবাসী বিএনপির নেতাকর্মীরা নানাভাবে হামলা-মামলা এবং নির্যাতন-হয়রানির শিকার হয়েছেন। এখন পরিবর্তন হয়েছে আমরা সবাই দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সবাই একসঙ্গে কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ।

সভাপতির বক্তব্যে গিয়াস আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো আপস নেই। তাদের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। জুলাই আন্দোলন কারও একার পক্ষে হয়নি। এটা সবার সম্মিলিত চেষ্টার ফসল।

তিনি বলেন, পুরো বিশ্বে প্রায় দুই কোটি প্রবাসী রয়েছেন, যা মোট জনসংখ্যার দশ শতাংশ। আমরা মন্ত্রিসভায় সেই দশ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব চাই। পাশাপাশি শুধু বিমানবন্দরে প্রবাসী লাউঞ্জ না করে সারা দেশে উপজেলায় একটি স্থায়ী ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে হয়রানি না করে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে নবীন বরণ এবং বিদায় অনুষ্ঠান

কমবে যেসব পণ্যের দাম

পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিঠা উৎসব

শিক্ষা ক্যাডারের ১৩৪ কর্মকর্তা নাগরিক কমিটিতে

তানজিদের দুর্দান্ত ইনিংসে বিপিএলে টিকে রইল ঢাকা

রাজধানীতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ১৯৭৩ মামলা

আমরা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশ চালাতে চাই : এ্যানি

সড়কে ইট বালু রেখে লাপাত্তা ঠিকাদার, রাস্তার বেহাল দশা

ছেলের স্বপ্ন ছিল সরকারি কর্মকর্তা হবে, বললেন শহীদ তামিমের বাবা

যে আশ্বাসে বাড়ি ফিরছেন মালয়েশিয়া যেতে না পারা আন্দোলনকারীরা

১০

মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবাগ্রহণকারীদের জন্য সুখবর

১১

বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক / সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কৃষক ছাড়া অন্য কারোর প্রবেশ নিষেধ

১২

‘দিনের ভোট রাতে করা ডিসিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু’

১৩

হত্যা মামলায় আ.লীগ নেতা হাবিব গ্রেপ্তার

১৪

ক্ষমতায় আসতে না আসতেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে নালিশ

১৫

জয়পুরহাটে হত্যা মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন

১৬

‘জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া জরুরি’

১৭

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে খেলাফত মজলিসের বৈঠক

১৮

শাহবাগে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

১৯

দেওবন্দের মাওলানা আরশাদ মাদানী ৫ দিনের সফরে বাংলাদেশে

২০
X