রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সন্দেহ বা বিভাজন সৃষ্টি হলে জুলাই অভ্যুত্থান বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জোনায়েদ সাকি।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে এক গণসংলাপ অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী এ মন্তব্য করেছেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাই, অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা-চৈতন্য তাকে ধারণ করার জন্য আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন এবং আগামী পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এই আকাঙ্ক্ষা যাতে বাস্তবায়িত হয় তার জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখুন।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা আহ্বান জানাই, আপনাদের কাজ এই সমস্ত প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, তাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করা। এমন কোনো ধারণা যাতে তৈরি না হয়, এমন কোনো অবস্থা যাতে তৈরি না হয় যাতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হলে, বিভাজন সৃষ্টি হলে আমাদের এ অভ্যুত্থান বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।
সাকি বলেন, রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা, আস্থা ধরে রাখা সেটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিরাজনীতিকরণ, কাউকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া- এ ধরনের একটি ইতিহাস বাংলাদেশে আছে। বাংলাদেশের জনগণ অভ্যুত্থান করে এসব ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতির কবর রচনা করেছে। কাজেই এ দেশে আর কোনো ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতি বাস্তবায়ন হতে দেওয়া যাবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারকে সব শক্তির মধ্যে এ জায়গা নিশ্চিত করতে হবে, এ আস্থা তৈরি করতে হবে যে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে এবং সেটা সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাবে, সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে ন্যূনতম জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে বাংলাদেশে আগামীর রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা হবে। সে জায়গা আমরা সবাই মিলে করতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা গণসংহতি আন্দোলন, আমাদের মঞ্চ গণতন্ত্র মঞ্চ। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সব রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে ন্যূনতম ঐক্য তৈরি করতে চাই। যাতে করে এই রাজনৈতিক রূপান্তর জনগনের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারে।
একই সঙ্গে আমরা জনগণের কাছে আহ্বান জানাই, নতুন করে গণতান্ত্রিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে। নতুন গণতান্ত্রিক শক্তি যদি গড়ে না ওঠে এই নতুন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, একে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া- আমরা হয়তো সফল নাও হতে পারি। এ জায়গায় আপনাদের প্রতি আহ্বান- বাংলাদেশের সর্বত্র গণতান্ত্রিক শক্তি গড়ে তুলুন।
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের ঢাকা মহানগন উত্তর-দক্ষিণ শাখার যৌথ উদ্যোগে এই গণসংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে সাকি বলেন, আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন। একটা ভঙ্গুর রাষ্ট্র কাজ করছে, তাকে পুনর্গঠন করার দায়িত্ব আপনাদের পালন করতে হচ্ছে। আপনাদের সংকট, নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা আমরা বুঝি। আমরা আপনাদের সমর্থন করি, আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে চাই।
কিন্তু দিনের পর দিন একই সমস্যা বহাল থাকলে জনগণ কিন্তু সেটা আর গ্রহণ করবে না। কাজেই আজকে জুলাই বিপ্লবের আহতরা যদি রাস্তায় নেমে চিকিৎসার দাবি করে সেটা আপনাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার হওয়া উচিত, বিব্রতকর হওয়া উচিত। আমরা অভ্যুত্থানে আহত সব যোদ্ধার অবিলম্বে চিকিৎসা নিশ্চিত করা, তাদের জীবনের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে এই রাষ্ট্রের যতটা সক্ষমতা আছে সবটা নিয়োগের আহ্বান জানাই। শহীদ পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে হবে। এগুলোতে আপনাদের দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।
মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আলিফ দেওয়ান ও উত্তরের আহ্বায়ক মনিরুল হুদা বাবনের সভাপতিত্বে গণসংলাপে গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা এবং জুলাই বিপ্লবের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার তরুণ নেতারা বক্তব্য দেন।
মন্তব্য করুন