শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সম্পাদিত সকল চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতে যে ম্যাজিক দেখাতে চেয়েছিল, ম্যাজিক করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের পকেট কেটে নিয়ে গেছে… এখানে আাপনারা প্রত্যেকে বিদ্যুতে বিল পরিশোধ করেন... সবাই ভুক্তভোগী। আসলে তারা এটা (বিদ্যুৎ) একটা ব্যবসার খাত বানিয়েছিল… তারা বুঝতে পেরেছিল যে, এই খাত থেকে কুইক মানি বানানো যায় কোনো হিসেব না দিয়ে। কারণ বিদ্যুৎ তো ‘হাওয়া’ এটি দেখা যায় না।
ইকবাল হাসান বলেন, এই ক্যাপাসিটি চার্জে কোন মেসিনে কত ক্যাপাসিটি? কে এটাকে আইডেন্টিফাই করেছে এবং সেই মেসিনগুলো এফিসিয়েন্সি কি… এগুলো কেউ বিশ্লেষণ করেও না, দেখেও না। এই ক্যাপাসিটির নামে তারা ১৫ বছরে অনেক টাকা নিয়ে গেছে… প্রায় এক লাখ কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে। বিদ্যুৎখাতের প্রত্যেকটা চুক্তি… তারা তো কোনো পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল মানে নাই… তারা আইন করে নিয়মনীতি বন্ধ করে দিয়ে ইচ্ছামতো ক্লোজ টেন্ডারে এসব চুক্তি করেছে। জনগণের অধিকার আছে এসব বিষয় জানার।
তিনি বলেন, উই মাস্ট সি দ্যা কন্ট্রাক্ট। তারা কীভাবে কন্ট্রাক্টগুলো করেছে এটা পাবলিক হওয়া উচিত… অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হলো জনগণের কাছে এই কন্ট্রাক্টগুলো উন্মুত্ত করে দেওয়া… প্রত্যেকটা চুক্তি সুড বি পাবলিক, জনসমক্ষে প্রকাশ করা।
দুর্নীতির পরিসংখ্যান চিত্র তুলে ধরে টুকু বলেন, বিদ্যুৎখাতে ১৫ বছরে মোট খরচ হলো ২ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার বর্তমান বিনিময় হারে তাহলো ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জে লুটপাট হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে হয়েছে ১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থ বছরে হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছে ৮ হাজার ৯শ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ এ হয়েছে ১৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। তার অর্থ হলো এই যে, প্রাইভেট সেক্টরে পাওয়া প্ল্যান্টগুলো দিয়েছে সেগুলো চলে নাই এবং এই টাকাগুলো তাদেরকে (কোম্পানি) প্রেমেন্ট করেছে… এভাবে দেশের মানুষের কাছ থেকে জাস্ট লুট করে দিয়ে গেছে আরকি।
সাবেক বিদ্যু প্রতিমন্ত্রীর দাবি করে বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগের মেসিনগুলো খারাপ। খারাপ মেসিন এসে টাকা কামাই করে চলে গেছে। আর এই লুটপাটের অংশ কারা কারা ছিল? ক্যাপাসিটি চার্জের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির কথা আমি বলছি। এরা হলো, সামিট নিয়েছে ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, অ্যাগ্রো ইন্টারন্যাশনাল নিয়েছে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, আল্ট্রা পাওয়ার হোল্ডিংস নিয়েছে ৭ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ নিয়েছে ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, আরপিসিএল নিয়েছে ৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট আসে সাধারণত আপদকালীন বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের জন্য। এই প্ল্যান্ট দুই বছরের সেটা ১৫ বছর পর্যন্ত চালাচ্ছে এবং এসব কুইক রেন্টালে ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে উইথ আউট রিটার্ন। বুঝেন কী অবস্থা। ভারত থেকে বিদ্যু আমদানির নামে ৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা। সব কিছু রিভিউ করা হবে।
মন্তব্য করুন