জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে জামায়াতে ইসলামী এখন একাত্তরে নিজেদের ভূমিকাকে জাস্টিফাই করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধই জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অহংকার’- শীর্ষক সভায় মেজর হাফিজ এসব কথা বলেন।
মেজর হাফিজ বলেন, আমরা ভেবেছিলাম- এখন একটা সুযোগ এসেছে, এই সুযোগে তারা (জামায়াতে ইসলামী) একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। সেটি না করে তারা একাত্তরে তাদের ভূমিকাকে জাস্টিফাই করছে এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ সময় নির্বাচনের কথা বললেই অনেক উপদেষ্টার মুখ কালো হয়ে যায় বলেও মন্তব্য করেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, আজ গণঅভ্যুত্থানকে স্বাধীনতার ওপর স্থান দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা করছে একটি মহল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে, স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা করতে পারি না আমরা। সবার ওপরে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, চিরকাল এভাবেই থাকবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধকে কাউকে কলঙ্কিত করতে দেব না। মুক্তিযুদ্ধ বিভক্ত হবে, এটাও আমরা আশা করি না।
বিএনপির এই নীতি-নির্ধারক বলেন, কিছুদিন আগে একটি বক্তব্য আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দেশে দেশপ্রেমিক শুধু সামরিক বাহিনী (সেনাবাহিনী) এবং জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কারও সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই যে- তারা দেশপ্রেমিক, না দেশপ্রেমিক না। তাদের একাত্তরের ভূমিকা, বর্তমান ভূমিকা, প্রত্যেকটি ভূমিকা সাক্ষ্য দেয়- তারা সবসময় জনগণের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্যে আমি অবাক হয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা তাদের (জামায়াত) এতদিন মিত্র হিসেবেই গণ্য করে এসেছি। তাদের ওপর যখন অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে ফ্যাসিস্ট বাহিনী, আমরা তাদের সহমর্মিতা জানিয়েছি। তাদের দলকে যখন বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে, ধানের শীষ দিয়ে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছি। খালেদা জিয়া তাদের মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছেন। আমরা অনেকে সেটি পছন্দ করিনি, দলের শৃঙ্খলার স্বার্থে মেনে নিয়েছি। তার বিনিময়ে কি তাদের এই উক্তি করা ঠিক হয়েছে? আমরা এ ধরনের উক্তি তাদের কাছে আশা করি না। আজ যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে উঠেছে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে, এটি তাদের মধ্যে ফাটল ধরাতে পারে। এ ব্যাপারে তারা (জামায়াত) ভবিষ্যতে আরও যত্নবান হবেন। আমাদের নেতা তারেক রহমানের মূল সুর হচ্ছে, আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি।
জামায়াতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল যেভাবে দেশপ্রেমিক হওয়ার চেষ্টা করছে- দেশপ্রেমিক হোন, জনগণের কাছে যান। জনগণের কাছে আপনাদের কী স্ট্যান্ডিং (অবস্থান), সেটি নির্বাচন না হলে তো পরীক্ষা হবে না। আপনারা মনে করেছেন- এতদিনে সাবালক হয়েছেন, একাই নির্বাচন করতে পারবেন, এখন আর বিএনপির প্রয়োজন নেই। মোস্ট ওয়েলকাম, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। একটি রাজনৈতিক দলের সে অধিকার আছে, সে এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে।
মেজর হাফিজ বলেন, আমরা যখন নির্বাচনের কথা বলি তখন যেন তারা (উপদেষ্টারা) অসন্তুষ্ট হয়ে যায়। আজকে জনগণকে এত কেন ভয়? আমরা চাই, জনগণের মতামতের ভিত্তিতে এই রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। সংস্কারের নামে আর অধিক সময় নিবেন না। হাসিনা পলায়ন করেছে। এখন যে সংস্কার বাকি আছে, সেগুলো জনগণ করবে। এখন শুধু অপরাধিদের শাস্তি বিধান করুন। আহত- নিহতদের পরিবারের প্রতি লক্ষ্য রাখুন।
শেখ হাসিনার ভারতীয় ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ভারত দেশে পাঠাবে- এই আশায় যখন আমরা বুক বেঁধেছি, এখন দেখা গেলো- তার ভিসার মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থাৎ শেখ হাসিনাকে তারা তাদের দেশে আশ্রয় দেবে এবং বাংলাদেশকে আনস্টেবল করার জন্য, দেশে নাশকতা সৃষ্টির জন্য তারা (ভারত) তাকে (শেখ হাসিনা) ব্যবহার করবে। এটি করলে তাদের সঙ্গে আমাদের আর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখার অবকাশ থাকবে না।
জামায়াতবিরোধী স্লোগান-প্ল্যাকার্ড : মুক্তিযোদ্ধা দলের সভায় প্রকাশ্যে জামায়াতবিরোধী স্লোগান দেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুধু তাই নয়, জামায়াতবিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়েও হাজির হন তারা।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আব্দুস সালাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য করুন