শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছে, তার কন্যা হাসিনা গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, অন্যায়, জুলুম, শোষণ থেকে মুক্তির জন্য ছাত্র-জনতা দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে রমনা থানা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির বলেন, ছাত্ররা চেয়েছে অধিকার, তাদের স্বৈরাচার হাসিনা বানিয়েছে রাজাকার। ১৯৭১ সালের চাওয়া-পাওয়া, মানুষের অধিকার গত ৫৪ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। যাকে বলা হয়েছে স্বাধীনতার নায়ক, সেই শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করে এ দেশে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করেছে। নিজ দলীয় ৩টি গণমাধ্যম ব্যতীত সব গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। যে ব্যক্তি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে, গণমাধ্যম বন্ধ করে, গণতন্ত্র হত্যা করে সে ব্যক্তি কখনো স্বাধীনতার নায়ক হতে পারে না।
আওয়ামী লীগ এ দেশে যত আগুন দেবে, ততই তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে নিঃশেষ হবে উল্লেখ করে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, জীবন দেব, বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও কাউকে দখল করতে দেওয়া হবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে তার কার্যালয়ে গিয়ে সব রাজনৈতিক দলের নেতারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জাতীয় স্বার্থে আমরা এক ও অভিন্ন থাকব।
তিনি আরও বলেন, সংসদে কোরআনের আলো জ্বালাতে পারলেই, ঘরে-ঘরে কোরআনের আলো জ্বলবে। নয়তো শেখ হাসিনার মতোই ইসলামবিদ্বেষীরা মানুষের ঘর থেকে কোরআন-হাদিস জব্দ করে, জিহাদি বই, জঙ্গি বই উদ্ধার করা হয়েছে বলে মানুষকে হামলা-মামলা দিয়ে জুলুম-নির্যাতন চালাবে। শান্তি ও বৈষম্যমুক্ত ইসলামি সমাজ গড়তে তিনি দেশবাসীকে ইসলামের পক্ষে ভোট দিতে আহ্বান জানান।
রমনা থানা আমির মো. আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য ও পল্টন থানা আমির মো. শাহিন আহমেদ খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য ও শাহজাহানপুর পূর্ব থানা আমির মাওলানা শরিফুল ইসলাম, রমনা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের সহকারী অফিস সম্পাদক ও রমনা থানার সাবেক আমির আবদুস সাত্তার সুমন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনা ভারতীয় বিজেপি সরকারকে দিয়ে সে দেশের মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বাংলাদেশের বিজয় দিবসকে ভারতের বিজয় দিবস বলে মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করেছে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করায় মোদিকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো ঘুমিয়ে আছে। যার ফলে ফ্যাসিবাদের দোসররা সচিবালয়ে আগুন দিয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রতি কোনো দয়া প্রদর্শন না করে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করতে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আওয়ামী দোসরদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
সম্মেলনের অন্যতম বিশেষ অতিথি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে ৪ দফা কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে। মানুষের তৈরি মতবাদে যতই সংস্কার করা হোক না কেন সমাজে স্থায়ী শান্তি আসবে না। জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর বিধানে সমাজ সংস্কার ও সমাজ গঠনে কাজ করছে। আল্লাহর বিধান কায়েমের মাধ্যমে বাংলাদেশে চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ড. মাসুদ।
এ ছাড়া তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার মাধ্যমে আমাদের বাঘের পিঠ থেকে মুক্ত করে সিংহের মুখে আবদ্ধ করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে আমাদের স্লোগান ছিল, ‘দিল্লি না ঢাকা...ঢাকা ঢাকা’। ২০২৪ সালের আগস্টে এ দেশের ছাত্র-জনতা সিংহের মুখ থেকে মুক্ত হয়ে সত্যিকার অর্থের স্বাধীনতা লাভ করেছে। এই স্বাধীনতা ভোগ করতে আগামী নির্বাচনে ইসলামের পক্ষে ভোট দিতে হবে। ইসলাম ব্যতীত কোথাও পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করা যায় না।
ড. মাসুদ বলেন, আওয়ামী লীগ আগুন সন্ত্রাসের মূল হোতা। তারা গত ১৫ বছর এ দেশে বাসে-ট্রেনে, মানুষের ঘরবাড়িতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়ে জামায়াত-শিবিরসহ বিরোধী দলের দায় চাপিয়ে দিত। কিন্তু আজও পর্যন্ত এ দেশের কেউ প্রমাণ করতে পারেনি জামায়াত-শিবির আগুন সন্ত্রাস করে। সচিবালয়ে আগুন লাগিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেদের অপকর্মের তথ্য পুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও এ দেশের ১৮ কোটি মানুষ সাক্ষী আছে। তাদের সাক্ষীতে আওয়ামী লীগের বিচার হবেই হবে।
সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন জুলাই বিপ্লবে শহীদ ফারহান ফাইয়াজের পিতা শহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রমনা থানা নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট সুলতান উদ্দিন, রমনা থানা শিবির সভাপতি নেয়ামত হোসেন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কলেজ জোনের সভাপতি শোয়াইব, রমনা থানা কর্মপরিষদের সদস্য আবু মুসা, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান ও অধ্যক্ষ মো. একরাম উল্লাহ, মগবাজার ওয়ার্ড সভাপতি আহমদ আলী সরকার, সিদ্ধেশ্বরী ওয়ার্ড সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার কামরুল ইসলাম, ১৯নং ওয়ার্ড সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, কাকরাইল ওয়ার্ড সভাপতি মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, মালিবাগ পশ্চিম ওয়ার্ড সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোবাশ্বের হোসেন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন