জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সবক শুনতে রাজি নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে থানা বিএনপির উদ্যোগে কর্মিসভা ও সদস্য ফরম বিতরণ অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ’৭৫-এর ৭ নভেম্বরের পরাজিত শক্তি মিলে যারা জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবেন, তাদের রুখে দেওয়ার ক্ষমতা এ দেশের জনগণ রাখে। সেই নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য নেতৃত্বও আছে।
রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজন আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরাও সংস্কার চাই। এ জন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। কিন্তু এই যে তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি) যেটা (জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র) দিতে চায়, সেটা আমাদের না দিলেও আমরা তা কোনো না কোনোভাবে পেয়েছি। সেখানে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এদের ঘাড়ে চাপছে ’৭১-এ যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে তারা। আকারে-ইঙ্গিতে তারা বলতে চায়, ৫ আগস্ট (২০২৪ সাল) দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাহলে ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গরু-ছাগল রক্ত দিয়েছে, নাকি মানুষ রক্ত দিয়েছে? ’৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, তাদের সবক শুনতে জাতি রাজি না। আমরা অনেককেই ক্ষমা করতে পারি, ভুলে যেতে পারি। ক্ষমা মহত্ত্বের লক্ষণ। কিন্তু ক্ষমা করার পর একই কাজ যদি আবার করেন, তাহলে ভুলে গেলে চলবে না।
কোটা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির ভূমিকা তুলে ধরে দলের এই নীতিনির্ধারক বলেন, ছাত্রদের কোটাবিরোধী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৮ দফার মধ্যে সরকার পতনের দাবি ছিল না। তারা যখন এই আন্দোলনে নামছে, আমরা পরদিন তাতে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছি, আমি একজন সাক্ষী। ছাত্ররা আন্দোলনে নামার পরপরই আমি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে মোবাইলে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠালাম। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তিনি আমার মোবাইল ফোনে কল করলেন। বললেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে সবাইকে ডেকে বসি। বিকাল ৪টার দিকের কথা, ৬টায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকলেন তিনি। সেই বৈঠক থেকে ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানানো হলো এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সক্রিয় হয়ে উঠলেন। টেলিফোনে তিনি সবার সাথে যোগাযোগ শুরু করলেন। আমাকে বললেন, শুধু নৈতিক সমর্থন যথেষ্ট না, সবাইকে সক্রিয় করতে হবে। আমি বললাম অবশ্যই সক্রিয় করতে হবে। তবে দলীয় ব্যানার ছাড়া আমরা সবাই এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করব। আমাদের ছাত্র-যুবক, নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে পড়ল। হাসিনা কিন্তু বারবার বলেছে, এটা বিএনপির ষড়যন্ত্র।
গয়েশ্বর রায় বলেন, এরপর আমরা সর্বাত্মক সমর্থন জানালাম। আমরা বিএনপির পোশাক ছেড়ে হয়ে গেলাম ছাত্র-জনতা। এই আন্দোলনে শুধু ছাত্রের বাবাই নামেনি, দেশের সব মানুষ নেমেছিল। এদের কে নামিয়েছিল, এই বিএনপিই নামিয়েছিল।
তিনি বলেন, আমরা ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই, এখনো অভিনন্দন জানাই। তবে ১৫ দিনের পুঁজি দিয়ে রাস্তায় বেশি দিন হাঁটা যায় না। ১৬ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করছি। প্রত্যেকটা রক্তের মূল্য আছে- যে সর্বশেষ রক্ত দিয়েছে তারও আছে, যে সবার আগে দিয়েছে তারও আছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা শাখার সভাপতি নিপুণ রায় চৌধুরী।
মন্তব্য করুন