কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:২৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এবি পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নির্বাচনী বিতর্ক : কী বললেন প্রার্থীরা?

নির্বাচনী বিতর্ক অনুষ্ঠান। ছবি : কালবেলা
নির্বাচনী বিতর্ক অনুষ্ঠান। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচনী বিতর্ক করেছে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি।

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বিতর্কে দলটির চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী তিন নেতা অংশ নেন।

কেন প্রার্থী হয়েছেন, নির্বাচিত হতে পারলে কী করবেন, ফলাফল যাই হোক মেনে নেবেন কি না- এসব প্রশ্নের জবাব দেন প্রার্থীরা। অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচারিত এই বিতর্কে তিন প্রার্থী- দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনকে গণতন্ত্রের পথে অভিযাত্রা আখ্যা দিয়ে ভোটের পরিবেশে সন্তোষ জানিয়েছেন। ঐক্য বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাবেদ ইকবালের সঞ্চালনায় বিতর্কে অংশ নেন তিন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। তারা হলেন- প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এএফ সোলায়মান চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম। স্বাগত বক্তৃতা করেন এবি পার্টির প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. ওয়ারেসুল করিম।

গত ২৭ এবং ২৮ ডিসেম্বর এবি পার্টির জাতীয় নির্বাহী পরিষদের ২১ পদে ভোটগ্রহণ করা হয়। এতে প্রার্থী ছিলেন ৬০ জন। আগামী ১০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনে চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ করা হবে। এবি পার্টির ২,৭০০ কাউন্সিলর চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন। বিতর্কে প্রার্থীরা কাউন্সিলরদের সামনে নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, অতীত অবদান এবং প্রার্থিতার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।

কেন সভাপতি হতে চান- প্রশ্নে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, এবি পার্টি চার বছরে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। দল গঠনের জন্য সুপরিচিত অনেকের কাছে গিয়েছি। যারা বলতেন ‘নতুন রাজনীতি দরকার’। কিন্তু কেউ যোগ দেননি। সরকারের বাধা, গোয়েন্দা সংস্থার হুমকি, সামাজিক মাধ্যমে বুলিং ছিল। অনেকে যোগ দিয়েও হাত ছেড়ে দেন। সামনে আরও চ্যালেঞ্জ আসবে। সে কারণেই দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনুরোধে প্রার্থী হয়েছি। একই প্রশ্নের জবাবে এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই দলের আহ্বায়ক পদ ছেড়েছিলেন, যাতে নির্বাচন প্রভাবিত না হয়। এবি পার্টি একক ব্যক্তির দল নয়। দেখতে চেয়েছি, পদত্যাগ করলে এবি পার্টি কেমন চলে। পদত্যাগের পর দেখলাম ভালোই চলছে কোনো সমস্যা নেই।

একই প্রশ্নে কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম বলেন, রাজনীতিতে আমি নতুন হলেও, ফ্যাসিস্ট শাসনামলে ১০ বছর জেল খেটেছি। রাজনীতিতে নতুন হলেও, পেশাগত অভিজ্ঞতায় অপর দুই প্রার্থীর চেয়ে আমি অভিজ্ঞ।

নেতাকর্মীরা কেন ভোট দেবে- প্রশ্নে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের কারণে তারা আমাকে ভোট দেবেন বলে আশা করছি। একই প্রশ্নে এএফ সোলায়মান চৌধুরী বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ আমিও করেছি। আড়াই শতাধিক উপজেলায় কমিটি করেছি আমরা। নেতৃত্বের সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক তৈরি করেছি। আগামী তিন বছরে বাংলাদেশের বৃহৎ দল হবে এবি পার্টি।

শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলন এবং দলে কী অবদান ছিল- প্রশ্নে কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম বলেন, দিনের পর দিন মাঠে ছিলাম। গুলির মুখে পড়েছি। আমার বাড়িতে পুলিশের অভিযান চলে। সেখান থেকেই মজিবুর রহমান মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১ আগস্ট আমার নেতৃত্বে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের মিছিল হয়।

একই প্রশ্নে সালায়মান চৌধুরী বলেছেন, আজকের বিতর্কই তো প্রমাণ করে একটি গণতান্ত্রিক দল গঠন করতে পেরেছি। অনেক অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছি সরকার এবং সরকারি বাহিনী দ্বারা। মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনকে এবি পার্টিই প্রথম ‘ফাইভ পার্সেন্ট সরকার’ আখ্যা দেয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মাদ্রাসা ছাত্র শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার প্রথম আহ্বান এবি পার্টিরই ছিল। ১৬ জুলাই অপর দুটি দলের সঙ্গে এবি পার্টিই প্রথম আবু সাঈদকে হত্যার প্রতিবাদে রাজপথে নামে।

অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণে এবি পার্টিকে কোথায় নিতে চান- প্রশ্নে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, দল গঠনের পর চার বছরের দুই বছর গেছে করোনায়। পরের দুই বছর আন্দোলন-সংগ্রামে পার হয়েছে। আগামী ১২ বছরে এবি পার্টিকে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে দেখতে চাই। হয় সরকারে নয়তো প্রধান বিরোধী দল হিসেবে দেখতে চাই। একই প্রশ্নে দিদারুল আলম বলেন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে প্রত্যেক উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যন্ত পৌঁছাতে মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে চাই। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের প্রার্থী বাছাই করতে চাই।

নির্বাচিত হলে আগামী নির্বাচনে কারো সঙ্গে জোট করবেন কি না- প্রশ্নে এএফ সোলায়মান চৌধুরী বলেছেন, এবি পার্টিই দেশের প্রথম রাজনৈতিক দল যা অন্য সব দলের সঙ্গে যোগাযোগের সেতুবন্ধ তৈরি করেছে। জোটনির্ভর করবে, এবি পার্টির নিজস্ব শক্তির ওপর। জোট হলে ছোট দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নেতাকর্মীরা বড় দলে চলে যায়।

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, উল্টোও হতে পারে। বড় দলের নেতাকর্মীরা আমাদের দলে চলে আসতে পারে, কৌশল ঠিক থাকলে।

নির্বাচিত হলে দলের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে, বিশেষত ভারতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে- প্রশ্নে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, অন্ধ বিরোধিতা নয়, সীমান্ত হত্যা, পানি বণ্টনসহ যেসব অমীমাংসিত ইস্যু রয়েছে সেগুলোতে বিশ্বের অন্যান্য পরাশক্তিকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করবে এবি পার্টি। এবি পার্টি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব নীতিতে বিশ্বাসী নয়। যারা বৈরী হবে, তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলবে।

একাত্তর না চব্বিশ কোনটি গুরুত্বপূর্ণ- প্রশ্নে সোলায়মান চৌধুরী বলেছেন, দুটোই মহাগুরুত্বপূর্ণ। একাত্তর না হলে চব্বিশ হতো না।

নির্বাচিত হলে এবি পার্টিকে কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক দল হিসেবে গড়ে তুলবেন- প্রশ্নে দিদারুল আলম বলেছেন, দলের সব পর্যায়ে শুধু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নয় সব নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে। সব স্তরে নারী নেতৃত্ব থাকবে।

সোলায়মান চৌধুরী বলেছেন, উপযুক্ত ব্যক্তি পাওয়া গেলে এবারই দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী পদায়ন বাড়ানো হবে।

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রার্থী পাওয়ার আশা করছি।

দলীয় নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট কি না- প্রশ্নে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, নির্বাচন কমিশনারের সদস্যরা দলীয় না হওয়ায় যোগাযোগে কিছু ঘাটতি ছিল। দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন বাংলাদেশে নতুন। সেই তুলনায় খুব ভালো করছে।

সোলায়মান চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচন কমিশন খুব ভালো কাজ করছে।

দিদারুল আলম বলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে পুরো নম্বর দিতে চাই। বয়স কম হওয়ায় মজিবুর রহমান মঞ্জু অনভিজ্ঞতা নম্বর কম দিচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে।

নির্বাচনের ফল যাই হোক মেনে নেবেন কি না- এ প্রশ্নে তিন প্রার্থীই বলেন, যে-ই বিজয়ী হোন না কেন পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে। যিনি জয়ী হবেন, তিনি দলের চেয়ারম্যান হবেন মাত্র। কিন্তু দল সবার। কারো জয়-পরাজয়ে দলের ক্ষতি হবে না, দল শক্তিশালী হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জলাশয় ও কৃষিজমি ভরাট বন্ধে রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান

ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার প্রস্তাব ছাত্র ফেডারেশনের

তামিমেরর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় বিসিবি

সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিতে আসে বিএসএফ, বিজিবির অ্যাকশন

যুবদল নেতার মাসিক চাঁদার টার্গেট ৫০ লাখ টাকা

সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, জানেন না বাদী

কুয়েত সফরে জামায়াতে ইসলামের আমির ডা. শফিকুর রহমান

পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ : জড়িতদের অপসারণ ও শাস্তি দাবি

লন্ডন ক্লিনিকে খালেদা জিয়া

গাড়ি চালিয়ে মাকে নিয়ে গেলেন তারেক রহমান

১০

গ্রিনল্যান্ড-পানামা খালের দখল নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য ট্রাম্পের

১১

কৃষিবিদ মাইদুল হাসান পিন্টুর অকাল প্রয়াণ 

১২

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিচারের মুখোমুখি করার হুঁশিয়ারি

১৩

হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ানো জনগণ ভালোভাবে নেয়নি : রিজভী

১৪

নওগাঁর ৫০ পয়সার ফুলকপি ঢাকায় ৩০ টাকা

১৫

খালেদা জিয়াকে দেখে আবেগাপ্লুত ডা. জুবাইদা রহমান

১৬

মেয়াদোত্তীর্ণ সরিষার তেল জব্দ, ব্যবসায়ীকে জরিমানা

১৭

নতুন ভবন নির্মাণসহ ৩ দাবি ঢাবির এসএম হল শিক্ষার্থীদের 

১৮

জিনের মাধ্যমে গর্ভধারণের আশ্বাস, ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ

১৯

আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ব্রাজিল থেকে আমদানি হয়নি গরুর মাংস : রাষ্ট্রদূত

২০
X