জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও দেশকে সুখী, সমৃদ্ধ ও কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে আগস্ট বিপ্লবীদের জাতীয় বীরের মর্যাদায় অভিষিক্ত করে তাদের চিরদিন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর তেজগাঁও খেলাঘর মাঠে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ কথা বলা হয়েছে।
সেলিম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ছাত্র-জনতার যুগপৎ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার মুক্ত হলেও দেশ এবং জাতির জন্য আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এখনো শেষ হয়নি। বরং আমাদের যাত্রা সবে শুরু হয়েছে। আমাদের এখন প্রথম কাজ হলো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বোধ-বিশ্বাস, তাহজীব- তামুদ্দন, ঈমান-আকিদার ভিত্তিতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের পরিবারগুলোকে যথাযথ মূল্যায়ন এবং সম্মানিত করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অন্তর্বর্তী সরকার আগস্ট বিপ্লবীদের তালিকা এখনো প্রকাশ করতে পারেনি। আমরা (জামায়াত) ইতোমধ্যেই পাঁচ খণ্ডে শহীদদের তালিকা ও তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য প্রকাশ করেছি। কিন্তু সরকার তা করতে পারেনি।
তিনি আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই আগস্ট বিপ্লবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় ব্যর্থতার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আগস্ট বিপ্লবীরা জাতীয় বীর ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা দেশ ও জাতির জন্য জীবন দিয়েছেন। অনেকেই হাত-পা, চোখ-কানসহ নানাভাবে বিকলাঙ্গ হয়েছেন। কেউ কেউ গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। তাই তাদের চিকিৎসার জন্য দেশে বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে শুধু আগস্ট বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
পাশাপাশি তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন হলে এবং চাইলে জনগণ অর্থ দিয়ে সরকারকে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে আমরাও পিছিয়ে থাকব না। আর আগামী দিনে যারা ক্ষমতায় যেতে চান তাদেরই এই বলে জনগণের কাছে অঙ্গীকার করতে হবে, তারা কুরআন-সুন্নাহর আদর্শের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করবেন। অন্যথায় তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন অপূরণীয়ই থেকে যাবে। মহানগরী আমির বলেন, আওয়ামী-বাকশালী শাসনের প্রায় ১৬ বছর দেশকে গুম-খুনের অভয়ারণ্যে পরিণত করা হয়েছিল। তাই খুনিদের সম্পর্কে দেশের মানুষকে সম্যক ধারণা দিতে হবে। আগস্ট বিপ্লবের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি গণমাধ্যমকে উদ্দেশ করে বলেন, আওয়ামী লীগের দুর্নীতি, গুম, খুন, অর্থ পাচারসহ নানা অপকর্ম সম্পর্কে একশ্রেণির মিডিয়া রহস্যজনকভাবে নীরব। তিনি জনগণকে সত্য জানানোর জন্য গণমাধ্যমগুলোকে আওয়ামী লীগের অপকর্মের প্রতিবেদন প্রকাশ করার আহ্বান জানান। অন্যথায় দেশ ও জাতির কাছে একদিন তাদের জবাবদিহি করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আব্দুর রহমান মূসা বলেন, জামায়াত তার লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ছাত্র-জনতার তাজা রক্তের মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তাদের প্রাণের বিনিময়েই আমরা উন্মুক্ত স্থানে সমবেত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। তাই জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মানিত করতে এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্য দেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমাদের নতুন করে শপথ গ্রহণ করতে হবে।
মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য ও থানা আমির ইঞ্জিনিয়ার নোমান আহমেদির সভাপতিত্বে এবং নায়েবে আমির এসএম মনির আহমেদ ও সেক্রেটারি ফরিদ আহমেদ রুবেলের যৌথ সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরী সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কর্মপরিষদ সদস্য হেমায়েত হোসেন, প্রচার-মিডিয়া সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার।
আরও বক্তব্য দেন- থানা কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ তৌফিকুল ইসলাম, আব্দুল হক, আলী আকবর হোসেন, শ্রমিক নেতা শফিকুল ইসলাম, তেজগাঁও কলেজ শিবির সভাপতি ইজাজ আহমেদ, তেজগাঁও থানা সভাপতি খায়রুল ইসলাম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন