অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তি এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সহায়তা পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কিত উদ্বেগ অবহিতকরণ ও সমাধান নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও দপ্তর সেলের সম্পাদক মনিরা শারমিনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে উদ্দেশ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তি এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে কিছু জরুরি উদ্বেগ আপনার কাছে পৌঁছে দিতে এই চিঠিটি লিখছি। এই উদ্বেগগুলোর মধ্যে রয়েছে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা লাভে বিলম্ব ও দীর্ঘসূত্রতা, সাহায্য লাভের জন্য যে আবেদন করা হয় তার ফলাফল সম্পর্কে স্পষ্টতার অভাব, ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের মধ্যে সহানুভূতি এবং পেশাদারিত্বপূর্ণ মনোভাবের অভাব এবং চিকিৎসাসেবা সম্পর্কিত অসন্তুষ্টি। নিচে আমরা মূল বিষয়গুলো উল্লেখ করছি।
১। আমরা বেশ কিছু আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি যে, তারা আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন এবং ফাউন্ডেশন থেকে টোকেন নম্বর পেয়েছেন। কিন্তু মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও এখনো কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি। কিছু ক্ষেত্রে, কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়াই আবেদনকারীদের জানানো হয়েছে যে, তাদের আবেদন কার্যকর করা যাচ্ছে না এবং আবার আবেদন করতে হবে। এই বিলম্ব আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য হয়রানি এবং অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে। আমরা এই বিলম্বের কারণ এবং এই সমস্যাটি দ্রুত সমাধান করার জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
২। অভ্যুত্থানে আহত এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে ফাউন্ডেশনের আচরণ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। অনেকে আমাদের জানিয়েছেন যে, ফাউন্ডেশনের হেল্পলাইনে ফোন করে কথা বলার সময়ে বা অফিসে এসে সরাসরি যোগাযোগের সময় অশোভন এবং অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ পেয়েছেন। এটা কখনোই কাম্য নয়। সেবাদানের সময় সহানুভূতিপূর্ণ এবং শ্রদ্ধাশীল আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা নিশ্চিত করতে আপনার প্রতিনিধিদের কী ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং কী ধরনের মনিটরিং ব্যবস্থা রয়েছে আমরা স্পষ্টভাবে তা জানতে চাই।
৩। অনেক আহত ব্যক্তি জানিয়েছেন যে, তারা এমআইএস ভেরিফিকেশন তালিকায় নেই, যার ফলে তাদের সহায়তা পাওয়ার যোগ্যতা নিয়ে বিভ্রান্তি, দীর্ঘসূত্রতা এবং উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে। এ বৈষম্য কী কারণে ঘটছে এবং কীভাবে এগুলো সমাধান করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রার্থনা করছি।
৪। কিছু শহীদ পরিবার এখনো কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি, কারণ পরিবারের কোন সদস্য কী পরিমাণে আর্থিক সহায়তা পাবেন তা নিয়ে আইনি জটিলতা আছে। এ ধরনের সমস্যা দ্রুত সমাধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে পরিবারগুলো দীর্ঘ সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে না থাকে। আমরা জানতে চাই, ফাউন্ডেশন কীভাবে এ আইনি চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করছে এবং কতদিনের মধ্যে সমাধান করছে।
৫। যারা বিদেশে চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল থেকে রেফারাল লেটার পেয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানেন না এবং তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আদৌ বিদেশে নেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত নয়। কয়েক মাস চলে যাওয়ার পরও অনেকের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া অনিশ্চিত। এছাড়াও বেশ কিছু আহত ব্যক্তি জানিয়েছেন যে, আর্থিক সংকটের কারণে হাসপাতালে যেতে পারছেন না বা ওষুধ কেনার টাকা নেই। আমরা জানতে চাই, এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য ফাউন্ডেশনের কাছে কী ধরনের সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে এবং এসব ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান ও সমন্বয়ের জন্য কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা।
আমরা জানি যে, ফাউন্ডেশন চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে এবং আমরা আপনাদের ভূমিকা গুরুত্বের সাথে স্বীকার করি। তবে এ উদ্বেগগুলোর দ্রুত সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে আমাদের দেশের জন্য যারা এত কিছু ত্যাগ করেছেন তাদের বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা বজায় রাখা যায়।
আমরা আপনার অফিসে এসে দেখা করে এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ পাব বলে আশা করছি। এ পরিস্থিতিতে কীভাবে আমরা একত্রে আহত এবং শহীদ পরিবারগুলোর জন্য দ্রুত সময়ে সহায়তা নিশ্চিত করতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
মন্তব্য করুন