সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিষয়ে হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই, এপ্রিসিয়েট করি। আদালত স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, নির্বাচিত পরবর্তী সংসদই সংবিধান সংশোধনীর একমাত্র উপযুক্ত ফোরাম।
আদালতে আপনারা যা চেয়েছিলেন তা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সংশোধনীর শুনানিতে আমরা যে বক্তব্যগুলো দিয়েছিলাম… আমাদের তরফ থেকে যেটা এপ্লাই করেছিলাম সেখানে আমরা প্রিয়ামবেলে কিছু রেখে এবং সেই সঙ্গে কিছু পরিবর্তন করে কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেটা পুরোপুরিভাবে আসেনি।
গত বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর গঠিত বেঞ্চ এই পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
আদালতের রায় ব্যাখ্যা করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার, বিচার বিভাগীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এই রায়ে। কিন্তু যে সমস্ত বিষয় আদালত অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করেছে সেই বিষয়গুলো আসলে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো বা ব্যাসিক স্টাকচার গণতন্ত্রকে ধবংস করে দেওয়া হয়েছে এবং ক্যারেক্টারটা পাল্টিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেজন্য সুপ্রিম কোর্ট সবসময় সংবিধানের ব্যাখ্যা প্রদানকারী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি আছে… সেই হিসেবে আদালত মনে করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেটা ইনট্রিডিউজ করা সেটা মৌলিক কাঠামো হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এটাকে (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) পূনর্বহালের কথা বলা হয়েছে এবং সেই সমস্ত জিনিসগুলো বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাকি যেটা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদ বহাল করা হয়েছে, গণভোট পূনর্বহাল, অনুচ্ছেদ ১৮(ক) পরিবেশ, জীব বৈচিত্র, অনুচ্ছেদ ২৩ (ক) উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতি সত্বা, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির সংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এসব অনুচ্ছেদ বহাল রাখা হয়েছে। সংবিধানের এক তৃতীয়াংশ এবং কিছু তপশিল যেগুলো আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে সংযুক্ত করেছে এগুলোকে ঘোষণা দিয়েছিল যে, এসব অপরিবর্তনীয় থাকবে… সংবিধান এমন কোনো দলিল না সেটা পরিবর্তন করা যাবে না… আদালত এসবকে অবৈধ ঘোষণা করে বিলুপ্ত করেছে…।
তিনি আরও বলেন, যে সমস্ত আইন সংসদে পাস হয় সেটাতে যদি কোনো অসাংবিধানিক বিষয় থাকে সেটা ইন্টারপেট করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের। বাকি জিনিসগুলো মাননীয় আদালত সংসদের ওপর এজন্য ছেড়ে দিয়েছেন যে, এখানে কিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আছে বলে হয়ত আদালত মনে করেছেন। সুতরাং রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত পরবর্তী সংসদের কর্ম যাবতীয় সংশোধনী বিবেচনা করা।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা মনে করি যে, ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে… জাতীয় ও স্থানীয় সমস্ত নির্বাচনই অবৈধ হয়েছে। সেই কারণে আমরা স্থানীয় সরকারগুলো ভেঙে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে… সবগুলো ভাঙা হয়েছে কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদটা করা হয়নি। আমরা সেটাও দাবি জানিয়েছি অবিলম্বে এটাকে বাতিল করা উচিত।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক যিনি সংবিধানকে অবৈধভাবে সংশোধন কার্য্ক্রমের সঙ্গে জড়িত তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি করবেন কি না প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সময় যখন আসবে…তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার, তখন নিশ্চয় নিয়ে আসা হবে।
মন্তব্য করুন