ভারত বন্ধুর বেশে বাংলাদেশে এসে ৫৩ বছর ডাকাতি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে যশোর শহরের একটি হোটেলে আয়োজিত সুধী সমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সুধী সমাবেশের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামীর যশোর জেলা শাখা। এতে বিগত সরকারের সময় নির্যাতিত ও নিহতদের পরিবারের স্ত্রী-সন্তানরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ভারত আসল বন্ধুর বেশে, শুরু করে দিল ডাকাতি। এ কেমন বন্ধুত্ব! ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণে সব অস্ত্রই তারা নিয়ে গেছে। ৫৩ বছর ধরে আমাদের প্রাণের বন্ধু সেই গুলির একটি খোসাও ফেরত দেয়নি। এ কী ধরনের বন্ধুত্ব!’
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস নিয়ে মোদির টুইট বাংলাদেশকে ছোট করেছে দাবি করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিজয় দিবস নিয়ে ছয় লাইনের একটি টুইট করেছেন, সেখানে একটি লাইনেও বাংলাদেশের নাম নেই। এটা নাকি ভারতের বিজয় দিবস!’
বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে এত দিন চিৎকার করেছেন, তারা মোদির এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি, প্রতিবাদ জানাননি। জামায়াতে ইসলামী তার জায়গা থেকে প্রতিবাদ করেছে। আপনারা কেন চুপ ছিলেন?’
আগামীর বাংলাদেশ এই তরুণদের হাতে তুলে দেবেন উল্লেখ করে আমির বলেন, ‘আমরা পিণ্ডির হাত থেকে মুক্তি পেলেও দিল্লির কাছে জিম্মি হয়েছিলাম। যদি এই দেশ স্বাধীন দেশ হয়, তাহলে আগামীতে তার মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকবে। সন্তানদের রক্তের বিনিময়ে নতুন করে স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করব। তারা বলছেন, সামাজিক বৈষম্য দূর করতে চান, স্বাধীনভাবে সম্মান নিয়ে বাঁচতে চান। তাদের সবার স্লোগানের সঙ্গে আমরা একমত। আগামীর বাংলাদেশ এই তরুণদের হাতে তুলে দেব। তাদের রক্ত নষ্ট হয়নি, তাদের হাতেই দেশটা নিরাপদ। সেই দেশ বিশ্বের দরবারে নজির স্থাপন করবে।’
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শাসনের নামে শোষণ করতে গিয়ে দেশে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে। তারা শুধু শারীরিকভাবে আঘাত দেয়নি, মানুষের মান-ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করেছে। তারা মানুষের রিজিক নিয়ে টানাটানি করেছে। আওয়ামী লীগ ভারতের কাছে এই দেশটা ইজারা দিয়েছিল। দেশ স্বাধীনের পর আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে সুরক্ষা দিতে পারিনি। সে কারণেই তার মূল্য আমাদের পরিশোধ করতে হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে মন্তব্য করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে। সব গুন্ডাপান্ডা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একেবারে শেষ করে দিয়েছে। আমাদের সন্তানরা লেখাপড়া করবে, নৈতিক শিক্ষায় উৎকর্ষ সাধন করবে। ফলে শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে যাওয়ার শেষেই তাদের কাজ হাতে চলে আসবে। তাদের কারও করুণার পাত্র হয়ে থাকতে হবে না।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, এখন সার্টিফিকেটের নামে যে কাগজগুলো ধরিয়ে দেওয়া হয়, অনেকেই সেই কাগজগুলোয় আগুন ধরিয়ে দেয়। আমরা আগামীর বাংলাদেশে কাগজের সার্টিফিকেট দেব না; কোয়ালিটির সার্টিফিকেট তুলে দিতে চাই। আমরাই সেই শিক্ষাব্যবস্থা তুলে দেব আগামী প্রজন্মের হাতে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসূলের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জামায়াতের যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসেন, সহকারী পরিচালক আজিজুর রহমান, জেলা নায়েবে আমির হাবিবুর রহমান, যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আহসান হাবিব, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোর্ত্তজা ছোট, সাংবাদিক ও গবেষক বেনজিন খান, জেলা শুরা সদস্য অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক প্রমুখ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আবু জাফর সিদ্দিকী, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস, কর্মপরিষদ ও শুরা সদস্য নূর-ই-আলী নূর মামুন।
মন্তব্য করুন