পুলিশ মূল সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করে নিরপরাধ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। এটা চরম বৈষম্য ও অন্যায়। ডা. সাদি বিন শামসকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে এ কথা জানায় জাতীয় নাগরিক কমিটি।
একই সঙ্গে পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে গ্রেপ্তার নিরীহ ব্যক্তিদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) জাতীয় নাগরিক কমিটি মুখপাত্র সামান্তা শারমিন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত রিকশাচালক ইসমাইলের ছবি ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় রামপুরা ডেল্টা হাসপাতালের সিঁড়িতে পড়ে আছেন আহত ইসমাইল, আর পুলিশের একজন সদস্য তাকিয়ে আছেন তার দিকে।
আমরা জানতে পেরেছি, স্বৈরাচার পতনের পর গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর হাতিরঝিল থানায় এজাহার দায়ের করেন শহীদ ইসমাইলের স্ত্রী লাকি বেগম। ৫১ জনকে আসামি করে মামলা করেন তিনি। এজাহারে মূল আসামি করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ১৭ জনকে। ৫১ আসামির সবাই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, মামলার আসামিদের অস্ত্রের মহড়ার কারণে ইসমাইল চিকিৎসা নিতে পারেননি। স্ত্রী লাকি বেগম হুমকির কারণে তার লাশের পোস্টমর্টেম পর্যন্ত করতে পারেননি। কিন্তু লাকি বেগম তার এজাহারের কোথাও চিকিৎসক-নার্স বা চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কাউকে আসামি করেননি। শহীদ ইসমাইলের ছবি ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ ডেলটা হেলথ কেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সাদি বিন শামস, মার্কেটিং অফিসার হাসান মিয়া, মেইনটেনেন্সের বোরহান উদ্দিন এবং সিকিউরিটি গার্ড ইসমাঈল ও নাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে চিকিৎসাসেবা প্রদান না করার অভিযোগ ওঠে।
কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি, ডেলটা হেলথ কেয়ারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঝুঁকি নিয়ে ওই গুলিবিদ্ধ লোককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসতে চেষ্টা করেন, তখন রাস্তায় গুলিবর্ষণকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ডেলটা হেলথ কেয়ার, রামপুরা লিমিটেডের উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করলে তৎক্ষণাৎ ডিউটিরত চিকিৎসকের পাঞ্জাবি ভেদ করে গুলি হাসপাতালের দেওয়ালে লেগে যায়, যার চিহ্ন এখনো বিদ্যমান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের অস্ত্র তাক করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মরদেহটি সরিয়ে নেয়। পরে পুলিশ লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
আমরা ডা. সাদি বিন শামসের ব্যাপারে জানতে পেরেছি, তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহতদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছেন। এমনকি আহত ইসমাইলকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য গেলে তাকেও গুলি করে পুলিশ। কিন্তু সৌভাগ্যবশত গুলিতে তিনি আহত হননি। পুলিশ মূল সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করে নিরপরাধ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। এটা চরম বৈষম্য ও অন্যায় কাজ।
ডা. সাদি বিন শামসকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করায় জাতীয় নাগরিক কমিটি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। সে সঙ্গে পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান করা হয়েছে। ডা. সাদি বিন শামসসহ অন্য নিরীহদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। সে সঙ্গে, জুলাই ম্যাসাকারে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি।
মন্তব্য করুন