জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেছেন, আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাই। এই দাবির স্বপক্ষে জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে আমরা গণজমায়েত, লিফলেট বিতরণ, সুধী সমাবেশ, মতবিনিময়, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন ইত্যাদি কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। অচিরেই আপনাদের আমাদের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির স্থান এবং তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ্।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) আমি-ডামি নির্বাচনের এক বছর এবং দ্রুততম সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয় এমন মন্তব্য করা থেকে সরকারের ভেতর এবং বাইরের সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বিরত থাকবেন। নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল হিসেবে এনডিএম বিভিন্ন সংসদীয় আসনে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করছে এবং অচিরেই পুরো বাংলাদেশ একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে গণজোয়ার দেখবে ইনশাআল্লাহ্।
লিখিত বক্তব্যে ববি হাজ্জাজ বলেন, ঘটনাবহুল ২০২৪ সালকে পেছনে ফেলে আমরা এক নতুন সম্ভাবনার দিকে যাত্রা শুরু করেছি। ২০২৫ সাল আমাদের জন্য নিয়ে আসুক অনাবিল শান্তি, সমৃদ্ধি এবং ঐক্য। অনেক আশা এবং কিছুটা ধোঁয়াশা নিয়ে শুরু হওয়া এই বছরেই বাংলাদেশ তার গণতান্ত্রিক রূপ ফিরে পাবে প্রত্যাশা এটাই। একইসঙ্গে আমরা আশাবাদী, এইবছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার গণহত্যার দোসরদের বিচার হবে এবং বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতির কবর রচিত হবে।
তিনি বলেন, বিগত স্বৈরাচার হাসিনা সরকার ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি এক অভিনব প্রতারণার নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে পুরো জাতির সঙ্গে তামাশা করেছিল। গত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণ হাসিনাকে উৎখাত করে এ প্রতারণার সমুচিত জবাব দিয়েছিল। এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নিশিরাতের নির্বাচন এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন ছিল খুনি হাসিনা কর্তৃক ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জঘন্য নাটক। পরপর ৩টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রহসনের যাত্রাপালায় পরিণত করে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটাধিকারকে জাদুঘরে পাঠিয়েছিল। এখন সময় এসেছে গণতন্ত্রের ট্রেনকে আবার রেললাইনে উঠানোর। নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে জনগণ আজ মুখিয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, ভূতাপেক্ষভাবে জুলাই ঘোষণাপত্র কার্যকর করা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জুলাই ঘোষণাপত্র ঠিক করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এ বিষয়ে সংলাপে বসব। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা আমরা সব রাজনৈতিক দল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূলমন্ত্রের সঙ্গে একমত, তবে এটা কোনো একক গোষ্ঠীর এক মাসের আন্দোলন ছিল না। ববি হাজ্জাজ বলেন, আন্দোলনে সক্রিয় থাকা, ত্যাগ স্বীকার করা এবং রক্ত ঝরানো রাজনৈতিক দলগুলোকে যদি কেউ প্রতিপক্ষ মনে করে তাহলে জনগণের কাছে তারা অর্বাচীন হিসেবেই পরিচিত হবে। ১/১১ সরকারের সময়েও যেমন ‘কিংস পার্টি’ গঠনের উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছিল, বর্তমান সময়েও এমন কোনো কিছু ভালো ফল বয়ে আনবে না। তবে আমরা চাই, রাজনীতিতে তারুণ্যের উদ্যোগে নাগরিক ক্ষমতায়ন আন্দোলন, রাজনৈতিক দল, গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গড়ে উঠুক যাতে বাংলাদেশে কোনো কর্তৃত্ববাদী শাসন আর ফিরে না আসে। তারুণ্যের সব গঠনমূলক উদ্যোগকে আমাদের দল এনডিএম স্বাগত জানায়। তবে কাউকে অসম্মান করা বা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্রকে আমরা মেনে নিব না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী, আপোষহীন অবিসংবাদিত নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আজ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাত্রা করছেন। আমরা তার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি রেখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা যে নোংরা খেলায় মেতে উঠেছিল তার খেসারত আওয়ামী লীগকে নিজের অস্তিত্ব বিসর্জন দেওয়ার মাধ্যমেই দিতে হবে। আমরা আশা রাখছি, বেগম জিয়া সুস্থ হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফিরবেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচনের পথে চূড়ান্ত যাত্রা শুরু করবে।
এ ছাড়াও তিনি বলেন, সংস্কারে গঠিত কমিশনগুলো তাদের সুপারিশমালা প্রকাশ করা শুরু করেছে। আমরা আবারও বলছি, সংস্কার কোনো নতুন ইমারত নির্মাণের মতো শিল্পকর্ম নয় যে নকশা অনুযায়ী তৈরি করলেই কাজ শেষ। এটা একটা চলমান বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া যেখানে জনমত, সময়ের চাহিদা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সামাজিক বাস্তবতা, ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ, বাস্তবায়ন সক্ষমতা, আইনি প্রক্রিয়া ইত্যাদি বিষয় জড়িত থাকে। সংস্কারের দোহাই দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়কে প্রলম্বিত করলে জনমনে সন্দেহের উদ্রেক হবে। জনগণ কতটা সংস্কার চায় সেটা জানার একমাত্র উপায় হলো নির্বাচন। জনরায় ব্যতীত কয়েকজন ব্যক্তি মিলে প্রকৃত সংস্কারের স্বরূপ ঠিক করা সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন