অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে ‘নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কারই’ প্রধানতম সংস্কার বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তার মতে, এ ক্ষেত্রে চার থেকে ছয় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। আর নির্বাচনমুখী সংস্কার কার্যক্রম শেষে নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য তিন থেকে চার মাসের বেশি যৌক্তিক সময় লাগার কথা নয় বলে অভিমত বিএনপির এই নীতি-নির্ধারকের।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে কড়াইল বস্তিতে দুস্থদের জন্য জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ) আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সালাহউদ্দিন আহমেদ এ সব কথা বলেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভারতে পালিয়ে যাওয়া সম্পর্কিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বিভিন্ন কারণে যেহেতু নিশ্ছিদ্র বর্ডার আমরা এখনো নিশ্চিত করতে পারিনি, সে কারণে ফ্যাসিবাদের দোসরদের সহযোগিতা নিয়ে বর্ডারের বিভিন্ন ছিদ্র দিয়ে হয়তো তিনি বর্ডার ক্রস করতে পেরেছেন, এটা আমাদের ধারণা। ৫ আগস্টের পর এভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে হয়তো ফ্যাসিবাদের অনেক দোসরই পালিয়ে গেছে। এখানে অনেকেরই ব্যর্থতা আছে এবং সেটা নির্ধারণ করার জন্য সম্ভবত একটা আদেশ হয়েছে। দেখা যাক, তাদের তদন্তে কী আসে। যারা ফ্যাসিবাদের দোসরদের পালাতে সহযোগিতা করেছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে-এটি দেশবাসীর চাওয়া।
বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, মোটাদাগে বলা যায়- ২০২৫ সালের শেষদিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়। এ সম্পর্কিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নেহাতই নির্বাচন সম্পর্কিত সময়ের একটা ধারণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এখানে প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনমুখী নির্ধারিত ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করা এবং তার জন্য দিন-তারিখসহ প্রয়োজনীয় সময় নির্ধারণ করাসহ একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ জনগণ প্রত্যাশা করেছিল। সেই প্রত্যাশা আমাদের পূরণ হয়নি। আর প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে তার প্রেস সচিব গতকাল (মঙ্গলবার) যে ঘোষণাটা দিয়েছেন, সেটা প্রধান উপদেষ্টার ভাষণেরই একটি অংশ ছিল। এটার সাথে সময়ের যৌক্তিকতা যায় না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো প্রাথমিকভাবে এবং প্রধানতম সংস্কার বলে মনে করি। এই সরকারের প্রধান ও প্রথম দায়িত্ব হলো- একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া। আর সে জন্য কিছু আইনি সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও মাঠের সংস্কার দরকার আছে। আমরা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এ ক্ষেত্রে সংস্কারে চার থেকে ছয় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান, গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে আমরা যেন কোনো কৌশল প্রয়োগ না করি। ভোটের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার সেরে ভোটের আয়োজন করতে হবে।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নীতি-নির্ধারক বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন- অন্তর্বর্তী সরকারের চাহিদা অনুযায়ী তারা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত আছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতি বছর জানুয়ারির ২ তারিখে অটোমেটিক ভোটার তালিকা আপডেট হয়, খসড়া প্রকাশিত হয় এবং সেই খসড়ার ওপরে বিভিন্ন রকমের ওজর-আপত্তি শুনানির পরে মার্চের ২ তারিখের মধ্যে এটা সম্পন্ন হয় এবং সেটির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। এটা হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়ার পরে যদি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা হয়, ডিলেমিটেশনসহ অন্যান্য আইনি সংশোধন করতে সময় বেশি লাগার কথা নয়। নির্বাচনী প্রস্তুতি বলতে আমরা প্রধানত এগুলিই বুঝি। সেই নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন হতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যেটি বলেছেন তাতে তিন থেকে চার মাসের বেশি যৌক্তিক সময় লাগার কথা নয়।
জেডআরএফের বিশেষায়িত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ধারাবাহিক মানবিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের চিকিৎসার জন্য সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। রোগীদের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বিনামূল্যে ওষুধও বিতরণ করা হয়। কড়াইল বস্তি ও আশপাশের এলাকা থেকে শত শত রোগী ওই ক্যাম্প থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে।
মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনের সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. পারভেজ রেজা কাকন, জেডআরএফ’র ডা. এএস হায়দার পারভেজ, অধ্যাপক ডা. হারুন-আল রশিদ, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমানউল্লাহ, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান, ডা. মো. মেহেদী হাসান, কৃষিবিদ শফিউল আলম দিদার, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, ডা. সাজিদ ইমতিয়াজ উদ্দিন, ডা. গালিব হাসান, ডা. রাকিবুল ইসলাম আকাশ প্রমুখ।
মেডিকেল ক্যাম্প সম্পন্নে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও সদস্যসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মন্তব্য করুন